উন্নত জীবনের স্বপ্নযাত্রায় বাংলাদেশিরা বেছে নিচ্ছেন অবৈধ পথ। প্রধান গন্তব্য সাগরপথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এদের বড় একটি অংশ যাচ্ছেন দালাল ধরে। অনিশ্চিত সে যাত্রায় ঝুঁকিতে ফেলছে জীবন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে।
Advertisement
নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (ছদ্মনাম)। যিনি দালালের মাধ্যমে চুক্তি করে ২২ লাখ টাকায় ২০২২ সালে ইতালি পৌঁছান। ইতালিতে কর্মসংস্থান জোগাড় করতে না পেরে চলে যান ফ্রান্সে। পরপর দুবার ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে তারপর পান। বর্তমানে দেশটিতে আছেন তিনি।
জাগো নিউজকে মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাংলাদেশে কাজকর্ম ছিল না। দালাল বলেছিল ইউরোপে গিয়ে চাকরি করতে পারবো। প্রথমে দুবাই গেলাম, সেখান থেকে ইতালি। নানান ভোগান্তি শেষে ফ্রান্সে আসতে পেরেছি। এখন রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে এখানে আছি।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চাশা নিয়েই এখানে এসেছি। কিন্তু রিফিউজি হওয়ায় ১০ বছরে বাংলাদেশে যাওয়ার নিয়ম নেই। কার্ড হলে দেশে যেতে পারবো। এখন আয়-রোজগার করছি ভালো। তবে পরিবার ছাড়া আছি। বিয়ে করতে পারছি না, দেশে যেতে পারছি না। এটাই কষ্ট।’
Advertisement
শরণার্থী হওয়ার এই প্রবণতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও কিছুটা প্রভাবিত করছে। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব। তারা ভাবে ইউরোপে ঢুকলেই আশ্রয় পাওয়া যায়, কাগজ পাওয়া যায়। ফলে অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় নিজেদের নির্যাতনের শিকার হিসেবে উপস্থাপন করে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করছেন।- অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনীর
রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন, দেশে রাজনৈতিকভাবে কোনো হুমকি পেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে রাজনৈতিক কারণে নিরাপদ ছিলাম না। পাশাপাশি বেকারত্বও ছিল। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।’
শুধু জাহাঙ্গীর আলম নন, এমন শত শত বাংলাদেশি বিভিন্ন অজুহাতে আশ্রয় চেয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশিদের শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধনের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে। ২০২০ সালে যেখানে ১৮ হাজার ৯৪৮ জন বাংলাদেশি জাতিসংঘের কাছে শরণার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন, সেখানে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৪৭৩ জনে। প্রতি বছরই বাড়ছে আবেদনকারীর সংখ্যা। ২০২১ সালে ছিল ২২ হাজার ৬৭২ জন, ২০২২ সালে ২৩ হাজার ৯৩৫ এবং ২০২৩ সালে ২৪ হাজার ১২৬ জন। সবশেষ ২০২৪ সালে ২৮ হাজার ৪৭৩ জন বাংলাদেশি জাতিসংঘের কাছে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন।
Advertisement
ইউরোপসহ অন্য দেশেও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় চেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ১৩১ জন বাংলাদেশি। এর আগের বছর, ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৮৬৭ জন। ২০২২ সালে ছিল ৬১ হাজার ২৯৮, ২০২১ সালে ৬৫ হাজার ৪৯৫ এবং ২০২০ সালে ৬৪ হাজার ৬৩৬ জন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকেই প্রকৃত অর্থে শরণার্থী নন। বরং দালালদের পরামর্শে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করছেন তারা। তারা বলছেন, আশ্রয় পাওয়াদের অধিকাংশ সুযোগসন্ধানী বা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছেন।
বিগত বছরগুলোতে অ্যাসাইলামের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করার যে পরিসংখ্যান ইউএনএইচসিআর প্রকাশ করছে তা মূলত বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে অনিয়মিত অভিবাসনের মাধ্যমে ঘটছে। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তাদের এ ধরনের অনিয়মিত অধিবাসীদের মধ্য থেকে আবেদনের সংখ্যা বেশি হলেও খুব কম সংখ্যক আবেদনই সে সব দেশে গৃহীত হচ্ছে।- শরণার্থী বিশেষজ্ঞ বুলবুল সিদ্দিকী
