জাতীয়

৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাচ্চুসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক লিমিটেড থেকে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের ১০ সদস্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি মামলা দায়ের করেছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুদকের রণজিৎ কুমার কর্মকার বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার নথি অনুযায়ী, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধমূলক অসদাচরণ, বিশ্বাসভঙ্গ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে মেসার্স ফোর এস স্টিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে আত্মসাৎ করেছেন।

যেভাবে ঘটেছে এই দুর্নীতি

২০১৩ সালের ২৫ মার্চ মেসার্স ফোর এস স্টিলের মালিক মো. মাসুদ রানা ব্যাংকে একটি হিসাব খুলে মাত্র তিনদিনের মাথায় ৫০ কোটি টাকার ঋণের জন্য আবেদন করেন। আবেদনটি ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে যাচাইয়ের পর ঋণের পক্ষে নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরি হয়। এমনকি শাখার কর্মকর্তারা সরেজমিনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রম বা সাইনবোর্ড পর্যন্ত পাননি।

এরপরও শাখার ব্যবস্থাপক শিপার আহমেদ ওই ঋণ প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠান। প্রধান কার্যালয়ের বাণিজ্যিক ঋণ বিভাগ থেকে ঋণ না দেওয়ার সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও ২০১৩ সালের ১০ জুন ৩২৩তম পরিচালনা পর্ষদের সভায় কিছু শর্তসাপেক্ষে ৩০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু।

ঋণের বিরুদ্ধে জমা রাখা হয় বাড্ডা মৌজার ১৮.১৫ কাঠা জমি। পরে এই জামানত অবমুক্ত করে ডেমরা থানাধীন মাতুয়াইল মৌজার ৮৯.৫০ শতক জমি বন্ধক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তদন্তে দেখা গেছে, এই জমির ৭৫ শতাংশ আগে থেকেই সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা ছিল।

তদন্তে আরও উঠে এসেছে, তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক এস এম ওয়ালিউল্লাহ (মারা গেছেন) এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা ব্যাংকের নিয়মনীতি ও ঋণ অনুমোদন নীতিমালা লঙ্ঘন করে এককভাবে ঋণ প্রদান করেছেন। এমনকি ঋণ বিতরণের পূর্বে প্রয়োজনীয় সিআরজি স্কোর, সিআইবি রিপোর্ট এবং জামানতের যথাযথ যাচাই–বাছাই না করেই টাকা ছাড় করা হয়।

ঋণ প্রাপ্তির পর মাসুদ রানা ও তার স্ত্রী সাহিদা আক্তার শিমু এবং শ্যালক কামাল হোসেন সেলিম ওই অর্থ আত্মসাৎ করেন এবং তা আর ফেরত দেননি। বর্তমানে এই ঋণ ‘খারাপ ঋণ’ হিসেবে শ্রেণিকৃত হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন- বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক শুভাশিষ বোস, শ্যাম সুন্দর সিকদার, নিলুফার আহমেদ, কামরুন নাহার আহমেদ, এ কে এম রেজাউর রহমান, এ কে এম কামরুল ইসলাম, মো. আনোয়ারুল ইসলাম, আনিস আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলাম, তৎকালীন কোম্পানি সচিবমো. শাহ আলম ভূঁইয়া, শাখা ব্যবস্থাপক শিপার আহমেদ, ডিজিএম ওমর ফারুক, ক্রেডিট ইনচার্জ এস এম জাহিদ হাসান, ঋণগ্রহীতা মো. মাসুদ রানা, সাহিদা আক্তার শিমু ও কামাল হোসেন সেলিম।

তদন্ত চলাকালে শাখা ব্যবস্থাপক এস এম ওয়ালিউল্লাহর মৃত্যু হওয়ায় তাকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এসএম/ইএ