আইন-আদালত

‘দুর্নীতির টাকা ভোগ করে স্বজনরা, দুর্নীতিবাজ থাকে জেলখানায়’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে কারাগারে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

এদিন শুনানি চলাকালে বিচারক কলিমুল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনকালীন বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে কলিমুল্লাহ তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্য বন্ধ করায় দীপু মনি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন’।

শুনানির সময় বিচারক কলিমুল্লাহর জানতে চান, তিনি ২০১৭ সালে উপাচার্য হিসেবে ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিনই ঢাকায় ছিলেন কি না। জবাবে কলিমুল্লাহ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ করেছেন। এ সময় এক আইনজীবী কলিমুল্লাহর প্রায়ই টকশোতে অংশগ্রহণের কথা বললে তিনি জানান, তিনি রাতে টকশোতে সময় দিতেন।

এরপর বিচারক আরও প্রশ্ন করেন যে, তার মা এবং তিনি একই নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলেন কি না। এর জবাবে কলিমুল্লাহ বলেন, সরকারই নিয়োগ বোর্ড গঠন করেছিল এবং তার মা মহিলা ও শিশু অধিদপ্তরের ডিজি থাকায় সরকার তাকে নিয়োগ দিয়েছিল। এতে তার কোনো দায় ছিল না।

বিচারক তাকে প্রশ্ন করেন একই সঙ্গে উপাচার্য, ডিন ও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন আপনি? এমন প্রশ্নের জবাবে কলিমুল্লাহ জানান, এটি আগের উপাচার্যদের সময় থেকে চলে আসা একটি নিয়ম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিয়ম না থাকলেও বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক পদের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাকে এই দায়িত্ব নিতে হয়েছিল।

উন্নয়ন প্রকল্পের ৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে কলিমুল্লাহ বলেন, আমার বিরুদ্ধে পুরো প্রচারণা দীপু মনি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ মূলত সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয় এবং একক হাতে এটি করা যায় না। দুর্নীতির অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, সেই প্রকৌশলীরা এখনো সেখানে কাজ করছেন। নকশা পরিবর্তনের অভিযোগ আগের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছিল। আমি গিয়ে মাটির উপর পর্যন্ত ঢালাই পেয়েছি, মাটির নিচে কাজ হয়ে গেলে নকশা পরিবর্তন করা যায় না।

বিচারক কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে ভর্তি ও চাকরি বাণিজ্যের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি বরং এসব বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর মহসিন রেজা কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ থাকার কথা জানান।

পরে বিচারক কলিমুল্লাহকে বলেন, আপনার বিরুদ্ধে যেহেতু দুদকের একটি অভিযোগ এসেছে, সেটার তদন্ত হোক। দেখা যাক তদন্তে কী প্রমাণিত হয়। একপর্যায়ে তিনি কলিমুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আসছেন একা, যাবেনও একা। কবরেও একা যাবেন, জেলখানায়ও একা। যা যা করেন, সবকিছুর সুবিধাভোগী হবে পরিবার। আপনার কথা বলছি না, জেনারেলি বলছি।

বিচারক আরও বলেন, যারা দুর্নীতি করে, তাদের আত্মীয়-স্বজনরা সবাই দুর্নীতির টাকা খেয়ে বেড়ায়, উড়িয়ে বেড়ায়, মার্কেটিং করে, ভোগ করে। কিন্তু যে অর্জন করে, সে ভোগ করতে পারে না। সে থাকে জেলখানায়। কী করেছেন? সেটা আপনি জানেন, আর আলিমুল গায়েব জানেন। দুদক জানবে কিছুদিন পর। এরপর মানুষ জানবে।

কলিমুল্লাহ তার অসুস্থতার কথা জানালে বিচারক তাকে জেল কোড অনুযায়ী সকল সুবিধা দেওয়ার আদেশ দেন। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এমআইএন/কেএইচকে/জেআইএম