দেশজুড়ে

প্রতিহিংসার আগুনে ছারখার নারায়ণগঞ্জের জিয়া হল

নারায়ণগঞ্জে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে একমাত্র স্থাপনা শহীদ জিয়া হল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে এই স্থাপনাটি প্রতিহিংসার শিকার হয়ে এসেছে। শেষ পর্যন্ত এই স্থাপনাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সেইসঙ্গে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে দিয়ে এটাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ারও চিন্তা করা হয়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সফল হতে পারেনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তার আগেই তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। বর্তমানে এই স্থাপনাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি, এই স্থাপনাকে যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়। সেইসঙ্গে আগামী দিনে তারা ক্ষমতায় এলে এটির আধুনিকায়ন করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, মঞ্চ, চেয়ার কোনো কিছুই অক্ষত নেই। সিলিং ভেঙে পড়েছে, খসে পড়েছে দেওয়ালের পলেস্তারা। দেওয়ালে জন্মানো গাছের শিকড় ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে কাঠামো। সিঁড়িতেও জন্মেছে গাছ। ছাদে পানি পড়ে শ্যাওলা জন্মেছে। দিনের আলোতেও প্রবেশ করতে ভয় লাগবে এখানে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৯৮১ সালে নির্মাণের পর দ্বিতল বিশিষ্ট এই শহীদ জিয়া হল হয়ে উঠেছিল জেলাবাসীর সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম কেন্দ্র। মঞ্চনাটক, যাত্রাপালা, আবৃত্তিসহ রকমারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো হলটিতে। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর হলটিতে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সেইসঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রাখায় ভেতরের বিভিন্ন আসবাব খুলে নিয়ে যায় মাদকসেবী ও চোরেরা। ২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণার পর দরজা, জানালা এমনকি গ্রিলও কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। সবশেষ এই হল ভেঙে বহুতল মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেও নতুন নামকরণ নিয়ে ঝামেলা থাকায় শেষ পর্যন্ত সংস্কার করা সম্ভব হয়নি।

তবে পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও হলের ছাদে দৃশ্যমান ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল। কিন্তু ২০২৩ সালের এপ্রিলে রাতের আঁধারে আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অনুসারীদের বিরুদ্ধে ম্যুরালটিও ভেঙে ফেলার অভিযোগ ওঠে।

চারুগঞ্জ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ঐকিক থিয়েটারের সদস্য আহমেদুর রহমান তনু বলেন, অতি দ্রুত জিয়া হলকে সরকারি উদ্যোগে সংস্কার অথবা পুনর্নির্মাণ করা দরকার। নারায়ণগঞ্জ শহরে তেমন কোনো হল নেই। সব অনুষ্ঠানের চাপ পড়ে শহীদ মিনারে। একটি নগরীতে টাউন হলে যেসব সুবিধা থাকা দরকার, তা যুক্ত করে দ্রুত জিয়া হল প্রস্তুত করা প্রয়োজন।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের গডফাদার জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীকে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করার কারণে তারা সেই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তার প্রতিকৃতি রাতের আঁধারে ভেঙে দিয়েছিল। আমরা প্রতিবাদ করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে আহ্বান করবো অতি শিগগিরই জিয়া হলের কমিটি গঠন করে নতুন করে নির্মাণ করা হোক। নারায়ণগঞ্জে পর্যাপ্ত অডিটরিয়াম নেই। সেখানে আধুনিক অডিটরিয়াম নির্মাণসহ মানুষের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা হোক।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, শহীদ জিয়া হল আমাদের আবেগের স্থাপনা। এই স্থাপনা নিয়ে গত সরকারের আমলে অনেক চক্রান্ত হয়েছে। এই স্থাপনাটিকে ভেঙে ফেলার জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগের এমপি গডফাদার শামীম ওসমান সংসদে ভাষণ দিয়েছিল। অনেক চেষ্টা করেছে এই স্থাপনাটিকে ভেঙে মার্কেট নির্মাণ করে দখল করার জন্য। আমরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করে এই স্থাপনাটিকে রক্ষা করতে পারছি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন প্রাথমিকভাবে এই স্থাপনাটিকে মেরামত করে এটাকে ব্যবহার উপযোগী করা হোক। এর বাইরে আমাদের অভিপ্রায় রয়েছে, আমরা যদি সরকারে আসতে পারি তাহলে এক বছরের মধ্যে পুনঃনির্মাণ করা হবে আমাদের এজেন্ডা। এখানে সব ধরনের ব্যবস্থা রেখে বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে স্থাপনা করা হবে। এখানে সব রকমের সুযোগ সুবিধা থাকবে যা সাধারণ মানুষ সম্মিলিতভাবে ভোগ করতে পারবে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমরা এ বিষয়টা নিয়ে দেখছি কীভাবে কী করা যায়। এই স্থাপনার একটি কমিটি রয়েছে। তারাই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

এফএ/এমএস