খেলাধুলা

‘জিততে না পারলে উন্মাদনায় ভাটা পড়বে, বারবার কেউ হার দেখতে চায় না’

‘জিততে না পারলে উন্মাদনায় ভাটা পড়বে, বারবার কেউ হার দেখতে চায় না’

খেলাধুলায় হারজিত থাকবেই। যদি হারটা বেশি হতে থাকে তাহলে সেই খেলা নিয়ে মানুষের আগ্রহ কমে যাবে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি হারের পর জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম সেটাই মনে করছেন। গত তিন-চার মাস ধরে ফুটবল নিয়ে যে উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা তৈরি হয়েছে দেশে, সেটা হারিয়ে যাবে যদি কোনো ম্যাচ জিততে না পারে দল।

Advertisement

অনেকদিন পর ফুটবল ঘিরে যে আলোড়ন তৈরি হয়েছে তার প্রধান কৃতিত্ব মিডিয়াকে দিয়েছেন সাবেক এই মিডফিল্ডার। ‘আমি প্রথমেই বলবো ভারত ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল ফুটবলে তার কারণ কি ছিল? হামজা দেওয়ান চৌধুরী, শামিত সোম ও ফাহামিদুল ইসলামদের আগমন। তবে প্রথম কৃতিত্ব দেবো আমি মিডিয়াকে। দেশের অন্যতম সেরা লিগে খেলা হামজা এসেছেন। এরপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ফুটবল ফিরছে দেশের প্রধান ভেন্যু ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে- এসব কিছুই ফলাও করে প্রচার করেছে গণমাধ্যম। মিডিয়ার কারণেই এই হাইপটা তৈরি হয়েছিল’- বলেছেন মামুনুল ইসলাম।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ৬ ম্যাচের দুটি হয়ে গেছে। এখনো বাকি চারটি। যার দুটি আছে দেশের মাটিতেই। মামনুল ইসলাম মনে করছেন, সামনের ম্যাচগুলোর যদি একটিও জেতা যায় তাহলে দৃশ্যপট আরো বদলে যাবে। আর জিততে না পারলে উন্মাদনায় ভাটা পড়বেই। বারবার কেউ হার দেখতে যায় না। খেলাধুলা জমিয়ে দিতে জয়টা গুরুত্বপূর্ণ। দল যদি জয়ের অভ্যাস তৈরি করতে পারে তাহলে ফুটবল নিয়ে আলোড়ন থাকবেই।

মামুনুল ইসলাম মনে করেন, ‘এই উন্মাদনা ধরে রাখা যাবে কিনা তার পুরোটাই নির্ভর করে ম্যানেজমেন্টের ওপর। দর্শক কি চায় আর ম্যানেজমেন্ট কি চায় সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের এখানে দর্শকের চাওয়ার চেয়ে ম্যানেজমেন্টের চাওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ম্যনেজমেন্টের উচিত হবে নিচ থেকে ফুটবলার তুলে আনার দিকে জোর দেওয়া। আগে কখনো শুনিনি ফুটবলে টাকা আছে। এখন তো স্পন্সর আসছে। চাইলে এখন অনেক কিছুই করা সম্ভব। একটা হাইপ দিয়ে কিছু হবে না। ফুটবল উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করতে হবে'- বলেছেন মামুনুল ইসলাস।

Advertisement

আরেকটি বিষয় মামুনুলের কাছে সঠিক মনে হয়নি। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে গানবাজনার আয়োজন। সাবেক এই তারকা মিডফিল্ডার বলেছেন, ‘বাফুফে মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরেই যেন বেশি ফোকাস দিয়েছে। সিঙ্গাপুরের কাছে আমরা ২-১ গোলে হেরেছি। ব্যাপার না। আরো ফলাফল করার সুযোগ ও সামর্থ্য আমাদের ছিল। পারিনি। আসলে খেলার মধ্যে নজর থাকতে হবে। বাফুফের নজর বেশি ছিল বাইরের দিকে। আপনি দর্শকদের বিনোদন দিতে পারেন। সেটা ভালো। কিন্তু আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে তাতে দলের ক্ষতি হচ্ছে কিনা। আমরা চাই ফুটবল একটা জায়গায় পৌঁছাক। তাতে জয়ও যেমন আসবে, ফুটবলের সাথে সম্পৃক্ত মানুষের কাজের ক্ষেত্রও তৈরি হবে। যেমন ক্রিকেটে সেটা আছে। তাহলে বাংলাদেশকে ওয়ার্ল্ড স্পোর্টসে আরো বেশি শক্তিশালী হিসেবে দেখা যাবে।’

ফুটবলকে আরো বেশি নার্সিংয়ের বিকল্প দেখছেন না এই সাবেক ফুটবলার। সেই সাথে তিনি জয়ের অভ্যাস গড়ে তোলাতেও জোর দিয়েছেন। বেশি বেশি ম্যাচ খেললেই এই অভ্যাস হতে পারে। ‘আমরা যে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলি তাতো জয়ের জন্য। জিতলে খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দুই ম্যাচ পর গ্রুপে বাংলাদেশ তিন নম্বরে আছে। ভারতের ওপরে। জিতলে আরেক ধাপ ওপরে উঠতে পারবে। তাছাড়া সিঙ্গাপুরের কাছে হারলেও আমাদের ভালো সম্ভাবনা কিন্তু আছে। তাহলে সেই সুযোগ কেন আমরা নেওয়ার চেষ্টা করবো না। আমি মনে করি, সামনের ম্যাচগুলোর জন্য সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে’- বলেছেন মামুনুল।

জয়ের সম্ভাবনা আসলেও তো বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারে না। এই যেমন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচটি জিততে পারতো বলেই মনে করছেন মামুনুল ইসলাম। জিততে না পারার কারণ হিসেবে তিনি ফিনিশিং দূর্বলতাকেই সামনে আনলেন, ‘আমাদের তো একটাই সমস্যা, ফিনিশিং। ফিনিশার থাকলেও তাদের তো সেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। আসলে সব জায়গায়ই পরিবর্তন আনা দরকার।’

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের পর প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। কোচ পরিবর্তনের বিষয়ে কি বলবেন? ‘হামজা-শামিতরা আসার পর আমাদের দলের স্ট্যান্ডার্ড বেড়েছে। কোচিং স্টাফেরও স্ট্যান্ডার্ড বাড়াতে হবে। আমি আগেই বলেছি সব জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে পরিবর্তনগুলো করলে কি ফল আসবে? ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক। ক্যাবরেরা তো অনেক দিন ধরেই কাজ করছেন। তার অধীনে অনেক ম্যাচও খেলা হয়ে গেলো। বড় ধরনের পরিবর্তন আনলে কি চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। তারপরও চ্যালেঞ্জ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই দলের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে’- বলেছেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক।

Advertisement

আরআই/আইএইচএস/