মতামত

গণিতকে ভয় নয়, ভালোবাসা দিয়েই জয় করতে হবে

রাইসা স্কুলে পড়ে, ক্লাস সিক্সে। অঙ্কে তার চরম ভয়! নতুন বইয়ের অঙ্ক দেখেই সে ঘেমে ওঠে। বকা খায়, আবার চুপচাপ বই বন্ধ করে রেখে দেয়।

রাইসার মা রেহেনা বেগম কাঁথা সেলাই করেন। একদিন মা রাইসাকে ডেকে বললেন,— “তুই তো দেখি সব সময় কাঁথা তৈরিতে আমার পাশে থাকিস, আজ আয়, একটু সাহায্য কর।”রাইসা খুশি হয়ে মায়ের পাশে বসলো। মা বললেন—— “এই কাঁথার জন্য ৮ টুকরা কাপড় লাগবে। প্রতিটা টুকরায় ৫টা করে লাইন দিতে হবে। বল তো, সব মিলিয়ে কতগুলো লাইন হবে?”রাইসা ভাবল একটু, তারপর বলল— “৮ × ৫ = ৪০টা লাইন!”মা হেসে উঠলেন— “আরে, তাই তো! এইটাই তো অঙ্ক!”রাইসা চমকে উঠল! এত সহজ! মা বলেন কি! এরপর মা আবার বললেন—— “দেখ, আমি এই কাঁথাটা ৪ দিনে শেষ করব। প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে কাজ করব। তাহলে কত ঘণ্টা লাগবে বল তো?”রাইসা আনন্দে বলে ফেলল— “৪ × ২ = ৮ ঘণ্টা!”মা এবার গম্ভীর হলেন।— “তুই তো খুব ভালো অংক পারিস রে! তবে অঙ্ক বইয়ের পৃষ্ঠা খুললেই তোর মাথা কেন ঘোরে?”রাইসা লজ্জামাখা মুখে মাথা নিচু করল, কিন্তু বুঝে গেল—অঙ্ক মানে শুধু খাতা কলম নয়, জীবনের প্রতিটি কাজে অঙ্ক লুকিয়ে আছে। সেইদিন থেকেই রাইসা প্রতিদিন একটি করে অঙ্ক নিজে চেষ্টা করে। এখন সে গণিতকে ভয় না পেয়ে খেলার মতো ভালোবাসে।রাইসা বুঝে যায়, কোথায় নাই অঙ্ক? গণিত চারপাশেই আছে—মা যখন কাঁথা সেলাই করেন, বাবা যখন বাজার করেন, রাঁধুনী যখন রেসিপি মাপে, কিংবা কৃষক যখন জমির মাপ নেন—সবখানেই অঙ্ক। এগুলো বুঝলে, গণিত হয়ে ওঠে জীবনে মজার খেলা। কয়েকদিন পর, রাইসার স্কুলে এলেন এক নতুন গণিত স্যার—রফিক স্যার। প্রথম ক্লাসেই স্যার বললেন,—“আজ আমরা ম্যাজিক করব”। সবাই অবাক! গণিত ক্লাসে ম্যাজিক? স্যার সবাইকে বললেন, — "একটা যেকোনো তিন অঙ্কের সংখ্যা লেখো, যার প্রথম আর শেষ অঙ্ক ভিন্ন। যেমন ধরো 742।"সবাই আনন্দ নিয়ে খাতায় লিখল। স্যার বললেন–— "এবার সংখ্যাটার অঙ্কগুলো উল্টে দাও। 742 উল্টালে হয় 247। এবার বড় সংখ্যা থেকে ছোট সংখ্যাটা বাদ দাও: 742 – 247 = 495।"সবাই খুব সহজেই হিসেব করে ফেলল। তারপর স্যার হাসলেন।— "এবার তোমরা এই 495-এর অঙ্কগুলো উল্টে লেখো: 594। এবার 495-এর সাথে 594 যোগ করো!"সবাই যোগ করল: 495 + 594 = 1089।অদ্ভুত ব্যাপার! সবাই যার যেই সংখ্যা থেকে শুরু করুক না কেন, শেষে ফলাফল এলো 1089. সবাই তখন হো হো করে হেসে উঠলো!রাইসাও প্রথমবার ক্লাসে অঙ্কে করে খুব মজা পেল। সে বাড়ি ফিরে আরেকটা ম্যাজিক শেখার জন্য ইউটিউবে ঘাঁটল, গণিত বইয়ের পাতা ওল্টাতে শুরু করল। এখন গণিত তার প্রিয় বিষয়। আগে রাইসার স্কুল একঘেয়েমি লাগলেও এখন গণিত ক্লাসের জন্য ক্লাস করতে খুব আনন্দ হয়। মনে রাখতে হবে, গণিত শুধু সংখ্যা না—এটা মজার ধাঁধা, জাদুর খেলা যুক্তির খেলা। শুধু সঠিকভাবে বুঝতে পারলেই, এটা ভয় নয়—সবচেয়ে আনন্দদায়ক একটি বিষয় হয়ে উঠতে পারে। গণিত শেখানোর সময় মাঝে মাঝে এমন ম্যাজিক সংখ্যা, ধাঁধা, পাজল ব্যবহার করলে ছাত্রছাত্রীরা গণিত শিখতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। গণিতকে “বুঝি না” বা “কঠিন” বলার আগে তাদের দেখাতে হবে—গণিত হাসাতে জানে! যে গণিতে এত মজা, যে গণিত আনন্দ দিতে পারে সেই গণিতে কেন ফেল করছে আমাদের শিক্ষার্থীরা? কোথায় হচ্ছে আমাদের ভুল?

