আইন-আদালত

বাংলাদেশটারই কোনো লাইফ নেই: আদালতে বিচারক

বাংলাদেশটারই কোনো লাইফ নেই: আদালতে বিচারক

বাংলাদেশ সচিবালয়ে ঢুকে ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন ও স্বেচ্ছায় আঘাত করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তারা হলেন- আশিকুর রহমান তানভীর (১৯), জেফরী অভিষেক সিকদার (২১), আবু সফিয়ান (২১) ও মো. শাকিল মিয়া (১৯)।

Advertisement

এদিন আদালতে শুনানির সময় বিচারক বলেন, বাংলাদেশটারই কোনো লাইফ নেই। অলরেডি পুরো দেশটাই এখন লাইফ সাপোর্টে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামসেদ আলম এ মন্তব্য করেন।

দুপুর ২টা ২০ মিনিটে আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের কারাগারে রাখার আবেদন করেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন করেন।

Advertisement

জেফরি অভিষেক শিকদার ও শাকিল মিয়ার আইনজীবী সালাহউদ্দিন খান বলেন, আসামিরা অনেক মেধাবী ছাত্র। সামনে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। সচিবালয়ে তারা আবেগে পড়ে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে হয়তো তারা অনেক কিছুই করে ফেলেছে। মামলার এজাহার ও কারাগারে আটক রাখার আবেদন একই। আসামি শাকিল মিয়া আগামী রোববার দনিয়া কলেজে পরীক্ষা দেবেন। তারা ইমোশনাল হয়ে ওখানে গিয়েছিলেন। আপনি চাইলে আসামিদের ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবেন।

তানভীরের আইনজীবী বলেন, ‘সে দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থী। এইচএসসি পরীক্ষার্থী।’ পরে বিচারক বলেন, ‘আরেকজনের আইনজীবী আছে?’ তখন আবু সুফিয়ানের আইনজীবী তাহমিনা আক্তার লিজা বলেন, ‘আমি আবু সুফিয়ানের পক্ষে আছি। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের রানিং শিক্ষার্থী। তাকে কারাগারে পাঠানো হলে তার লাইফটা খারাপের দিকে যেতে পারে। তিনি ইমোশনাল হয়ে সচিবালয়ে গিয়েছেন।’

এরপর রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন আসামিদের জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘আসামিরা সবাই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা কেউও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নয়। তারা সচিবালয় ঢুকে প্রথম সারিতে থেকে ভাঙচুর করেছে। আসামিরা দেশটাকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কারা ব্যবহার করছে তা রাষ্ট্রের জানা উচিত। কারা সচিবালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় অর্থজোগান দিচ্ছে এবং দেশের মধ্যে থেকে যড়যন্ত্রের সঙ্গে আরও জড়িত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক রাখা প্রয়োজন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরবর্তীতে এসব আসামিদের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করতে পারেন। আসামিদের জামিনের তীব্র বিরোধিতা করছি।’

পরে বিচারক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কে? তুমি সেখানে কেন গেলে?’ তখন আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি সচিবালয়ে যাইনি।’

Advertisement

আদালত বলেন, ‘যদি না থাকো তাহলে তোমাদের ধরলো কেন?’ তখন আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি বাইরে ছিলাম। সচিবালয়ের ভেতরে যাইনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাত্রাবাড়ী যাওয়ার সময় আমাকে ধরছে। আমি জুলাই আন্দোলনে বিজয় একাত্তর হলে সহ-সমন্বয়ক ছিলাম। আমি জীবনেও ছাত্রলীগ করিনি।’

তখন বিচারক বলেন, ‘কোথায় কারে কীভাবে ধরে নিয়ে আসছে। এখন অসুবিধা হচ্ছে, আমাদের ভেতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। জুলাই আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছে। তারা এখন ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে? জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়াদেরও লাইফ অলরেডি শেষ হয়েছে।’

আরও পড়ুন:

সচিবালয়ে ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাগারে ৪  সচিবালয়ে হামলা-ভাঙচুর, ১২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা 

এরপর বিচারক আরও বলেন, ‘আমাদের দেশটার ১২ আনা অলরেডি শেষ। ওদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, ওরা কি আর চাকরি পাবে? এত এত গোল্ডেন এ+ দিয়ে কী হবে? ওদের সিডিএমএস কি ঠিক হবে? ওদের লাইফ তো অলরেডি শেষ। যেখানে বাংলাদেশটারই কোনো লাইফ নেই। অলরেডি পুরো দেশটাই এখন লাইফ সাপোর্টে।’

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কথা বলা শুরু করতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবীর বাধার মুখে আদালতে হট্টগোলের শুরু হয়। এসময় বিচারক বলেন, ‘আপনারা হট্টগোল করলে আমি নেমে যাই। উনিতো ব্যক্তিগত কাজ করছে না। ওনাকে বাধা দিচ্ছেন কেন? তিনি রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলে কয় টাকা পান। আপনারা তো আরও বেশি টাকা পান।’

এরপর বিচারক বলেন, ‘দেশে মোটামুটি ল-ইন অর্ডার না নেই বললেই চলে। যদি রাষ্ট্র-ই না থাকে তাহলে ওদের সার্টিফিকেট দেবে কে? সচিবালয় হচ্ছে রাষ্ট্রের মাথা। মাথাই যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে তো বডির কোনো দাম থাকে না। আমাদের রাষ্ট্র একটি ট্রানজিকশন পিরিয়ডে আছে। ইউনূস সাহেব চেষ্টা করছেন। ভালো হচ্ছে না মন্দ হচ্ছে আমরা বলতে চাই না। আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসন দেখেছি। এভাবে চলতে থাকলে সামনে হয়তো জামায়াতের শাসনও আমাদের দেখতে হতে পারে। মূলত একটা রাষ্ট্র ঠিক হতে তিনটা প্রজন্ম লাগে। আমাদের প্রজন্ম ভালো রাষ্ট্র দেখবে না। আমাদের সন্তানদের প্রজন্ম হয়তো দেখবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেন। বর্তমানে সব পচে যায় নাই। এখনো কিছু আছে। এভাবে যেতে যেতে একসময় হয়তো ভালো রাষ্ট্র দেখবো।’

এরপর বিচারক আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এমআইএন/এসএনআর/এমএস