বাবা ডাক শিখেছে স্বাধীন। কিন্তু বাবাকে দেখা হয়নি। বাবাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলেও তা আর হয় না। বাবা এখন শুধুই ছবি। মাত্র ৬ মাস বয়সে বাবা হারিয়েছে স্বাধীন। এখন বয়স দেড় বছর।
হবিগঞ্জের শহীদ রিপন শীল পেশায় সেলুন কর্মচারী ছিলেন। জুলাই আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে শহীদ হন। এসময় আহত হন তার ছোট ভাই শিপন শীলও।
অভাব অনুযোগ থাকলেও সুখের কমতি ছিল না তাদের। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে দেখতেন নানান স্বপ্ন। পড়ালেখা করে অনেক বড় হবে। অথচ সেই স্বপ্নবাজ বাবার বাবা ডাকই শোনা হয়নি সন্তানের মুখ থেকে। সন্তানের মুখে কথা ফোটার আগেই পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে।
বড় বোন চম্পা রাণী বিশ্বাস ভাইকে হারিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের গুন্ডারা আমার ভাই রিপন শীলকে হত্যা করে। হত্যার এক বছর হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও গুরুত্বপূর্ণ আসামি কেউ গ্রেফতার হয়নি। অনেকেই শুনেছি দেশ ছেড়ে চলে গেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই হত্যাকারীদের।
তিনি বলেন, অসহায় পরিবারটি বিভিন্ন জনের সহযোগিতা পেয়েছে। কিন্তু এখনও সরকারি কোনো সহযোগিতা পায়নি। দেশের জন্য আমার ভাই শহীদ হয়েছে। তার বাড়ি নেই, ঘর নেই। একমাত্র উপার্জনক্ষম রিপনকে হারিয়ে পরিবারটি চরম সংকটে আছে। সরকার যেন তার পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়। একইসঙ্গে তিনি সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসনের দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, রিপন দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। তার স্মরণে যেন কিছু করা হয়। যাতে তার ছেলে বড় হয়ে বলতে পারে আমার বাবা দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। তার জন্য এ স্মৃতিস্তম্ভ সরকার করেছে।
শহীদ রিপনের মা রুবি রাণী শীল সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। কথা বলতে পারছিলেন না তেমন। তিনি বলেন, আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই আমি। এছাড়া আমার ছোট ছেলে গুলিতে আহত হয়েছে। তার চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকারও তার চিকিৎসায় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমনকি হাসপাতাল থেকে এন্ট্রির কাগজও তাদের দেওয়া হচ্ছে না।
শহীদ রিপন শীলের স্ত্রী তুষ্টি রাণী শীল বলেন, আমার ছেলে বাবাকে দেখতে পারেনি। তার মুখ থেকে বাবা ডাক ফোটার আগেই বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। এখন বাবা ডাক শিখেছে, কিন্তু বাবা নেই। যারা আমার ছেলেকে বাবাহারা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।
রিপন শীলের ভাই আহত শিপন শীল বলেন, আন্দোলনে আমি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে আহত হয়েছি। আমার শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার রয়েছে। ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছি না। এমনকি হাসপাতাল থেকে আমার এন্ট্রির কাগজপত্রও কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে না। সরকারের তালিকায়ও আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আমি দ্রুত হাসপাতাল সনদসহ আমার চিকিৎসায় সরকারের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
আহত অবস্থায় রিপনকে হাসপাতালে নেন জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, রিপন আমার কাছেই ছিল। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী মুহুর্মুহু গুলি ছুড়তে থাকলে হঠাৎ একটি বুলেট রিপনের পেটে এসে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমার জামাকাপড় সব রক্তে ভিজে যায়। আমার কোলেই সে মারা যায়।
তিনি বলেন, এমন একটি হত্যাকাণ্ডের যদি দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হয় তাহলে শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে।
এফএ/এএসএম