প্রাণের আয়োজনে ধানমন্ডিতে শুরু হলো ‘ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল’। সারাদেশের আমের জন্য বিখ্যাত অঞ্চলের খামারিরা এবার নিজেরাই আম নিয়ে হাজির হয়েছেন দেশের সবচেয়ে বড় এ ম্যাংগো ফেস্টিভ্যালে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে এ ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল শুরু হয়েছে। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এ মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত। এ আয়োজনে দেশে উৎপাদন হওয়া সব ধরনের আম প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হচ্ছে।
এখানে তরুণ প্রজন্মের কাছে বিভিন্ন ধরনের আমের উৎপত্তি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হচ্ছে। সঙ্গে ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল আকর্ষণীয় করে তুলতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গেমস ও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানান ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
এছাড়া সাংস্কৃতিক পর্বে জনপ্রিয় সংগীতদল (ব্যান্ড) ওয়ারফেজ, কণ্ঠশিল্পী ঐশীসহ নামকরা সংগীতশিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন আজ বিকেলে।
প্রাণ ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। মেলায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিনামূল্যে অংশ নিতে পারছেন।
সকালে মেলাপ্রাঙ্গণে সরেজমিনে দেখা যায়, রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে আম, আম থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের স্টল করা হয়েছে। মূল মঞ্চে তৈরি করা হচ্ছে কনসার্টের জন্য স্টেজ। বিভিন্ন ধরনের গেমসের কর্নার রয়েছে আশপাশে।
মেলা শুরু থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা রয়েছে সেখানে। পাশের ধানমন্ডি ১৫ নম্বর এলাকার একজন ক্রেতা মুন্নুজান বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। ঐতিহ্যবাহী এলাকার আমগুলো এখানে পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য কিছু আম কিনলাম।
রাজশাহীর রায়পাড়া বাগান থেকে আম এনেছেন চাষি রাকিব হাসান। তিনি বলেন, আমাদের এলাকার ২০০ বছরের পুরোনো বাগান রায়পাড়া। সেখান থেকে ফজলি আম এনেছি। মাত্র ৫০ টাকা কেজিতে সেসব আম বিক্রি হচ্ছে এখানে। এছাড়া আরেকটি স্টলে আমাদের এলাকার আম্রপালি, বারি-৪, মল্লিকা আম এসেছে। সেগুলো ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, আমরা সরাসরি প্রাণের তত্ত্বাবধানে এখানে আম নিয়ে এসেছি। এ ধরনের আয়োজন আমাদের খামারিদের জন্য একটি বড় সহযোগিতা।
আরও পড়ুন প্রাণ-এর আম সংগ্রহ শুরু প্রাণের আয়োজনে ধানমন্ডিতে শুরু হচ্ছে ‘ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল’প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, প্রাণ গ্রুপ দেশে আমের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। আমরা আমের মৌসুমে দেশের চুক্তিভিত্তিক প্রায় ১০ হাজার কৃষকের কাছ থেকে আম সংগ্রহের পর সেগুলো থেকে জুস ও ড্রিংকস তৈরি করে সারাবছর ভোক্তার সামনে নিয়ে আসি। আমরা এ মেলার মাধ্যমে আমের জন্য বিখ্যাত কয়েকটি জেলার চাষিদের বিভিন্ন ধরনের আম প্রদর্শনের সুযোগ করে দিয়েছি, যেন তারা তরুণ প্রজন্মের কাছে তাদের আমের স্বাদ, ঐতিহ্য ও ইতিহাস তুলে ধরতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, দেশে আম থেকে উৎপাদিত পণ্যের বাজার এখন প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা। বিদেশে আমাদের আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এজন্য দরকার আমাদের আমের ব্র্যান্ডিং। প্রাণ এখন দেশের গর্বের কারণ হয়ে উঠেছে। প্রাণ দেশে উৎপাদিত আম থেকে বিভিন্ন ধরনের জুস, ড্রিংকস, ম্যাংগো বার ও আচার উৎপাদন করে দেশের পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় ১৪৮টি দেশে রপ্তানি করছে। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশি পণ্য প্রাণ জুস ও ড্রিংকসের মাধ্যমে বিশ্বের প্রতিটি জায়গায় বাংলাদেশের আম পৌঁছে দেওয়া।
অ্যাগ্রিকালচার মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেড-এএমসিএলের (প্রাণ) নির্বাহী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রথমবারের মতো আমরা এ ম্যাংগো ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করছি। তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি যেন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে সেজন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ধরনের গেমসসহ নানান আয়োজন রাখা হয়েছে, যা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মেলার আয়োজক মার্কেটিং ইভেন্টসের সিনিয়র ম্যানেজার আসিফ জামান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সকাল থেকে মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও আশা করা হচ্ছে বিকেলে মেলা জমজমাট হয়ে উঠবে। সঙ্গে বিকেলে কনসার্টের জন্য মূল মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। বৃষ্টির বিঘ্নতা কাটিয়ে মেলাকে প্রাণবন্ত করার চেষ্টা আমরা করছি।
এনএইচ/বিএ/এএসএম