পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে একদিনের ব্যবধানে দুটি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। ৮ ও ৯ ফুট লম্বা দুটি ডলফিনের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়া উঠে যায়।
শুক্রবার (২৫ জুন) সকালে সৈকতের মাঝি বাড়ি পয়েন্টে একটি বোতলনোজ প্রজাতির এবং বৃহস্পতিবার বিকেলে সৈকতের ব্লক পয়েন্ট এলাকায় ইরাবতী প্রজাতির একটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। পরে বন বিভাগ এবং কুয়াকাটা পৌরসভা সমন্বয় করে ডলফিন দুটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য কেএম বাচ্চু জানান, ট্যুর গাইডদের কাছে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি দুটি ডলফিন আলাদা জাত। একটি লম্বাদাতযুক্ত বোতলনোজ জাত তারা সাধারণত মহাসাগরীয় এলাকায় থাকে। এগুলো খুব কম দেখা যায় এ উপকূলীয় এলাকায়। অন্যটি ইরাবতী প্রজাতির যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও বঙ্গোপসাগর সমুদ্র উপকূলের নিকটে নদীর মোহনাতে বিভিন্নভাবে দেখা যায়। আজকের এ ডলফিন দুটি দেখতে অনেকে ভিড় জমিয়েছেন।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) ডিরেক্টর অর্গানাইজ আবুল হোসেন রাজু জানান, ‘উপকূলীয় এলাকায় কয়েকবছর এ ডলফিনটি দেখা দিয়েছে। গত কাল একটি ও আজ সকালে একটি এসেছে। এগুলো পচে যাতে গন্ধ হয় সেটি পৌরসভা ও বন বিভাগকে খবর দিয়ে মাটিচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। তা না হলে গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।’
কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির টিম লিডার রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, ‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিদর্শন শেষে আমরা বনবিভাগ ও ব্লু-গার্ড এবং কুয়াকাটা পৌরসভার সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে। তাদের সহযোগিতায় মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত পাঁচটি এবং ২৪ সালে ১০টি ও এর আগে ২৩ সালে ১৫টি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। উপকূলীয় এলাকাজুড়ে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করছি ডলফিন নিয়ে।’
ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সাবেক সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ‘সমুদ্রের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ায় সামুদ্রিক প্রাণীগুলো এভাবে মারা যাচ্ছে। আজকে ভেসে আসা ডলফিনটি ইরাবতী ও বোতলনোজ প্রজাতির। সমুদ্রে ছেঁড়া জাল, প্লাস্টিক পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সময়ে জেলেদের আঘাতে ওদের মৃত্যু হয়। তবে জেলেদের সচেতনতাই পারে ওদের মৃত্যু কমাতে।’
বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম মনিরুজ্জামান জানান, ‘ডলফিন রক্ষা কমিটির মাধ্যমে শুনেছি। আমাদের সদস্যদের পাঠিয়ে দ্রুত মাটিচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়।’
কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ইয়াসীন সাদেক জানান, ‘গতকাল আমি ইরাবতী প্রজাতির ডলফিনটিকে দেখে সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছি গন্ধ ছড়িয়ে পরার আগে মাটিচাপা দেয়ার জন্য। আজকেও একটি মাটি চাপা দিয়েছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। পৌরসভা সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে।
আসাদুজ্জামান মিরাজ/আরএইচ/এএসএম