জাতীয়

ঢাকামুখী মানুষের চাপ নেই সদরঘাটে

ঢাকামুখী মানুষের চাপ নেই সদরঘাটে

* শুক্র ও শনিবার বাড়তে পারে যাত্রীর চাপ* এক-তৃতীয়াংশ আসন ফাঁকা নিয়ে সদরঘাট ছাড়ছে লঞ্চ* পদ্মা সেতু ও গুলিস্তানের যানজটকে দুষছেন লঞ্চ ব্যবসায়ীরা

Advertisement

পদ্মা সেতু পরবর্তী যুগে পাল্টে গেছে সদরঘাটের চিরচেনা চিত্র। ঈদের আগে সেভাবে দেখা মেলে না আগের মতো ঘরমুখো মানুষদের। ঈদ পরবর্তী সময়ও নেই ঢাকামুখী মানুষের চাপ। বুধ ও বৃহস্পতিবার যাত্রীদের স্বাভাবিক আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে সদরঘাটে। নেই অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ, কিছু সময় পরপর আসা যাওয়া করছে লঞ্চগুলো।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, ঈদের সময়ে সদরঘাটে ৬০ থেকে ৭০টি লঞ্চ প্রতিদিন যাওয়া আসা করছে। বছরের অন্য সময়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করে। এসব লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-পটুয়াখালী, ঢাকা-ভোলা, ঢাকা-চাঁদপুরসহ কয়েকটি রুটে চলাচল করে।

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদ পরবর্তী ধারণক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক আসন ফাঁকা নিয়ে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চ। ঢাকায় আসার সময় মিলছে যাত্রী। তবুও ঢাকায় ফেরার সময় কখনো কখনো সম্পূর্ণ আসনও পূরণ হচ্ছে না।

Advertisement

লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ ও বিভিন্ন ছুটির সময়ে তাদের কিছুটা লাভ হয়। বছরের অন্য সময়ে লোকসান গুনতে হয়। তারা বলছেন, এ ঈদে আবহাওয়া ভালো না থাকার জন্য লঞ্চে যাত্রী কম। শুক্র ও শনিবার যাত্রীর চাপ বাড়বে প্রত্যাশা লঞ্চ ব্যবসায়ীদের।

ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে চলাচলকারী সুন্দরবন লঞ্চের কর্মচারী রাজু বলেন, ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে মোট ৬টা লঞ্চ চলে। যাত্রী এখনো আশানুরূপ না হওয়ায় বুধবার (১১ জুন) পটুয়াখালী থেকে একটি লঞ্চ আসেনি। শুক্র-শনিবার যাত্রী বেশি হবে। কারণ রোববার থেকে অফিস খোলা।

পটুয়াখালীগামী আরেক এমভি পূবালী-১২ তে ধারণক্ষমতা ৬৩৮ জন। যাওয়ার সময় ২৫০-৩০০ জন যাত্রী হচ্ছে তাদের। তবে ঢাকায় ফেরার সময় যাত্রীসংখ্যা ৫০০ এর মতো হলেও পূর্ণ হচ্ছে না আসন।

লঞ্চটির কর্মচারী আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের লঞ্চের যাওয়া-আসায় মোট ৫ লাখ টাকা খরচ আছে। এখন সীমিত পরিমাণ লাভ হচ্ছে। এ ঈদে এখনো তেমন লাভের মুখ দেখিনি। জানা যায়, লঞ্চটিতে সোফা ৫০০ টাকা ও ডাবল বেডের কেবিন ২৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করে শুভরাজ-৯ লঞ্চ। প্রায় ৯০০’র মতো ধারণক্ষমতার এ লঞ্চটির ঈদ পরবর্তী সময়ে ৭০০ থেকে ৮০০’র মতো যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় যাত্রী হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ জন। লঞ্চটির সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১২০০ এবং ডাবল কেবিন ২৪০০ টাকা করে রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে, ডেকে ৪০০ এবং সোফায় ৩০০-৪০০ টাকা করে রাখা হচ্ছে।

ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী বিশালাকৃতির লঞ্চ সুন্দরবন-১৬ এর ধারণক্ষমতা এক হাজার ১৩৬ জন। লঞ্চটির সুপারভাইজার মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বরিশাল থেকে ঢাকায় আসার সময়ও সব আসন পূরণ হচ্ছে না। আশা করছি, শুক্র ও শনিবার বেশি পরিমাণ যাত্রী পাবো।

এক হাজার ২৫৫ জন ধারণক্ষমতার পারাবাত লঞ্চটির কেরানি মো. তুহিন বলেন, এখন ৮০০ থেকে ৯০০ এর মতো যাত্রী হয় ঢাকায় আসার সময়। যাওয়া-আসা দিয়ে সাড়ে ৬ হাজার লিটার তেল লাগে আমাদের। সবমিলিয়ে সাত লাখ টাকার বেশি খরচ আছে। সীমিত লাভ নিয়েই টিকে আছি।

বরিশাল থেকে সদরঘাটে আসা যাত্রী আল ফারুক আহমেদ বলেন, পরিবারসহ নদীপথে যাত্রা আরামদায়ক। আয়েশি কায়দায় লঞ্চে আসা যায়। এজন্য নৌপথেই এসেছি। সদরঘাটে ব্যবস্থাপনা এখন বেশ ভালো।

তবে কিছুটা ভিন্নচিত্র দেখা গেছে, ঢাকা-চাঁদপুরগামী লঞ্চগুলোয়। ঢাকা ও চাঁদপুরের দূরত্ব কিছুটা কম হওয়ায় যাত্রীর চাপ এ রুটে একটু বেশি বলে জানা যায়। চাঁদপুরগামী এভি তরঙ্গ-১ লঞ্চটির ধারণক্ষমতা ৩৪২ জন। লঞ্চটির কর্মকর্তারা জানান, আসার সময় সব কেবিন পূরণ হয়ে যায়। আসনও খুব একটা ফাঁকা থাকে না। তবে রোজার ঈদ থেকে এ ঈদে যাত্রী কম।

এদিকে ভোলার চরফ্যাশনগামী তাসরিফ-৩ লঞ্চের কর্মচারীরা বলেন, এ লঞ্চে ধারণক্ষমতা ৭৫০ জন। ঢাকায় আসার সময় ৩৫০-৪০০’র মতো যাত্রী হচ্ছে। যেতে মাত্র ২০০’র মতো মিলছে। তারা দাবি করেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

ঈদে যাত্রীর চাপ ও লঞ্চ ব্যবসার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, এ বছরের ঈদে ব্যবসা একেবারে খারাপ অবস্থা। বিরূপ আবহাওয়ায় এবার লঞ্চে যাত্রী কম। তীব্র গরমে অনেকে এসি গাড়িতেই যাতায়াত করছেন। রোজার ঈদে ব্যবসা একটু ভালো ছিল। এ ঈদের সময় মোটামুটি লাভে আছে ব্যবসা। তবে ঈদের পরে আবার ব্যবসায় ক্ষতি শুরু হবে।

তিনি বলেন, গুলিস্তান ও পুরান ঢাকার যানজট পার হয়ে অনেকেই সদরঘাটে লঞ্চে আসতে চান না। গুলিস্তান-সদরঘাট একটি ফ্লাইওভার বা মেট্রোরেল হলে যাত্রী সংকট কিছুটা কাটবে বলে প্রত্যাশা তাদের।

এদিকে, সদরঘাটকেন্দ্রিক এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন আছে বলে সদরঘাট নৌ-থানা সূত্রে জানা গেছে। সদরঘাটে কোনো ছিনতাই বা দুর্ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে। কয়েকদিন আগে একজন লোক পানিতে পড়ে গেলে তাৎক্ষণিক তাকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

এমআইএন/এমএএইচ/জেআইএম