আইন-আদালত

আবু সাঈদ হত্যাসহ লাশ পোড়ানোর মামলায় ১৭ আসামি ট্রাইব্যুনালে

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ও সাভারের আশুলিয়ায় ৬ মরদেহ পোড়ানোর মামলায় মোট ১৭ আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।

সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরের কাশেমপুর থেকে প্রিজন ভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। প্রসিকিউশন বলছে, তারা সব আসামির বিচার শুরুর আবেদন জানাবেন।

এর আগে গত ২২ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক ভিসি ও রংপুরের সাবেক পুলিশ কমিশনারসহ ২৪ জনকে পলাতক ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

সবশেষ সোমবার আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

গত বছরের ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশে গুলিতে শহীদ হন বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। গত ৩০ জুন আলোচিত এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ওইদিন ৩০ আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

৬ লাশ পোড়ানোর মামলা

জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সাভারের আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পলাতক আট আসামিকে হাজির হতে পত্রিকায় দুটি বিজ্ঞপ্তি (একটি ইংরেজি ও একটি বাংলা) প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আসামিরা হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতে বিচার কাজ শুরু হবে।

একই সঙ্গে আট আসামির বিষয়ে অগ্রগতি জানানো এবং মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আজ ২৮ জুলাই দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।

গত ১৬ জুলাই ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য হলেন, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

এর আগে এদিন আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় গ্রেফতার আট আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

গত ২ জুলাই জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সাভারের আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে পলাতক আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এছাড়া গ্রেফতার আট আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করে পরবর্তী তারিখে আদালতে উপস্থিত করতে বলা হয়েছে। এরপর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করা হয়। আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকউটর গাজী এমএইচ তামিম।

ট্রাইব্যুনালে এ মামলায় ১১ আসামির নাম উল্লেখ করে প্রসিকিউশন। তারা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফি, আশুলিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ (রনি), ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, সাবেক উপপরিদর্শক আরাফাত উদ্দীন, সাবেক উপপরিদর্শক শেখ আবজালুল হক, সাবেক উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সাহা, সাবেক উপপরিদর্শক কামরুল হাসান ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। এই ১১ আসামির মধ্যে আটজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় যারা শহীদ হয়েছেন তারা হলেন, সাজ্জাদ হোসেন (সজল), আস সাবুর, তানজীল মাহমুদ সুজয়, বায়েজিদ বুসতামি ও আবুল হোসেন। এছাড়া একজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি (অজ্ঞাত)।

এফএইচ/এসএনআর/জিকেএস