২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন, শহীদদের স্মারক এবং বিগত সরকারের ১৬ বছরের নিপীড়নের বিভিন্ন ঘটনা জনগণের সামনে তুলে ধরতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জাদুঘরের রূপান্তরের কার্যক্রম সমাপ্ত করতে এই জাদুঘরের ‘সিভিল’ ও ‘ই/এম’ অংশ নির্মাণ বা সংস্কারকাজ দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১১১ কোটি ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে এই জাদুঘর রূপান্তরের কর্যক্রম সমাপ্ত করা হবে। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি প্রয়োগ করে ‘সিভিল’ ও ‘ই/এম’ অংশের নির্মাণ বা সংস্কার কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করা সম্ভব হবে না। তাই রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে পিপিএ ২০০৬ এর ধারা ৬৮ এবং পিপিআর ২০০৮ এর ৭৬ (২) অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাবে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লি.’-কে দিয়ে সিভিল অংশ এবং ‘মেসার্স শুভ্রা ট্রেডার্স’কে দিয়ে ই/এম অংশের নির্মাণ বা সংস্কার করা হবে।
আরও পড়ুন
গণভবন হবে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর’ গণভবনে জুলাই অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন গণভবনে স্থান পাচ্ছে শহীদ নাফিজের নিথর দেহ বহন করা সেই রিকশাজাদুঘরের ই/এম অংশ বলতে ইলেকট্রো মেকানিক্যাল অংশকে বোঝায়। যার মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল অংশ থাকে। যেমন- ইলেকট্রিক তার, সুইচসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও মেকানিক্যাল সামগ্রী। আর সিভিল অংশ বলতে ইলেকট্রো মেকানিক্যাল অংশ বাদে বাকি অংশকে বোঝায়। অর্থাৎ ই/এম এবং সিভিল এই দুটি অংশের মধ্যে জাদুঘরের সম্পূর্ণ অংশই থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ রূপান্তরের সিদ্ধান্ত গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদিত হয়। আগামী ৫ আগস্ট এই জাদুঘরের উদ্বোধন করা হতে পারে। এই সময়ের মধ্য জাদুঘরের ই/এম অংশ নির্মাণ/সংস্কার করা সম্ভব হবে না। এজন্য এই নির্মাণ বা সংস্কার কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করা হবে। মেসার্স শুভ্রা ট্রেডার্সকে দিয়ে এই কাজ করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গণপূর্ত বিভাগ। এর জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪০ কোটি ৮২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।
অপরদিকে সিভিল অংশের কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অবলম্বন করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লি.’-কে দিয়ে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গণপূর্ত বিভাগ। এর জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭০ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের কাজ ৫ আগস্টের মধ্যে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে আমাদের সব কার্যক্রম চলছে। কিছু কাজ উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি প্রয়োগ করে করতে গেলে ৫ আগস্টের মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এজন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অবলম্বন করে জাদুঘরের সিভিল ও ই/এম অংশের কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও ঠিক করা হয়েছে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অবলম্বন করতে গেলে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির নীতিগত অনুমোদন লাগে। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিলে পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
আরও পড়ুন
জুলাই এসেছে, চোখ ভিজছে বারবার: ফারুকী প্রতিটি অঞ্চলের শিল্পীর গানের রয়্যালটির ব্যবস্থা করা হবে: ফারুকী গণভবন জাদুঘরে আয়নাঘরের একটি প্রতিরূপ নির্মাণ করা উচিতযোগাযোগ করা হলে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (গণপূর্ত ডিজাইন সার্কেল-২, ঢাকা) মো. সোহেল রহমান জাগো নিউজকে বলেন, একটি জাদুঘরের ই/এম অংশ বলতে ইলেকট্রো মেকানিক্যাল অংশকে বোঝানো হয়। এর মধ্যে ইলেকট্রিক ও মেকানিক্যাল অংশ থাকে। আর সিভিল অংশ বলতে একটা কনস্ট্রাকশনের ই/এম অংশ বাদে বাকি সবগুলোকে বোঝায়। অর্থাৎ ই/এম এবং সিভিল অংশের মধ্যে একটি জাদুঘরের সম্পূর্ণ অংশই চলে আসে।
এদিকে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সোমবার (১৪ জুলাই) ঢাকায় গণভবনে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। আগামী ৫ আগস্ট জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হবে। তবে জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে আরও পরে।
ফারুকী বলেন, দেশের ৬৪ জেলায় ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণের কাজ আজ থেকে শুরু হলো। ৪ আগস্টের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে। জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এমএএস/ইএ/এমএস