২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এক চাঞ্চল্যকর চিত্র ফুটে উঠেছে—সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে গণিতে। এই দৃশ্য নতুন নয়, কিন্তু বছরের পর বছর একই ধাঁচে ফলাফল দেখে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরাও দিশেহারা। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, কেন আমাদের শিক্ষার্থীরা গণিত বিষয়টিকে ভয় পায়? কেন তারা এই বিষয়ে বারবার ব্যর্থ হয়?

আমরা আজকে গণিত বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো। ২০২৫ সালে নতুন সরকার উত্তরপত্র বিতরণের সময় বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরীক্ষক, প্রধান পরীক্ষকগণকে উত্তরপত্র মূল্যায়নে কোনো প্রকার অতি মূল্যায়ন যাতে না হয় সে ব্যাপারে জোরালো নির্দেশনা প্রদান করেন৷ এ বছর কাউকে সহানুভূতির নম্বর দেওয়া হয় নি! ফলে, লক্ষ্য করা গেছে গণিতে প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী ৭৯ নম্বর পেয়েছে। অর্থাৎ এখানে মাত্র ১ নম্বর হলেই A+ হতো।

এতে এ বছর সহানুভূতির নম্বর দেওয়া হয় নি বলেই প্রমাণিত হয়। এজন্য এ বছরে গণিতে রেকর্ড সংখ্যক পুনঃপরীক্ষণের আবেদন জমা পড়েছে। কারণ হিসেবে ঢাকা বোর্ডের গণিত বিষয়ের প্রধান পরীক্ষক জনাব মো. ফারুক হোসেন–বলেন, সৃজনশীল অংশে ৭০ নম্বরের এর মধ্যে ৫০-৫৬ নম্বর প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পুনপরীক্ষণের আবেদনই বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। তিনি মনে করেন– “ভীতিকর মনস্তত্ত্ব ও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে দুর্বলতাই গণিতে অকৃতকার্য বা কম নম্বর প্রাপ্তির জন্য অনেকাংশে দায়ী।

আমাদের দেশে গণিতকে অনেক সময় ভয়ংকর, কষ্টকর ও বোঝা হয়ে ওঠা একটি বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। শিশুকাল থেকেই "গণিত কঠিন" এই ধারণা সমাজ-পরিবার-শিক্ষক সবাই মিলে শিশুর মনে ভ্রান্ত ধারণা গেঁথে দেয়। ফলে, শিক্ষার্থীর মনের ভেতর তৈরি হয় একধরনের গণিত-ভীতি। এই মানসিক বাধা অতিক্রম না করেই যখন তারা জটিল অঙ্ক, সূত্র ও প্রমাণের মুখোমুখি হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা ব্যর্থ হয়। এছাড়াও রয়েছে পদ্ধতিগত ত্রুটি।

গণিত এমন একটি বিষয়, যা মুখস্থ করে নয়, বুঝে এবং প্রয়োগ করে শিখতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে গণিত পড়ানোর পদ্ধতি এখনো ‘সূত্র মুখস্থ করো, অঙ্ক কষো’ এই পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। ব্যাখ্যা, অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ—এসবের চর্চা খুব কম। শিক্ষকরা অনেক সময় পাঠ্যবইয়ের বাইরে গিয়েই উদাহরণ দেন না, গণিতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির জন্য ব্যবহারিক উদাহরণ ব্যবহার করেন না।

এছাড়াও রয়েছে উপযুক্ত শিক্ষক ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি। গ্রামের অনেক স্কুলে গণিত বিষয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অভিজ্ঞ শিক্ষক নেই। আবার যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকেরই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ বা আধুনিক পাঠদানের দক্ষতা নেই। পাঠ্যক্রম নতুন হলেও পাঠদানের কৌশল সেই পুরোনো। ফলে শিক্ষার্থীরা নতুন পাঠ্যবইয়ের জটিলতা পেরোতেই পারে না। আরো রয়েছে গণিত শেখার পরিবেশের অভাব। গণিত বিষয়টি বোঝাতে প্রয়োজন ইন্টার্যাকটিভ বোর্ড, চিত্র, অ্যানিমেশন কিংবা শিক্ষণ-উপকরণ; কিন্তু আমাদের বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে এখনো ক্লাসরুমে সেই উপকরণের যথেষ্ট অভাব।

