জাতীয়

শিগগির আরও ১৭৬৯ জন জুলাই যোদ্ধার গেজেট

তিন ক্যাটাগরির আহত আরও এক হাজার ৭৬৯ জন জুলাই যোদ্ধার গেজেট শিগগির জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।

সোমবার (২১ জুলাই) সচিবালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ কথা জানান।

তিনি বলেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ হতে ‘ক’ শ্রেণির ১১৪ জন, ‘খ’ শ্রেণির ২১৩ জন এবং ‘গ’ শ্রেণির এক হাজার ৪৪২ জনসহ সর্বমোট এক হাজার ৭৬৯ জনের তালিকা পাওয়া গেছে, যা যাচাই-বাছাই শেষে শিগগির গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্তকরণ, আহতদের চিকিৎসা ব্যয় এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাসহ পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনে গত ২৮ এপ্রিল ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠন করা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে সরকার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুর্নবাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী গত ১৫ জানুয়ারি ৮৩৪ জন এবং গত ৩০ জুন আরও ১০ জনসহ মোট ৮৪৪ জন শহীদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে প্রকাশ করে। আহত হওয়ার ধরন অনুসারে জুলাই যোদ্ধাদের তিনটি শ্রেণিভুক্ত করে ৪৯৩ জন জুলাই যোদ্ধাকে ক-শ্রেণিতে, ৯০৮ জনকে খ-শ্রেণিতে, ১০ হাজার ৬৪২ জনকে গ-শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয় বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা।

বিধিমালা অনুযায়ী সরকার প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের আকারে এককালীন ৩০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৭৭২টি শহীদ পরিবারের প্রত্যেক পরিবারকে (স্বামী বা স্ত্রী, ঔরসজাত বা গর্ভজাত সন্তান/মাতা ও পিতা) উত্তরাধিকার আইন অনুসারে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। মোট ৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সঞ্চপত্র হয়েছে। অবশিষ্ট ৭২টি শহীদ পরিবারের মধ্যে পারিবারিক ও ওয়ারিশগত জটিলতা নিরসন করে সঞ্চয়পত্র প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান। শহীদ পরিবারের এককালীন অনুদানের অবশিষ্ট ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে দেওয়া হবে। এছাড়া বিধিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক শহীদ পরিবার মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন।

ফারুক ই আজম জানান, বিধিমালা অনুযায়ী, ক-শ্রেণির (অতি গুরুতর আহত) আহতরা এককালীন ৫ লাখ টাকা পাচ্ছেন। এরই মধ্যে তাদের ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বাকি ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এরা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। খ-শ্রেণির (গুরুতর আহত) আহতরা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন। গত অর্থবছরে তাদের এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি ২ লাখ টাকা চলতি অর্থবছরে দেওয়া হবে। তারা মাসিক ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। গ-শ্রেণির আহতদের এককালীন এক লাখ টাকা দেওয়া হবে। এরই মধ্যে এ টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তারা প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।

এককালীন অনুদান আকারে সরকার এ পর্যন্ত ২০২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুসারে গত ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ৭৫ জুলাই যোদ্ধাকে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরুস্ক ও রাশিয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ৪৬ জন জুলাই যোদ্ধা চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। আরও ৩২ জন জুলাই যোদ্ধা উন্নত চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমান আছেন। জুলাই যোদ্ধাদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার এ পর্যন্ত ৭৮ কোটি ৫২ লাখ ১৫ হাজার ৮৮২ টাকা ব্যয় করেছে।

ফারুক ই আজম বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আহত জুলাই যোদ্ধাদের বিদেশে চিকিৎসা, শহীদ পরিবারের অনুকূলে পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং আহতদের অনুকূলে এককালীন অনুদান বাবদ সর্বমোট ২৫৯ কোটি ৬৮ লাখ ৪ হাজার ২১২ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

বিধিমালা অনুযায়ী শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত ব্যক্তির কর্মসংস্থানের জন্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক উপার্জনমুখী কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শহীদ পরিবার এবং আহত জুলাই যোদ্ধাদের ভাতা কার্যক্রম অনলাইনে প্রদান এবং সমৃদ্ধ তথ্য ভান্ডারের জন্য ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) তৈরির কার্যক্রম চলমান আছে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।

আরএমএম/ইএ/এমএস