আইন-আদালত

তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি চলছে

বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অন্য আসামিদের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ শুনানি চলছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শুনানি করছেন।

গত ১৭ জুলাই এ মামলায় আসামিদের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। ওইদিন আদালত এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানির জন্য ২৪ জুলাই দিন ঠিক করেন। কিন্তু সেদিন শুনানি হয়নি। পরে আপিল আবেদনটি শুনানির জন্য ৩১ জুলাইয়ের কার্যতালিকায় আসে।

এর আগে আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পেপারবুক থেকে পাঠ করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ। আদালতে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মো. মাকসুদ উল্লাহ ও অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দিয়ে গত বছরের ১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস

এরপর খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি পান রাষ্ট্রপক্ষ। একই সঙ্গে শুনানির জন্য দিন ধার্য করে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করতে বলেন আদালত।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে গত ১ জুন এ আদেশ দেন আদালত। লিভ টু আপিলের ওপর গত ১৫ মে শুনানি শুরু হয়। গত ২৮ মে শুনানি নিয়ে লিভ মঞ্জুর করে আদেশ দেওয়া হয়। গত ১৭ জুলাই আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করে এসময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করতে বলা হয়েছে।

দুই দশক আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা।

তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলটির তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়।

পরে এ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা পৃথক মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার রায় বাতিল করে গত বছরের ১ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।

আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল, জেল আপিল ও বিবিধ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। এই রায়ের ফলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিরা খালাস পান।

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৭৯ পৃষ্ঠা করে পৃথক দুটি মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল করে। গত ১৩ মার্চ আবেদন দুটি আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে ওঠে। চেম্বার জজ আদালত সেদিন আবেদন দুটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় আবেদন দুটি একসঙ্গে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে ও শুনানি হয়।

এফএইচ/এমকেআর/এএসএম