ভারতের দিল্লিতে ইন্টারন্যাশনাল ওপেন গ্র্যান্ডমাস্টার দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে গেছেন আংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার রানি হামিদ। তথ্য গোপন করার অভিযোগে দিল্লি বিমানবন্দর থেকেই রানি হামিদের সহযোগি আসিয়া সুলতানাকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এখন ভারতে একা হয়ে পড়েছেন রানি হামিদ।
Advertisement
৮০ বছর বয়সেও ৬৪ ঘরের বোর্ডে দাপিয়ে বেড়ান সৈয়দা জসিমুন্নেসা খাতুন। যিনি সবার কাছে পরিচিত রানি হামিদ নামে। দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গী আসিয়া সুলতানাকে ফেরত পাঠানোর কারণ হিসেবে জানায়, শেষবার তিনি ভারত এসেছিলেন মেডিক্যাল ভিসায়; কিন্তু কলকাতায় তিনি দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নেন। এই তথ্য গোপনের অভিযোগেই মূলত আসিয়াকে ফেরত পাঠানো হয়।
দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল ওপেন গ্র্যান্ডমাস্টার দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে ভারতে আসার সময় রানি হামিদের সঙ্গে ছিলেন তার সহকারী এবং সতীর্থ আসিয়া সুলতানা। ৩৭ বছরের আসিয়া বহু প্রতিযোগিতাতেই ৮০ বছরের দাবাড়ু রানি হামিদের সঙ্গী হন। তারা একসঙ্গে অনুশীলন করেন এবং প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া প্রবীণ দাবাড়ুর খেয়ালও রাখেন আসিয়া।
বাংলাদেশ থেকে তারা দিল্লির বিমানে ওঠেন নির্বিঘ্নে; কিন্তু বিপত্তি হয় দিল্লি বিমানবন্দরে। রানি হামিদকে ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হলেও আসিয়াকে দিল্লি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হতে দেয়নি দিল্লি বিমানবন্দরে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
Advertisement
তাকে বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে বলা হয়। কারণ ভারতের ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের (এফআরআরও) কালো তালিকায় রয়েছে আসিয়ার নাম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘শেষবার তিনি ভারতে এসেছিলেন মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে; কিন্তু কোনও চিকিৎসা করাননি। বরং, কলকাতায় একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশে ফিরে যান। অসত্য তথ্য দিয়ে ভারতের আসার অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন আসিয়া।’
রানি হামিদকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তিনি ভারতে ঢুকতে পারবেন না। সারারাত দিল্লি বিমানবন্দরেই থাকতে হয় আসিয়াকে। হাতে পাননি ব্যাগও। সবকিছু নিজেদের হেফাজতে রেখে দেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পরেরদিন তাকে ঢাকাগামী বিমানে ফেরত পাঠানো হয় বাংলাদেশে।
সতীর্থ এবং সহযোগীকে ফেরত যেতে হওয়ায় মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন রানি হামিদ। খেলায়ও এ ঘটনার প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ভারতের এক সংবাদমাধ্যমকে রানি হামিদ বলেন, ‘খুব খারাপ লাগছে। আমার মন ভাল নেই। আমার সঙ্গে যিনি এসেছিলেন, তাকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সারারাত বিমানবন্দরের অভিবাসন কেন্দ্রে বসিয়ে রাখা হয়। ব্যাগগুলোও দেওয়া হয়নি। পরের দিন তাকে দ্বিগুণ দামে ফেরার টিকিট কিনতে বাধ্য করা হয় এবং বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। খেলায় মন দিতেই পারছি না।’
বয়সের কারণে একা বিদেশে খেলতে যেতে ভরসা পান না রানি হামিদ। গত কয়েক বছর ধরেই কাউকে সঙ্গে নেন তিনি। অনেক সময় তার সঙ্গী হন আসিয়া। এবার ভারতে একা হয়ে যাওয়ায় কিছুটা উদ্বেগে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কখনও একা সফর করি না। সব সময় সঙ্গে কেউ না কেউ থাকে। যেমন এবার আসিয়া সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু ওকে দেশে ফিরে যেতে হওয়ায় আমি একা হয়ে গিয়েছি।’
Advertisement
কেন এমন হল বুঝতে পারছেন না রানি হামিদ। তিনি বলেন, ‘ওর পাসপোর্টে কোনও সমস্যা ছিল না। প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রও ছিল। অভিবাসন কর্মকর্তারা জানান, মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে আগের প্রতিযোগিতা খেলে যাওয়ায় কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ওকে। এমন কিছু হতে পারে উনি জানতেনই না। জানানো হয়নি আগে। তা হলে ভারতে আসতেনই না। বাংলাদেশের দাবা ফেডারেশনকে বিষয়টি তখনই জানানো উচিত ছিল ভারতীয় কর্তৃপক্ষের।’
আইএইচএস/