রাজধানীর মালিবাগ মোড়ের জনপ্রিয় মৌচাক মার্কেটের সকল দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সক্ষমতা সনদ না পাওয়া পর্যন্ত এসব দোকান বন্ধ রাখতে হবে বলে জানা গেছে।এক রিট আবেদনের শুনানি করে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব এবং রাজউক কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন।সেইসঙ্গে ওই ভবন সংস্কারের নির্দেশ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়েছে এবং দোকান খালি করতে কেন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হবে না- তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।আদেশে বুয়েটের প্রতিবেদনের আলোকে সংস্কার করা বা বিল্ডিং কোড অনুযায়ী দোকান বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।বুয়েটের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ মে রাজউক মৌচাক মার্কেট কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি পাঠানো হয়, যাতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে দোকান খালি করে ভবনটি সংস্কার করতে বলা হয়।ওই চিঠি পাঠানোর পর মালিক তার বিল্ডিং তৈরির কাজ শুরু করতে না পারায় কাজে বাধা দেয়ার বিষয় চ্যালেঞ্জ করে ভবন মালিক আশরাফ কামাল পাশা হাইকোর্টে এই রিট আবেদন করেন।রিটের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোতাহার হোসেন, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।আদেশের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, দোকান বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ওই ভবন সংস্কারের নির্দেশ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং দোকান খালি করতে কেন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে দুটি রুল জারি করা হয়েছে।ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৭ মে রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (রাজউক) মৌচাক মার্কেটের ভবন মালিককে চিঠি দেন।এতে বলা হয়, ইমারতটি বহু পুরাতন ও বহুল ব্যবহৃত। প্রত্যেহ হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। বর্তমানে ইমারতটি জীর্ণ ও দৃশ্যত ঝুকিপূর্ণ প্রতীয়মান হওয়ায় বুয়েট পুরকৌশল বিভাগ বা বিআরটিসি কর্তৃক পরীক্ষা-নীরিক্ষা পূর্বক কাঠামোগত উপযুক্ততার সনদ গ্রহণ করে চাওয়া তথ্যদি এই দফতরে (রাজউক) দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হল। সেইসঙ্গে ভবনটির কাঠামোগত উপযুক্ততা নিশ্চিত হয়ে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হল। এর ধারাবাহিকতায় বুয়েটের দেয়া সুপারিশ রাজউকে জমা পড়ে। এর প্রেক্ষিতে রাজউক গত ২ মে ভবন মালিককে আরেকটি চিঠি দেয়। ২ মে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, বুয়েট প্রণীত কাঠামোগত মূল্যায়ন প্রতিবেদনের পরামর্শ ও কর্তৃপক্ষের ওই নির্দেশনা স্বত্ত্বেও কাঠামোগত ঝুঁকি হ্রাসে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দায়িত্বহীনভাবে মার্কেট ব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন, যা জীবন ও সম্পদের জন্য ঝুকিপূর্ণ এবং ইমারত নির্মাণ আইন-১৯৫২ এর সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। এ অবস্থায় মার্কেটটির ব্যবহার বন্ধ করে বুয়েট প্রনীত নকশা মোতাবেক বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কাজ অবিলম্বে শুরু করার জন্য পুনরায় নির্দেশ দেয়া হল। কাঠামোগত ঝুকিপূর্ণ ভবনটি ব্যবহারের দরুণ যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে একমাত্র আপনিই (মালিক) এবং আপনার ব্যবস্থাপনা দায়ী থাকবে এবং ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ অনুযায়ী যথাযথ আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটি চূড়ান্ত নোটিশ বলে গণ্য হবে। এই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জেড কে লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভবন মালিক আশরাফ কামাল পাশা গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন। রিটের ওপর রোববার ও সোমবার শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ ওই আদেশ দেন।আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন্, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. রাজিউদ্দিন সারওয়ার।রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।আদেশের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান জানান, দোকান খালি করতে কেন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হবে না-তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তাসহ সাত বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। মধ্যবিত্তের জনপ্রিয় বিপণি বিতান মৌচাক মার্কেটে এক হাজারের বেশি বিভিন্ন পণ্যের দোকান রয়েছে বলে জানা যায়। ব্যারিস্টার মোতাহার হোসেন বলেন, ইমারত নির্মাণ আইন-১৯৫২ এর ৩ (বি) ধারা অনুসারে মার্কেট খালি করতে সাত দিনের সময় দিয়ে নোটিশ দিতে হয়। এক্ষেত্রে রাজউক সে রকম কোন সময় উল্লেখ না করে দিয়ে দায়সারাভাবে বন্ধ করতে ও বুয়েটের সুপারিশ অনুসরণ করতে বলেছেন। আইনের দৃষ্টিতে এটি কার্যয়কর হতে পারে না। এ কারণে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে মার্কেটের ভূমি মালিক রিটটি করেন যাতে কোন ধরনের দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতি না হয়।এফএইচ/এসএইচএস/আরআইপি