রাজনীতি

ক্ষমতায় আসার স্বপ্নেই বিএনপির বছর পার

গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এমটাই বিশ্বাস ছিল দলের নেতকর্মীদের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন দিয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতা নেয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায় ​বিদায়ি বছরে।নির্বাচন পরবর্তীতে সরকারের বিরুদ্ধে তুমূূল আন্দােলন হওয়ার আশঙ্কাও ভুল প্রমাণিত হয়। সব মিলিয়ে ২০১৪ সাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কাছে বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণীয়।৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রথমবারের মতো এ বছরের শুরুতেই সংসদের বাইরে ছিটকে পড়ে বিএনপি।রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন এবং তা প্রতিহত করতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্ট সহিংসতায় সাধারন নাগরিক, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য এবং আন্দোলনকারীরা প্রাণ হারায়।অনির্দিষ্ট আন্দোলনের সমাপ্তি টানার পর বিএনপি চেয়ারপারসন গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে ১৫ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখান থেকে তিনি নতুন ধারার রাজনীতির ঘোষণা দেন। দলগুছিয়ে ফের আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলেন।দলীয় সরকার এবং নির্বাচন কমিশন অযুহাতে সংসদ নির্বাচনে না গেলেও উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তে বিএনপির মধ্যে বির্তকের সৃষ্টি হয়। ফলে দল গোছানোর প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে দলটি।প্রথমে জেলার কিছু কমিটি বিলুপ্তি করে ঢাকা থেকে কমিটি দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনে ব্যর্থ ঢাকা মহানগরকে চিহ্নিত করে প্রথমে সেখানে পুনর্গঠণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। নগরের নতুন আহবায়ক মির্জা আব্বাস আর সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এর সম্পর্কে প্রবল ঘাটতির ফলে এখনও পর্যন্ত নগর কমিটি অগোছালো।এখনও বিএনপি তাদের যোগ্য মহাসচিব ঠিক করতে পারে নাই। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিও বিধ্বস্ত।আন্দোলনকারীরা যারা নিহত-আহত-নিখোঁজ হয়েছে তাদের স্বজনদের দলের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সহয়তা দেয়া হচ্ছে না। গুম প্রতিরোধে গ্রুপ ভিত্তিক বিভিন্ন নির্দেশনা দেন খালেদা জিয়া।জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নতুন কমিটি নিয়ে সংর্ঘষ, বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ি বহরে হামলা, কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধের ঘটনা বিএনপিকে এলোমেলো করে দিয়েছে।বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনেসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কমিটি গঠন নিয়ে অভিযোগ তুলে ঝাড়ু ও জুতা প্রদর্শণ করে বিক্ষোভের ঘটনা দলটিকে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলে। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের পাল্টাপাল্টি কমিটি বিএনপি দল গোছানোর প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।বিএনপি জোট ভাঙ্গন, অন্যতম মিত্র শক্তি জামায়াতের সঙ্গে টানাপোড়েন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি অসহায়ত্ব দেখিয়েছে। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় তার মৃত্যুতে শোক জানায়নি বিএনপি। তবে গয়েশ্বর রায় ব্যক্তিগতভাবে শোক প্রকাশ করেন।নারায়াণগঞ্জের আলোচিত ৭ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিএনপি রাজনৈতিক সুবিধা নিতে না পারলেও খানিকটা বিব্রত হতে হয়েছে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে।এ হত্যাকান্ডের ঘটনার পর তার সরকারের আমলে সৃষ্ট র‌্যাবকে তিনিই বিলুপ্তির দাবি করেছেন। তাছাড়া তিনি যেসব র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তার একজনের নাম ‘জিয়া’ এবং আরেকজনের নাম ‘তারেক’। দল গোছানোর অযুহাতে এ বছর সরকার বিরোধী বৃহৎ কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। চলতি বছর নাম মাত্র একটি হরতাল আর কয়েকটি সমাবেশ করে বছর পার করেছে দলটি। ঢাকার বাইরের সমাবেশ গুলোতে জনসম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা গেলেও নিজেদের কোন্দলে সে ফল বিএনপির ভোগ্য হয়ে উঠছে না।তবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে বিএনপির তীব্র হুঙ্কার আন্দোলনের হুঙ্কার রয়েছে। বছরের মধ্য সময়ে গ্রেফতার আতঙ্কে তাড়া করে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, তার গ্রেফতারের ভয় নাই। দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মামলা বিএনপিকে অর্ধঅঙ্গ করে দিয়েছে।প্রতিবেশী দেশের সরকার পরিবর্তনে বিএনপি শিবিরে উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও কয়েক মাসের মধ্যে তা বিলীন হয়ে যায়। বর্তমান সরকারের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতা নেই দাবি করলেও অন্তত দুটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রধান হিসেবে সরকারের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। বিএনপির কূটনৈতিক টিমে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে। যে যার মতো করে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে জিয়াউর রহমান ওয়ে উদ্ধোধন এই টিমের সবচেয়ে বড় অর্জন।বছরের শেষ দিকে এসে বৈঠক বিতর্কে কাচুমাচু হয়ে যায় বিএনপি। ওএসডি থাকা এবং সাবেক সচিবদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের খবর ফাঁস হয়।বছরের শুরু থেকে মাঝে মধ্যে লন্ডন থেকে তারেক রহমান শব্দ বোমা ছুড়লেও শেষ দিকে যা বলেছেন তাতে দেশের রাজনীতি প্রচন্ড রকমের উত্তপ্ত হয়। এতে রাজনীতি করছেন এমন মুক্তিযোদ্ধারা মারাত্মক আহত হয়।প্রথমে নিজের বাবাকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে প্রতিপক্ষের হিংসার অনলে দগ্ধ হতে হয় তারেককে। আর শেষে বঙ্গবন্ধুকে পাকবন্ধু আখ্যা দিয়ে বঙ্গবন্ধু ভক্তদের আহত করেন তারেক রহমান।তবে তারেক তার সমালোচনার জবাবে বিবৃতিতে যা বোঝাতে চেয়েছেন, তা হলো তার বাবাকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে স্বীকার না করে আইএসআইর চরসহ বিভিন্ন ভাবে যে অপপ্রচার করা হচ্ছে তার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিনিও অপপ্রচার কৌশল অবলম্বন করছেন।তারেক রহমান তার বিবৃতিতে বলেছেন, আওয়ামী লীগই আগে অপপ্রচার শুরু করেছে। তাদেরই আগে অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। এদিকে আ.লীগ টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর কয়েকটি পরাশক্তি তাদেরকে সমর্থন দেয়। ফলে বিদেশীদের অন্ধ সমর্থন পাওয়ার স্পন্নটি বিএনপির জন্য দু:স্বপ্ন হয়ে যায়।