সাহিত্য

আমি লিখি, কারণ কাঁদতে পারি না

‎সবাই ভাবে আমি লিখি, কারণ আমি জানি কীভাবে লিখতে হয়।কেউ ভাবে, এটা আমার অভ্যাস, কেউ ভাবে প্রতিভা।‎কিন্তু খুব কম মানুষ জানে, আমি লিখি...কারণ আমার ভেতর প্রতিদিন একটু করে ভেঙে পড়ে।

‎আমি লিখি, কারণ আমার কাঁদার অধিকার নেই।‎আমি লিখি, কারণ আমাকে শক্ত মনে করে সবাই, অথচ ভেতরে আমি একেবারে নরম।‎আমি লিখি, কারণ আমার অনুভূতিগুলো আর কাউকে বললে তারা বলবে, ‘এত ভাবুক হলে চলে?’

‎আমার কাছে শব্দগুলোই আশ্রয়।‎যখন মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন কলম আর কাগজই পাশে থাকে।‎শব্দেরা কখনো বিচার করে না, তারা শুধু শোনে।‎আমি বলি, ‘আজ খুব কষ্টে আছি...’‎শব্দেরা চুপচাপ সেই কষ্টটুকু নিজের মধ্যে টেনে নেয়,‎কখনো কবিতা হয়ে, কখনো গদ্য হয়ে, কখনো শুধু একটি লাইন হয়ে।

লেখালেখি আমার কাছে পেশা নয়;‎এটা আমার বাঁচার উপায়।‎আমি যখন লিখি, তখন আমি সত্যি হই।‎যখন লিখি না, তখন আমি মুখোশ পরে থাকি।

‎অনেকে বলে, ‘তোমার লেখাগুলো খুব আবেগী!’‎আমি শুধু হাসি। ‎কীভাবে বোঝাই—আবেগই তো আমার রক্ত!আবেগই তো আমাকে প্রতিদিন কিছু না কিছু হারিয়ে ফেলে আবার খুঁজে পেতে শেখায়।

‎‎রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে; তখন আমি জেগে থাকি—‎নীরব জানালার পাশে বসে,‎আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবি—‎আজকের মতো আর কেউ কি এমন নিঃশব্দে কেঁদেছে?

যে মানুষটি বাইরে কঠোর, কর্মব্যস্ত, সবার মাঝে আত্মবিশ্বাসী—সেই মানুষটি রাতের আঁধারে হয়তো নিজের অনুভূতির কাছে অসহায় হয়ে পড়ে।লেখকের এই একাকিত্ব কেউ বোঝে না।

‎আমি লিখি না যাতে লোকে আমাকে জানে,‎আমি লিখি যাতে আমি নিজেই নিজেকে চিনতে পারি।

‎সবাই চায় ভালোবাসা, স্বীকৃতি, প্রশংসা—আমিও চাই।‎কিন্তু তার চেয়েও বেশি আমি চাই—কেউ একজন সত্যি করে বুঝুক,‎আমার প্রতিটি শব্দ আসলে একটি না-বলা আর্তি।

‎‎আমার লেখা পড়ে যদি একজন মানুষও বলে,‘এই লাইনটা যেন আমার মনের কথা!’‎তাহলে আমি মনে করি—আজও বেঁচে থাকার মানে পেলাম।

‎আমি লেখক। ‎আমার অস্তিত্ব শব্দে গাঁথা, ব্যথায় মোড়ানো।‎আমার প্রতিটি লেখা আমার আত্মার দরজায় কড়া নাড়া।‎যদি কেউ পড়েন, শোনেন, বোঝেন—‎তবে জেনে রাখুন, আপনি শুধু আমার লেখা পড়ছেন না,‎আপনি আমার নিঃশব্দ কান্না শুনছেন।

এসইউ/এমএস