ভোটকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনও আশানুরূপ উন্নতি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিক অধিকার দিয়ে নির্বাচন বানচালের যে কোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সাহসী ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন বিএনপির এই নেতা। সেই সঙ্গে বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যথাযথ পদক্ষেপও আশা করেন তিনি।
রোববার (২৭ জুলঅই) নির্বাচন কমিশনে ২০২৪ সালের দলের আয়-ব্যয়ের ‘অডিট রিপোর্ট’ জমা দেওয়ার পর একথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।
আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনকে সরকারের অনুগত ও শেখ হাসিনার পদলেহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল অভিযোগ করে এ বিএনপির এই নেতা জানান, সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা হারিয়ে গিয়েছিল। অনেকটা ফ্যাসিবাদী অস্ত্রের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছিল ইসি। দলান্ধ লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
তার ভাষায়, তৎকালীন ইসি নির্বাচন কমিশনে তার যে কর্তৃত্ব, রাজনৈতিক দলের ওপর এবং রাজনৈতিক দল কীভাবে চলছে এবং তারা কী অবস্থায় আছে সেটা, তার যে অভিভাবকত্ব সেই অভিভাবকত্বও করতে পারেননি। মেরুদণ্ডহীন, চাকরিলোভী লোকদের দিয়ে ইসি গঠন করা হয়েছিল। জনগণ দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেনি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে একেবারে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
রিজভী বলেন, আমাদের প্রত্যাশা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি। দেশের মানুষের প্রত্যাশা জনগণের প্রত্যাশা- বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে এবং অবাধ সুষ্ঠু, ইনক্লুসিভ নির্বাচন আয়োজনের জন্য যাবতীয় যে কাজগুলো করা দরকার সেই কাজগুলো তারা করবেন।
স্বাধীন ইসির ভূমিকা চায় বিএনপি।
সংবিধানে নির্বাচন কমিশনের যে স্বাধীনতা, তাদের স্বাধীন যে অধিকার দেওয়া আছে সেই অধিকার দিয়ে, সেই স্বাধীন বিধানগুলো প্রয়োগ করে নির্বাচনকে বানচাল করার অথবা নির্বাচনকে নিয়ে যে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সাহসী ভূমিকা রাখবে বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিশ্বাস করে। এ মন্তব্য করেন বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও আশানুরূপ না হলেও দ্রুত এর উন্নতি ঘটবে বলে প্রত্যাশা এ বিএনপি নেতার।
তিনি বলেন, মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো অনেক কিছু এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ততটা উন্নত হয়নি। কিন্তু তারপরেও মানুষের মধ্যে যে আশা জেগে উঠেছে যে, কমপক্ষে শেখ হাসিনার দুর্বৃত্তপরায়ণ কোনো প্রশাসনের দ্বারা অথবা তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা এখানকার গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আর নিপীড়নের শিকার হবে না। সেক্ষেত্রে গণতন্ত্রের যাত্রা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে ইসি গুরুদায়িত্ব পালন করবেন। সব রাজনৈতিক দল ও মানুষের কাছে একটি আস্থার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গড়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা করি।
বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ভোট বানচালের শঙ্কা বা নির্বাচন সম্ভব কি না দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রিজভী জানান, যারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছিল, সেইসব দোসসরা তো বসে নেই। তারা নানাভাবে, নানা কায়দায় চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এ সব বিষয়গুলোকে আইডেন্টিফাই করে যেন কোনো রকমে নির্বাচনবিরোধী কোনো শক্তি কোনো ধরনের চক্রান্ত করতে না পারে সেটা তো দেখার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। তারা সে কাজটি করবেন। যে সময় রয়েছে, সে সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা বলেছি সবসময়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দলগুলোর সমর্থন আস্থা রয়েছে। সে আস্থার সঠিক ও ইতিবাচক কাজ প্রদর্শন করবেন, যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়। যাতে কোনো ভোটার ভয় না পান, ভোটেকেন্দ্রে গেলে আশঙ্কা, ভয়ভীতি থাকতে পারে- এসব নিরসনের দায়িত্ব সরকারের। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে ইসির ক্ষমতা সংবিধানে রয়েছে, স্বাধীনতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আরও বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে শঙ্কা ও ভয় দূরীভূত হবে।
এমএইচসি/এএমএ/এমএস