‘সরকারের পক্ষ থেকে বেশি মূল্য নির্ধারণ করায় ২০০ চামড়া ক্রয় করেছি। প্রতি পিস চামড়া ২০০-৩০০ টাকা কিনতে হয়েছে। ঈদে সারাদিন ঘুরে ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করে, বিকেলে বাজারে তোলার পর প্রথম ৪-৫ ঘণ্টা কেউ জিজ্ঞাস করতে আসেনি। পরে রাতে আমার ছোট ভাই গড়ে ২৫০ টাকা করে লোকসানে সব চামড়া বিক্রি করে দিয়ে কোনো রকম রেহাই পেয়েছি।’
Advertisement
কথাগুলো বলছিলেন, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মৌসুমী পশু চামড়া ব্যবসায়ী কামরুল হোসেন।
তিনি বলেন, লাভের আশায় চামড়া কিনে উল্টো লোকসান গুনতে হয়েছে। জীবনে আর কোনোদিন এ ব্যবসা করবো না।
শুধু কামরুল নয়, এভাবে চামড়া কিনে লোকসানে পড়েছেন মিরসরাই উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন দুই পৌরসভার শত শত মৌসুমী ব্যবসায়ি।
Advertisement
মিরসরাই পৌরসভা এলাকার মোহাম্মদ ননাই বলেন, অর্ধশত চামড়া কিনেছি, পরে লোকসানে পানির দরে বিক্রি করেছি। চামড়া সংগ্রহ করা শ্রমিকের মজুরিও ওঠেনি।
এদিকে বিক্রি করতে না পেরে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার পাশে ফেলে যাওয়া চামড়া পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এতে মানুষের চলাফেরা করতে চরম অসুবিধা হচ্ছে।
করেরহাট এলাকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, সরকার চামড়া সিন্ডিকেট ভাঙতে পুরোপুরি ব্যর্থ। ঈদের আগে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা কার্যকর করতে পারেনি। মধ্যখানে কিছু মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের পুঁজি হারাতে হলো। অথচ চামড়াজাত পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। এত দামি জিনিসটা সরকার যথাযথ ব্যবহার করতে পারলো না।
তিনি আরও বলেন, করেরহাট বাজারে ক্রেতার অভাবে চামড়া ফেলে চলে যান ব্যবসায়ীরা। দুদিন ধরে তীব্র গন্ধে বাজারের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের দিন কম দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। সারা রাত অপেক্ষা করেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। ফলে পচন ধরে দুর্গন্ধ বের হওয়ায় তা ফেলেই চলে যান অনেকে।
এদিকে প্রশাসন থেকে অবিক্রিত চামড়ার জন্য বিনামূল্যে লবণ বিতরণের ঘোষণা থাকলেও সাধারণ মানুষ তা জানতেন না। অবিক্রিত চামড়ায় লবণ দিয়ে বিক্রির কথা বলা হয়ে থাকলেও ব্যবসায়ীরা তা করেননি। ফলে ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাতে পচন ধরে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমাইয়া আক্তার জানান, সরকার চামড়া বিক্রির দাম প্রকাশ করেছে। কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে তাও বলে দিয়েছে। বিনামূল্যে লবণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। প্রত্যেক এলাকায় চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় নিয়ম মানতে নারাজ। ফেলে যাওয়া ও পচনশীল চামড়া পরিষ্কার করার জন্য মিরসরাই পৌরসভা কাজ করছে।
এম মাঈন উদ্দিন/জেডএইচ/জেআইএম