জাতীয়

‘দুর্ঘটনার স্মৃতি মনে পড়ে আঁতকে ওঠে, হাউমাউ করে কাঁদে’

‘দুর্ঘটনার স্মৃতি মনে পড়ে আঁতকে ওঠে, হাউমাউ করে কাঁদে’

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় আহত হন শিক্ষার্থী রাফসান (ছদ্মনাম)। বয়স ১৮ ছুঁই ছুঁই। কলেজের প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থীকে দুর্ঘটনার স্মৃতি তাড়া করে ফিরছে। সৌভাগ্যক্রমে এই শিক্ষার্থী খুব বেশি দগ্ধ না হলেও মারাত্মক ট্রমায় ভুগছেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে তাকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি এই শিক্ষার্থী সেদিনের সেই বিমান দুর্ঘটনার স্মৃতি মনে করে ক্ষণে ক্ষণে আঁতকে উঠছেন। কখনো ফ্যাল ফ্যাল করে হতবিহ্বল দৃষ্টিতে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছেন। কখনো বা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। চিকিৎসকরা তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করছেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একজন দায়িত্বশীল চিকিৎসক এ তথ্য জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই চিকিৎসক জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এই শিক্ষার্থী অ্যাকিউট স্ট্রেস রি-অ্যাকশনে (তাদের ভাষায়) ভুগছে। বিমান দুর্ঘটনার সেদিনের স্মৃতি মনে করে সে ক্ষণে ক্ষণে আঁতকে উঠছে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে। কখনো কান্না করছে। তার চোখে ঘুম নেই।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় এই শিক্ষার্থী খুব বেশি দগ্ধ না হলেও তার মনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

ইতিপূর্বে একাধিক মনোরোগ চিকিৎসক এ ধরনের দুর্ঘটনার পরবর্তী প্রভাব প্রসঙ্গে বলেন, যে কোনো অনভিপ্রেত ও আকস্মিক দুর্ঘটনা, দুর্যোগ, আঘাত কিংবা বিপর্যয় মানুষের চিন্তাজগৎকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়, মনে চাপ ও কষ্টের সৃষ্টি করে। কারও কারও ক্ষেত্রে এই প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়ে জীবনযাপনকে ব্যাহত করে এবং মানসিক রোগের পর্যায়ে চলে যায়।

দুর্ঘটনার ধরন, তীব্রতা ও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যক্তিগত দক্ষতার ওপর রোগীর কমবেশি মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে তারা জানান। বিপর্যয় পরবর্তী মানসিক চাপজনিত এ রোগকে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডারও (পিটিএসডি) বলা হয়ে থাকে। পিটিএসডিতে আক্রান্ত ব্যক্তির মনে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় বা আঘাতের দৃশ্য বারবার ফিরে আসে। ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো শব্দ, দৃশ্য বা আলোচনা ব্যক্তির মনে সে স্মৃতি জাগিয়ে তোলে।

মনোরোগ চিকিৎসকরা জানান, ওই ব্যক্তি একই রকম ভয়, আতঙ্ক ও ও বেদনা অনুভব করেন যেমন অনুভূতি হয়েছিল প্রকৃত ঘটনার সময়। রাতে দুঃস্বপ্নেও হানা দেয় সেই স্মৃতি। বেদনাদায়ক পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিতে পারে বিধায় অনেকে এ ধরনের ঘটনা বা আলোচনা এড়িয়ে চলেন। লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা কমিয়ে দেন। নিজের আবেগ-অনুভূতিও যেন প্রকাশ করতে পারেন না।

অনেকে আবার ভয়াবহ ঘটনাটির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভুলে যান অজান্তেই। কেউ আবার হয়ে পড়েন অস্থিরচিত্ত, উদ্বিগ্ন, উত্তেজিত বিপদ আশঙ্কায় মাত্রাতিরক্ত সতর্ক। কারও কাজে মনোযোগ কমে যায়। শারীরিক নানা সমস্যা যেমন মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, বুক ধরফর, হাত-পা কাঁপা ও খাওয়ায় অরুচি প্রভৃতি দেখা দেয় বলে তারা জানান।

Advertisement

এমইউ/বিএ/জিকেএস