শরণার্থী বিশেষজ্ঞ ও নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বুলবুল সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেকে মানবপাচারকারীদের প্রলোভনের শিকার হয়ে ইউরোপ গিয়ে রিফিউজি হওয়ার কৌশল অবলম্বন করে। বিশেষ করে আমরা যদি ইউরোপের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই অবৈধ প্রক্রিয়ায় যারা বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, তাদের অনেকেই সেই দেশগুলোতে অ্যাসাইলামের (রাজনৈতিক আশ্রয়) মাধ্যমে স্থায়ী হওয়া বা থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।’
তিনি বলেন, ‘তবে বিগত সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অ্যাসাইলাম চেয়েছেন এমন অনেকে রয়েছে। তবে তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়।’
শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার আশায় ঘুরছেন বহু বাংলাদেশিফ্রান্সের প্যারিসে গত তিন বছর ধরে অবৈধ হিসেবে কাজ করছেন কুমিল্লার রাশেদ হাসান। তিনিও রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে আসার ছয় মাস পর কাজ পেয়েছি। দুবার রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েও পাইনি। এ অবস্থায় আমি দেশে ফিরতে পারবো না। আশ্রয় মিললেই পরবর্তী ধাপে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবো। এখানে কষ্ট আছে, কিন্তু দেশে ফিরে যাওয়ার চেয়ে ভালো আছি।’
রাজনৈতিক কোনো হুমকি পেয়ে দেশ ছেড়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘না, সেরকম কিছু না। ইউরোপের দেশগুলোতে অধিকাংশ কর্মী অবৈধভাবে এসে উকিল ধরে অ্যাসাইলামের জন্য আবেদন করে। এতে সহজে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা যায়।’
ইউরোপে শরণার্থী হলে কী কী সুবিধা পাওয়া যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি এখানে কার্ড পেলে কার্ডে রিফিউজি লেখা থাকে। সে কার্ড দিয়ে ইউরোপে বৈধভাবে কাজ করা যায়। কিন্তু ১০ বছর দেশে যাওয়া যায় না। তবে অনেকে আছেন বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে দেশে যান। আবার কেউ কেউ নেপাল, ভুটান, সিঙ্গাপুর গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে কিংবা বিয়ে করে আবার ইউরোপে ফিরে আসেন।’
অধিকাংশ যাচ্ছেন সমুদ্রপথেইউরোপে আশ্রয়প্রত্যাশীদের অধিকাংশ যাচ্ছেন সমুদ্রপথে। সমুদ্রপথে তারা ইউরোপের দেশ ইতালি, স্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস ও মাল্টায় প্রবেশ করেন। তবে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন লিবিয়া হয়ে ইতালির পথ।
দীর্ঘ আট মাসের প্রচেষ্টায় ২০২২ সালে লিবিয়া হয়ে সমুদ্রপথে ইতালি পৌঁছান চাঁদপুর জেলার বাসিন্দা রাকিব হাসান। ইতালি যাওয়ার এক বছর পর ২০২৪ সালে আইনজীবীর মাধ্যমে অ্যাসাইলাম চান রাকিব। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘দালালের মাধ্যমে চুক্তি করে জীবন বাজি ধরে এসেছি। দালালদের একটা লোভের ফাঁদ থাকে অ্যাসাইলাম করার। আমি রাজনৈতিক কারণে আশ্রয় চেয়েছি, এখনো পাইনি।’
জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ প্রবেশে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ ছিল। ২০২২ সালে ছিল তৃতীয় এবং এর আগে ২০২১ সালে এই তালিকায় শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। ২০২০ ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। সবশেষ ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে দুই হাজার ৬৭০ জন সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশ করেন। গত বছর ওই সময় সমুদ্রপথে ইউরোপ যাত্রায় বাংলাদেশ ছিল সর্বোচ্চ।
