অর্থনীতি

জুনে এলসি খোলার পরিমাণ তলানিতে, কমেছে নিষ্পত্তিও

বেসরকারি বিনিয়োগ ও ভোগব্যয় কমে যাওয়ার প্রভাবে চলতি বছরের জুন মাসে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ গত ৫৮ মাসে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই মাসে এলসি খোলা হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের, যা গত অর্থবছরের জুনের তুলনায় প্রায় ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশ কম।

বিশ্লেষকদের মতে, কোভিড-১৯ মহামারির সময়ের চেয়েও এবার পরিস্থিতি বেশি সংকটময়। আমদানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য এটি একটি গুরুতর সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ এত কম এলসি খোলা হয়েছিল ২০২০ সালের আগস্ট মাসে। তখন এর পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমদানিকারকরা বলছেন, তাদের পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। ফলে তারা আমদানি কমিয়েছেন। পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নও মন্থর গতিতে হচ্ছে। তার মতে, আমদানিনির্ভর দেশে এলসি কমা মানেই রাজস্ব আয় ও ব্যাংক খাতের আয় কমে যাওয়া। এটি দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক স্থবিরতার লক্ষণ।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধজুড়ে এলসি খোলার হার ক্রমাগত কমেছে। একইসঙ্গে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, পেট্রোলিয়াম ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানিও কমেছে।

কমেছে এলসি নিষ্পত্তিও

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ কম। এই হ্রাসের আগে সর্বশেষ কম এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল কোভিডকালীন ২০২০ সালের নভেম্বরে- ৪ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারের।

তবে অর্থবছরের হিসাবে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৬৯ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪.১৮ শতাংশ বেশি।

ডলারের দরপতন ও বাজারে হস্তক্ষেপ

জুনে আমদানি কমায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। এর ফলে ডলারের দাম কমতে শুরু করে এবং জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা প্রায় ৩ টাকা কমে ১২০ টাকায় নেমে আসে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করে। ১৩ জুলাই প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামে ১২১ দশমিক ৫০ টাকা দরে ১৭৩ মিলিয়ন ডলার কেনে। পরবর্তীতে আরও দুটি নিলামে যথাক্রমে ৩৭৩ মিলিয়ন ও ১০ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়। এসব পদক্ষেপে ডলারের দরপতন থামে এবং দাম আবার বাড়তে শুরু করে। রোববার (২৭ জুলাই) রেমিট্যান্স ও আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলারের দর ছিল ১২২ দশমিক ৫০ টাকা থেকে ১২২ দশমিক ৮৩ টাকা।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আহ্বান

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি কমা ও বিনিয়োগ স্থবিরতা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তারা মনে করছেন, সরকারকে দ্রুত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা দূর করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরবচ্ছিন্ন নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।

একটি ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগ কম হওয়ায় মূলধনী যন্ত্রপাতি বা কাঁচামাল আমদানির প্রয়োজন তেমন পড়ছে না। এখন যে পরিমাণ আমদানি হচ্ছে, তার বড় অংশই নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের।

ইএআর/এএমএ