স্বাস্থ্য

হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে নতুন জীবন দিতে পারে ‘সিপিআর’

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় হঠাৎ করেই। যে কোনো বয়সের মানুষের এটা যে কোনো সময় হতে পারে। এসময় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন)। সঠিক সিপিআর একজন মানুষকে দিতে পারে নতুন জীবন।

সিপিআর মূলত হৃদপিণ্ড ও শ্বাস-প্রশ্বাস আবার সচল করার একটি জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ প্রাথমিক চিকিৎসার উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ হয়। তবে বাংলাদেশে বিষয়টি নিয়ে এখনো কিছুটা অজ্ঞতা রয়েছে। এই পদ্ধতিতে বুকের সংকোচনের (chest compressions) মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখা হয় এবং প্রয়োজনে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস (rescue breathing) দেওয়া হয়, যতক্ষণ না স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন ফিরে আসে।

এই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো সচেতন নয়। জনসচেতনতা বাড়ানো ও সাধারণ মানুষের মধ্যে জীবন রক্ষাকারী এই প্রাথমিক চিকিৎসা কৌশল ছড়িয়ে দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে আমজাদ খান চৌধুরী নার্সিং কলেজ।

শনিবার (২ আগস্ট) নাটোরের আমজাদ খান চৌধুরী নার্সিং কলেজে দিনব্যাপী সিপিআর প্রশিক্ষণ কর্মশালা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রশিক্ষণটি পরিচালনা করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ডা. সেরা হক। ৩০ জন শিক্ষার্থী এবং ৩০ জন চিকিৎসক-নার্স এতে অংশ নেন।

আরও পড়ুন‘সিপিআর দেবো কিনা, তখন সিদ্ধান্ত নিতে সাহসের প্রয়োজন ছিল’সিপিআর কী, তাৎক্ষণিক যেটার কারণে প্রাণে বাঁচলেন তামিম!

প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ব্যবহার করা হয় ডামি বা মডেল পুতুল। ফলে অংশগ্রহণকারীরা অনেকটা বাস্তব পরিস্থিতির অনুশীলন করতে পারেন। জনসাধারণের মধ্যে জীবন রক্ষাকারী এ পদ্ধতির গুরুত্ব তুলে ধরেন প্রশিক্ষক।

প্রশিক্ষণটি বাস্তবভিত্তিক ও প্রাণবন্ত করার জন্য ডেমোর পাশাপাশি প্রেজেন্টেশন এবং হ্যান্ডস-অন এক্সারসাইজের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এতে অংশগ্রহণকারীরা সিপিআর প্রয়োগের সঠিক পদ্ধতি, সংকটময় পরিস্থিতিতে করণীয় ও সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করেন।

সিপিআর শুধু একজন চিকিৎসা পেশাজীবী নন, একজন সাধারণ মানুষেরও শেখা উচিত বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। কারণ একটি প্রশিক্ষিত হাতই হতে পারে কারও জন্য জীবনদায়ী। মানবসেবার ক্ষেত্রেও এটি হয়ে উঠতে পারে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

সিপিআর দেওয়ার আগে বিশেষ সতর্কতা

>>পরিস্থিতি ও পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আপনি ও রোগী নিরাপদ কি না তা আগে যাচাই করা প্রয়োজন।

>>দুর্ঘটনার স্থানে বৈদ্যুতিক তার, আগুন, পানি বা রাস্তার যানবাহনের মতো ঝুঁকি থাকলে সাবধান হতে হবে।

>>রোগীর সাড়া পরীক্ষা করুন। রোগীকে ডেকে দেখুন বা হালকা নাড়িয়ে দেখুন সাড়া দেয় কি না। যদি সাড়া না দেয়, তৎক্ষণাৎ সিপিআরের প্রস্তুতি নিন।

>>সহায়তা চেয়ে নিন। আশপাশে কেউ থাকলে বলুন ৯৯৯-এ ফোন করতে এবং AED (অটোমেটেড এক্সটারনাল ডেফিব্রিলেটর) আনতে।

>>শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করুন। ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত রোগীর বুক ওঠানামা পর্যবেক্ষণ করুন। শ্বাস না থাকলে বা অনিয়মিত হলে সিপিআর শুরু করুন।

>>পালস পরীক্ষা করুন। প্রশিক্ষিত ব্যক্তিরা ক্যারোটিড পালস পরীক্ষা করতে পারেন। পালস না থাকলে বুকের সংকোচন (chest compression) শুরু করুন।

>>রোগীকে সোজা, শক্ত ও সমতল স্থানে রাখুন। সিপিআর কার্যকরভাবে দিতে রোগীকে সমতল জায়গায় পিঠের ওপর শোয়ান।

>>ব্যক্তিগত সুরক্ষায় গ্লাভস, মাস্ক, ফেস শিল্ড ব্যবহার করুন (বিশেষ করে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি থাকলে)।

>>রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস জানা থাকলে বিবেচনায় নিন। যদি জানা থাকে রোগীর হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, ট্রমা বা স্পাইনাল ইনজুরি আছে, তাহলে সিপিআর দিতে আরও সতর্ক হতে হবে।

>>সঠিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী সিপিআর শুরু করুন। বুকের সংকোচক (Chest compression) ও কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস (Rescue Breathing) যথাযথভাবে করুন (বা শুধু Hands-Only CPR, যদি প্রশিক্ষণ না থাকে)।

এএসএ/জেআইএম