সাতক্ষীরার মরিচ্চাপ নদীর ওপর নির্মিত অন্তত সাতটি সেতু একে একে নদীতে ধসে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত না নিয়ে এবং সিএস রেকর্ড অনুসরণ না করেই ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় এসব সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণের মাত্র কয়েক বছরের মাথায় সেগুলো ধসে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ।
Advertisement
সম্প্রতি নদীখননের পর সেতুগুলো ধসে পড়ে। সেতুগুলো হলো বাকড়া, টিকেট, হিজলডাঙ্গা, চরগোবিন্দপুর, শিমুলবাড়িয়া, ডাড়ার খাল ও এল্লারচর সেতু। অবশ্য একই নদীর ওপর ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের এলজিইডি নির্মিত ব্যাংদহা সেতুটি এখনো অক্ষত রয়েছে।
২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মিত এসব সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ১০ থেকে ১৫ মিটার। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, মরিচ্চাপ নদীর প্রস্থ ৫০ থেকে ৭০ মিটার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোথাও ভাঙা সেতুর কাঠামো নদীর মাঝখানে পড়ে আছে, কোথাও আবার বাঁশ বেঁধে পারাপার করছে মানুষ। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে ৪-১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে পাড়ি দিচ্ছেন ২০ কিলোমিটারের বেশি। এতে সময় ও যাতায়াত ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ।
Advertisement
চরগোবিন্দপুরের শুকুর আলী সরদার বলেন, ‘নদীর তুলনায় সেতুগুলো এত ছোট যে পানির চাপে ভেঙে পড়েছে। এখন যে কোনো কাজেই শহরে যেতে চরম কষ্ট হচ্ছে।’
ডাড়ার খাল এলাকার আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘স্কুল-কলেজে সময়মতো যেতে পারছে না ছেলেমেয়েরা। ঘেরে মাছ তোলার পর সময়মতো বাজারে নিতে না পারায় আমরা লোকসান গুনছি।’
সেতুধসের অন্যতম কারণ হিসেবে নদী খননকে দায়ী করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের মতে, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে মরিচ্চাপ নদী পুনঃখননের ফলে নদী তার পুরোনো রূপ ও প্রশস্ততা ফিরে পেয়েছে। বেড়েছে জোয়ারের পানির চাপ। এতে দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে সেতুগুলোর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এত বড় নদীর ওপর ১৫ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের সেতু টেকার কথা না। এছাড়া সেতু নির্মাণে আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।’
Advertisement
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুধসের পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোয়েব আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ধসে পড়া সাতটি সেতুর মধ্যে চারটি এলজিইডির মাধ্যমে পুনঃনির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
আহসানুর রহমান রাজীব/এসআর/এমএস