দেশজুড়ে

জামায়াতের সমাবেশে যোগ দিতে ময়মনসিংহে প্রস্তুত ২৫০ বাস

ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ ঘিরে ময়মনসিংহে জামায়াত নেতারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিভিন্ন যানবাহনে অনেক নেতাকর্মী এরই মধ্যে ইতোমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন। বাকিদের নিয়ে যেতে কমপক্ষে ২৫০টি বাস প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে। ময়মনসিংহ থেকে বিপুল পরিমাণ মানুষ সমাবেশে অংশ নেবেন বলে আশা স্থানীয় জামায়াত নেতাদের।

জামায়াত নেতারা জানান, ময়মনসিংহ থেকে নেতাকর্মীদের সমাবেশে নিয়ে যেতে কমপক্ষে ২৫০টি বাস প্রস্তুত থাকবে। সমাবেশের দিন শনিবার সকালে বাসগুলো ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। যেসব কর্মী বাসে জায়গা না পাবেন, তারা বাস কিংবা ট্রেনে যাবেন। অনেকে যাবেন প্রাইভেটকারে। এছাড়া ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মী ট্রেনে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

এদিকে বিপুল সংখ্যক বাস নেতাকর্মীদের জন্য প্রস্তুত থাকায় শনিবার ঢাকায় যেতে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন সাধারণ যাত্রীরা।

শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে নগরীর বাইপাস মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন হাফিজুল ইসলাম নামের এক যাত্রী। এসময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শনিবার ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীর বিশাল সম্মেলন হবে বলে জানতে পেরেছি। এদিন ময়মনসিংহ থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচুর বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়াসহ যানবাহনের সংকটও সৃষ্টি হওয়ার ধারণা করছি। ছুটিতে কিছুদিন আগে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলাম। ফলে ছুটি শেষ হওয়ার একদিন আগেই ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছি।

একই এলাকায় ঢাকাগামী একটি বাসে বসে ছিলেন শামীম আহমেদ নামের একজন যাত্রী। তিনি বলেন, আগামীকাল যানবাহনে যাত্রীর চাপ বেশি থাকলে অসাধু চালকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করতে চেষ্টা করবে। এজন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে শনিবার ঢাকায় যাওয়ার কথা থাকলেও আজই রওনা হয়েছি।

ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যক্ষ কামরুল আহসান এমরুল জাগো নিউজকে বলেন, সমাবেশে যোগ দিতে ময়মনসিংহ থেকে আমাদের অনেক নেতাকর্মী ইতোমধ্যে ঢাকায় চলে গেছেন। তাদের অনেকে আত্মীয়স্বজনদের বাসায় থাকছেন। সমাবেশের দিন সকালে ময়মনসিংহ থেকে কমপক্ষে ২৫০টি বাস নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এরচেয়ে বেশি বাস চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বহু কর্মী আসবে জেলার গফরগাঁও উপজেলা থেকে। তাদের জন্য বাস প্রস্তুত করা হয়নি। তারা ট্রেনে করে ঢাকায় এসে সমাবেশে যোগ দেবেন।

জামায়াতে ইসলামীর প্রচুর কর্মী বাসযোগে ঢাকায় যাওয়ায় বাস সংকটে অন্যান্য যাত্রীদের কোন ভোগান্তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা জানতে ময়মনসিংহ জেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর মাহমুদ আলমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে মটর মালিক সমিতির কোচ বিভাগের সম্পাদক শহীদুল আমীন খসরু জাগো নিউজকে বলেন, ইউনাইটেড বাসসহ বিভিন্ন বাস আগের দিনগুলোর মতো যথাসময়ে যাত্রীদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে বাস সংকট হবে না। কোনো চালক বাড়তি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) আবু নাছের মো. জহির জাগো নিউজকে বলেন, শনিবার নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্য বেশি থাকবে। তারা অন্যান্য দিনগুলোর মতোই দ্বায়িত্ব পালন করবেন। ময়মনসিংহের সড়কগুলোতে যানজট বেশি থাকার সম্ভবনা নেই। তবে যানজট সৃষ্টি হলে যাত্রীদের ভোগান্তি এড়াতে যানজট দ্রুত নিরসন করতে চেষ্টা চালানো হবে।

শনিবার (১৯ জুলাই) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ আয়োজন করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নেতাদের দাবি, স্বাধীনতার পর বিগত ৫৪ বছরে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার হারিয়েছে দলের নেতারা। ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাকস্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করতে পারছেন। এখন জাতীয় সমাবেশ আয়োজনের সুযোগ পেয়েছেন। এটি হবে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জমায়েত। সমাবেশে অংশ নেবেন ১০ লাখের বেশি নেতাকর্মী। সমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যে ট্রেন ও লঞ্চ বাদ দিয়ে সারাদেশে ভাড়া করা হয়েছে ১০ হাজারের মতো বাস। শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবে।

৭ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ জাতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দাবিগুলো হলো- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, সকল গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং এক কোটিরও বেশি প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থার করা।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এমএন/জিকেএস