বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ১৫৪ জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুরে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিশনের শাস্তির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকদের মধ্যে ছয়জনকে বরখাস্ত, ১২ জনকে অপসারণ, ৯ জনকে নিম্নপদে অবনমন, একজনের পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধি স্থগিত এবং ৩১ জনকে তিরস্কার করা হয়েছে।
কর্মকর্তাদের মধ্যে আটজনকে বরখাস্ত, আটজনকে অপসারণ, সাতজনকে তিরস্কার এবং একজনকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কর্মচারীদের মধ্যে দুজনকে বরখাস্ত, একজনকে চাকরি থেকে অপসারণ এবং ১৯ জনকে তিরষ্কার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জনকে আজীবন বহিষ্কার এবং ৩৯ জনের সনদপত্র বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে, গত ১৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২৮তম সিন্ডিকেট অধিবেশনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশনের করা বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির সুপারিশের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন ও হয়রানি; ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সমর্থনে বিগত বছরের ৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ এবং ‘ঘরে ঘরে খবর দে, এক দফার কবর দে’ স্লোগান দিয়ে মিছিলের মাধ্যমে জুলুম, নির্যাতন ও গণহত্যার উস্কানি ও সমর্থন প্রদান করে নিরীহ ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর হামলা, শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট, শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নষ্ট এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার দায়ে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫৭ জন শিক্ষক, ২৪ জন কর্মকর্তা এবং ২১ জন কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিগত বছরের ৪ আগস্ট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বহিরাগতদের নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ‘শান্তি মিছিল’ আয়োজন করে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ ও ‘ঘরে ঘরে খবর দে, এক দফার কবর দে’ স্লোগানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার দমন-পীড়নের পক্ষে উস্কানি দেয়। এসময় তারা নিরীহ ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি, শান্তি-শৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। এর দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার এবং ২৪ জনের সনদপত্র বাতিল করা হয়।
২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর আশরাফুল হক হলে বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চারজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় আরও ২১ জনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। এর মধ্যে ১৮ জন শিক্ষার্থী (১৫ জনের সনদপত্র বাতিল ও তিনজনকে আজীবন বহিষ্কার), দুজন শিক্ষক (একজনকে নিম্নপদে অবনমন এবং অন্যজনের পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধি স্থগিত) এবং একজন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে মোট ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, তদন্ত কমিশন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছিল। সেই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আসিফ ইকবাল/এসআর/জেআইএম