দেশজুড়ে

ভিডিও ভাইরাল হলেও তালিকায় নেই শহীদ হৃদয়, আমন্ত্রণ পেলো না পরিবারও

ভিডিও ভাইরাল হলেও তালিকায় নেই শহীদ হৃদয়, আমন্ত্রণ পেলো না পরিবারও

জুলাই বিপ্লবে ফেসবুকে ভাইরাল একটি ভিডিও, প্রকাশ্যে ১০-১২ জন পুলিশ একজনকে ঘেরাও করে বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলির পর টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে জানা যায় নিহত ওই ব্যক্তি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর গ্রামের কলেজছাত্র হৃদয়।

Advertisement

হৃদয়ের পরিবারের দাবি, গত ৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন হৃদয়। প্রকাশ্যে রাজপথে বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ টেনে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার ছিল জুলাই শহীদ দিবস। দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা প্রশাসন উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজন করে দোয়া, সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা। তবে সেই অনুষ্ঠানে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ডাকা হয়নি শহীদ হৃদয়ের পরিবারকে।

সরকার ঘোষিত এমন একটা দিবসে উপজেলা প্রশাসন শহীদ পরিবারকে আমন্ত্রণ না জানানোয় সবাই বিস্মিত হয়েছেন। হৃদয়ের পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের এমন আচরণের নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন।

জানা যায়, আলমনগর উত্তরপাড়ার দিনমজুর লাল মিয়ার একমাত্র ছেলে হৃদয় হেমনগর ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করতেন। সংসারে অনটনের কারণে হৃদয় গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে ভগ্নিপতি ইব্রাহীমের সঙ্গে থেকে অটোরিকশা চালাতেন। সেই আয়ে পঙ্গু বাবা-মার খাবার ও নিজের পড়াশোনার খরচ চলতো। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার পলায়নের পর কোনাবাড়ীতে ছাত্র জনতার বিজয় মিছিলে অংশ নিলে পুলিশ তাকে আটক করে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে।

Advertisement

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা হৃদয়কে গলির ভেতর থেকে ধরে এনে কোনাবাড়ীর শরীফ মেডিকেলের সামনে মারধর করছে। বাঁচার জন্য তিনি পুলিশের হাতে পায়ে ধরছেন। এক পর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্য বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। সেখানে ধোঁয়া উড়ছে। পুলিশ চলে যাওয়ার পরও কিছুক্ষণ নড়াচড়া করে নিস্তেজ হয়ে পড়েন হৃদয়। এরপর পুলিশের আরেকটি দল এসে তার মরদেহ টেনে হিঁচড়ে কোনাবাড়ী থানার ভেতরে নিয়ে যায়।

হৃদয়ের মা রেহানা বেগম জানান, ছেলের মরদেহ একনজর দেখার জন্য এখনো হৃদয় কাঁদে। বাড়িতে পঙ্গু স্বামী। সম্পত্তি বলতে তিন শতাংশের ভিটে। মহাজনী ঋণের আড়াই লাখ টাকায় ছেলেকে অটোরিকশা কিনে দেন। তার আয়ে পেট চলতো। এখন সংসারের চাকাও বন্ধ হওয়ার দশা।

হৃদয়ের ভাগনি জেসমিন বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের অনেক পরিবার সরকারি অনুদান পেয়েছেন। কিন্তু মরদেহ গুম হওয়ায় শহীদ তালিকায় হৃদয়ের স্থান হয়নি। সম্প্রতি শহীদ তালিকায় হৃদয়কে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে গোপালপুর উপজেলা পরিষদ ঘেরাও এবং মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের কাউকে আমন্ত্রণ না জানানোয় প্রমাণিত হয় গোপালপুর উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মা লুকিয়ে রয়েছে।

গোপালপুর উপজেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমান জানান, ৫ আগস্ট হৃদয় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। তার দলের নেতারা পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সান্ত্বনা, তালিকাভুক্তকরণ এবং বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জুলাই শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ না জানানোর নিন্দা জানান।

Advertisement

গোপালপুর পৌর বিএনপির সম্পাদক চাঁন মিয়া জানান, হৃদয় ৫ আগস্ট শহীদ হন এটা সবাই জানেন। উপজেলা প্রশাসন তার পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে বৈষম্য করেছেন।

এ ব্যাপারে গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুহিন হোসেন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কেন তারা হৃদয়ের পরিবারের কাউকে জানাননি তা তিনি জানেন না। তাছাড়া জুলাই ফাউন্ডেশনের শহীদ তালিকায় হৃদয়ের নাম যুক্ত হয়নি। তার নাম যাতে অন্তর্ভুক্ত হয়, সেজন্য প্রশাসনিক চেষ্টা চলছে।

আব্দুল্লাহ আল নোমান/এফএ/এএসএম