বৈধপথে কাজের জন্য ইউরোপ যাত্রার সংখ্যা নগণ্য। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সবশেষ পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য ইউরোপের ২৮টি দেশে গেছেন মাত্র ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন শ্রমিক। অথচ এই একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে গেছেন ৩২ লাখ আট হাজার ৮৮ জন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেকে অবৈধ পথে লাখ লাখ টাকা খরচ করে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে। সেখানে গিয়ে অবৈধ হিসেবেই বছরের পর বছর থাকছে। অনেকে অবৈধ হিসেবে শরণার্থী পরিচয় দিচ্ছে।
অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘শরণার্থী হওয়ার এই প্রবণতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও কিছুটা প্রভাবিত করছে। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব। তারা ভাবে ইউরোপে ঢুকলেই আশ্রয় পাওয়া যায়, কাগজ পাওয়া যায়। ফলে অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় নিজেদের নির্যাতনের শিকার হিসেবে উপস্থাপন করে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করছেন।’
তিনি বলেন, ‘ইউরোপে বৈধপথে শ্রমবাজার খোলাটা জরুরি। অনেক দালাল অবৈধ পথে নিয়ে রিফিউজি হওয়ার লোভ দেখায়। এখানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে ইউরোপের শ্রমবাজারে ঢুকতে হবে।’
যেসব দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন বাংলাদেশিরাইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, বাংলাদেশিরা নিজেদের শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালির পাশাপাশি ফিনল্যান্ড, জর্জিয়া, সাইপ্রাস, বসনিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতেও নিবন্ধন করেছেন। আর উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, পাপুয়া নিউগিনির মতো দেশগুলোতে শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেছেন।
এশিয়ার মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, হংকংয়ের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও বাংলাদেশিরা আবেদন করেছেন। এমনকি ২০২৪ সালে পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ায়ও ছয়জন বাংলাদেশি নিজেকে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেছেন।
‘ইউরোপে শরণার্থী হওয়া অভিবাসনের একটি কৌশল’অবৈধ পথে ইউরোপ গিয়ে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে অভিবাসনের একটি কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন শরণার্থী বিশেষজ্ঞ ও নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বুলবুল সিদ্দিকী।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ার যারা রয়েছেন এদের সঙ্গে সত্যিকার অর্থে শরণার্থী কিংবা জোরপূর্বক বাস্তবচ্যুত হওয়ার কোনো ধরনের সম্পর্ক খুবই কম। কেননা শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ থাকে। এর মধ্যে অন্যতম দুটি কারণ হচ্ছে নিজ দেশে সহিংসতার স্বীকার কিংবা রাজনৈতিকভাবে নানাভাবে নিগৃহীত হওয়ার অভিজ্ঞতা কিংবা দেশে যুদ্ধাবস্থার কারণে অন্য দেশে শরণার্থী হিসেবে যেতে বাধ্য হওয়া। কিন্তু এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় এই দুটি প্রবণতার তেমন কোনো প্রভাব থাকার কথা নয়।’
রাজনৈতিক কারণে কেউ যদি ভিন্ন দেশে অ্যাসাইলামের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করে তাদের সংখ্যা কম উল্লেখ করে বুলবুল সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে অ্যাসাইলামের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করার যে পরিসংখ্যান ইউএনএইচসিআর প্রকাশ করছে তা মূলত বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে অনিয়মিত অভিবাসনের মাধ্যমে ঘটছে। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তাদের এ ধরনের অনিয়মিত অধিবাসীদের মধ্য থেকে আবেদনের সংখ্যা বেশি হলেও খুব কম সংখ্যক আবেদনই সে সব দেশে গৃহীত হচ্ছে।’
আরএএস/এএসএ/জেআইএম