চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নমান সহকারী মো. এমরান হোসেন ছিলেন ছাত্রলীগ কর্মী। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন থেকে ৫৮ লাখ টাকা নিলেও চাকরি দিতে পারেনি। পরে ইয়াসমিনের টাকা ফেরত না দিলে টাকা উদ্ধারে সহযোগিতার আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনের অনুসারী আহসান হাবিব।
জানা যায়, আহসান হাবীব সামনে থাকলেও প্রতারক এমরানের পক্ষ নিয়ে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেন খোদ চবি ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন। ছাত্রদল নেতা আহসান হাবিব টাকা উদ্ধার করে না দিয়ে উলটো ভুক্তভোগী ইয়াসমিনের ৩ লাখ টাকার ব্যাংক চেক আত্মসাৎ করেন। তিনি চেক ফেরত না দিয়ে বরং হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাবেক উপাচার্য শিরীণ আখতারের সময় ১৫ জনকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে ইয়াসমিন থেকে ৫৮ লাখ টাকা নগদ গ্রহণ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী এমরান হোসাইন। কিন্তু শিরীণের উপাচার্য পদ চলে যাওয়ায় আর চাকরি দিতে পারেননি। এরপর থেকে টাকা ফেরত চেয়ে ঘুরছেন ইয়াসমিন। কিন্তু দুই বছর পার হলেও টাকা ফেরত পাননি তিনি। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর ছাত্রদল নেতা আহসান হাবিব টাকা পেতে সাহায্য করবেন বলে জানান।
এ বছরের ৬ জানুয়ারি এমরান হাবিবের মধ্যস্থতায় ইয়াসমিনকে পাওনা টাকার ১০ লাখ টাকা প্রদান করবে বলে জানায়। সেদিন সন্ধ্যায় তাকে হাটহাজারী হোটেল জামানে যেতে বলা হয়। হোটেলে গেলে দেখেন প্রতারক এমরানের হয়ে কথা বলতে এসেছেন চবি ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও ৩০-৪০ জন ছাত্রদল কর্মী। তারা টাকা কম নিতে চাপাচাপি করলে ইয়াসমিন সেখান থেকে চলে আসেন। কিছুদিন পর ছাত্রদল সভাপতি মহসিনসহ টাকা উদ্ধার করবে বলে ১৫ লাখ ও তিন লাখ টাকার দুটি ব্যাংক চেক হাবিবকে দেন ইয়াসমিন। এরপর টাকা উদ্ধার না করে উলটো যোগাযোগ অফ করে দেন ছাত্রদলের ওই নেতা। পরে ১৫ লাখ টাকার চেক ফেরত দিলেও তিন লাখ টাকার চেক এখন ফেরত দেননি তিনি।
এ নিয়ে বুধবার (২৪ জুলাই) ভুক্তভোগী ওই নারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে লিখিতভাবে একটি অভিযোগ জমা দেন।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ২৫ মার্চ রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারী মো. এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে এমরান সাময়িক বরখাস্ত হন। ওই ঘটনার কিছুদিন আগে চবি ছাত্রদল কর্মী আহসান হাবিব তার টাকা উদ্ধারে সহযোগিতা করার কথা বলে দুটি চেক নেন। একটি ১৫ লাখ ও অপরটি তিন লাখ টাকার। পরে ১৫ লাখ টাকার একটি চেক ফেরত দিলেও তিন লাখ টাকার চেকটি আর ফেরত দেননি। চেক ফেরত চাইলে হাবিব শুরুতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন এবং একপর্যায়ে জানিয়ে দেন, তিনি ওই চেক ফেরত দেবেন না।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ইয়াসমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাবীব আমাকে টাকা ফেরত দিবে বলে হাটহাজারীর হোটেল জামানের ৪র্থ তালায় নিয়ে যান। সেখানে ইমরানের পক্ষ হয়ে চবি ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনসহ বেশ কয়েকজন আসেন। তারা আমাকে ১৫ লাখ টাকা নেওয়ার ব্যাপারে জোর জবরদস্তি করেন। হাবীব জানান আমার পাওনা টাকা তিন ভাগে ভাগ হবে। এক ভাগ আমি পাবো, বাকি অংশ অন্যদের মাঝে ভাগ হবে। আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হইনি। ছাত্রদলের সভাপতি মহসিন ইমরানের কাছ থেকে একবার পাঁচ হাজার এবং সাত হাজার টাকা নিয়েছে বলে জানান হাবীব। এরপর হাবিব টাকা উদ্ধার করবে বলে দুটো চেক নিলেও ৩ লাখ টাকার চেক ফেরত দেয়নি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আহসান হাবীব জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাবিনা ইয়াছমিন এবং ইমরানসহ একটা চক্র রয়েছে যারা চাকরি দেওয়ার নাম করে মানুষদের থেকে টাকা নেয়। তাদের দুজনের মাঝে টাকা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ নিয়ে এসেছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট।’
তিনি আরও বলেন, ‘জামান হোটেলে ইমরান আর সাবিনার মাঝে দ্বন্দ্ব চলছিল। স্থানীয়রা জানতে পেয়ে আমাদের খবর দেয়। কেননা বিএনপির পার্টি অফিস সেখানে। এরপর বিষয়টি নিয়ে সিনিয়ররা চবি ছাত্রদলের সভাপতি মহসিনসহ বেশকিছু লোক সেখানে যায় সমাধান করার জন্য। ইমরানের থেকে মহসিন ভাই টাকা নিয়েছে এটা মিথ্যা কথা। রাজনৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এসব বলেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চবি ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনকে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ফোন এবং ম্যাসেজ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগটা আমরা পেয়েছি। তবে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাওয়া যায় না। এখানে একটা প্রসিকিউটর মেনটেইন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে বোর্ড অব হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারির সভা করে তদন্ত করার জন্য একটা কমিটি গঠন করতে হবে। এককভাবে তদন্ত করার কোনো নিয়ম নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তার বিপরীতে একটা সফট কপি পেয়েছি, হার্ড কপি কার কাছে আছে জানি না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনিও মিথ্যা অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে একটা আবেদন করেছেন।’
সোহেল রানা/আরএইচ/এমএস