এছাড়াও শ্রেণিকক্ষে ৬০-৭০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে একজন শিক্ষক ঠিকভাবে কার কী বুঝতে সমস্যা হচ্ছে, তা বোঝার সুযোগ পান না। ফলে, আমাদের দেশে পরীক্ষা পদ্ধতিতে বাস্তবিকতা ও চিন্তাশক্তির অভাব পরিলক্ষিত। বর্তমান পরীক্ষাপদ্ধতি এখনও অনেকাংশে মুখস্থনির্ভর। বিশ্লেষণমূলক ও সমস্যা সমাধানভিত্তিক প্রশ্নের সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি তেমন নেই। অনেক প্রশ্নে বাস্তবজ্ঞান প্রয়োগ করতে হয়, কিন্তু তার অনুশীলন হয় না। ফলে তারা ‘প্রশ্ন চেনা না হলে’ অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

আমাদের পরিবার ও সমাজে রয়েছে উৎসাহের ঘাটতি। অনেক পরিবারেই গণিতে ব্যর্থ হওয়াকে ‘স্বাভাবিক’ বা ‘চরিত্রগত দুর্বলতা’ হিসেবে ধরা হয়। ফলে অভিভাবকরাও গণিতের প্রতি সন্তানের আগ্রহ বাড়াতে সক্রিয় থাকেন না। বরং অন্য বিষয়ের পেছনে বেশি জোর দেন। গণিত শিখন শিক্ষণ ( Teaching and Learning Methods) পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। গল্প, বাস্তব উদাহরণ, অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্টের মাধ্যমে গণিতকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ জোরদার করতে হবে।

পাঠ্যক্রম অনুসারে তাদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। ছাত্রীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি বিদ্যালয়ে গণিত সহায়তা ক্লাস চালু করতে হবে। পরীক্ষা পদ্ধতি এমনভাবে তৈরি করতে প্রণয়ন করতে হবে, যাতে বিশ্লেষণ, যুক্তি এবং বাস্তব জ্ঞানের প্রয়োগ মূল্যায়ন করা যায়। অভিভাবক ও শিক্ষকদের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া গণিতে উন্নতি সম্ভব নয়।

গণিতে ফেল করার এই প্রবণতা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গভীরতর সংকেত বহন করে। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতা নয়, বরং আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা কৌশলের একটি ব্যর্থ প্রতিফলন। এখন সময় এসেছে ‘গণিতভীতি’ দূর করে গণিতকে মজার, জীবন্ত ও বোধগম্য করে তোলার—যাতে করে আগামীর প্রজন্ম গণিতকে ভয় না করে, বরং ভালোবাসে।

গণিতে ফেল কমিয়ে আনার জন্য কিছু কার্যকর দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।কিছু বাস্তবভিত্তিক নীতি নির্ধারক ও প্রয়োগযোগ্য পদক্ষেপই গণিতে শিক্ষার্থীদের পারদর্শী করে তুলতে সক্ষম। প্রাথমিক স্তরে গণিত শিক্ষার ভিত্তি মজবুত করা প্রয়োজন। প্লে-গ্রুপ ও প্রাথমিক শ্রেণিতে গণিতভীতি দূর করতে আনন্দ ভিত্তিক গণিত শিক্ষা চালু করা। চিত্র, খেলা, গল্প ও বাস্তবজীবনের উদাহরণ দিয়ে বাচ্চাদের গণিত শেখানো। শিশুদের জন্য “গণিত খেলাঘর” বা Math Lab তৈরি করতে হবে। এছাড়াও প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি (পাঠ্যক্রম অনুযায়ী) গণিত শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া ।

ইন্টারঅ্যাকটিভ পাঠদানের কৌশল, ডিজিটাল গণিত শিক্ষা এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির প্রশিক্ষণ চালু করা। ভালো গণিত শিক্ষকদের প্রণোদনা ও পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করা। কারণ, যে শিক্ষক গণিতে ভালো, বিজ্ঞানে ভালো, তারা কেউই শিক্ষকতা পেশায় আসতে চান না। ভালো ছাত্র/ শিক্ষকদের শিক্ষকতা পেশায় আসতে না চাওয়ার প্রধান কতগুলো কারণ রয়েছে।

১. সামাজিক পদমর্যাদা ২. পদোন্নতির সুযোগ না থাকা ৩. বেতন কাঠামো ৪. আর্থিক অবস্থানে পিছিয়ে থাকা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেখানে শিক্ষকদের বেতন ও সামাজিক মর্যাদা সবচেয়ে বেশি সেখানে আমাদের দেশে একজন শিক্ষকের বেতন খুবই লজ্জাজনক! দুঃখজনক হলেও সত্য এ দেশে একজন শিক্ষকের চেয়ে একজন সিএনজি চালকের আয়ই বেশি৷ তাই উন্নত জাতি গড়তে শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর উন্নয়ন ঘটানো সময়ের দাবি৷ তা না হলে শিক্ষকতা পেশায় ভালো ছাত্র তথা ভালো শিক্ষক আগ্রহী হবেন না এটাই স্বাভাবিক।

গণিত বই নিয়েও কিছু সমস্যা দেখা যায়। সহজ ভাষায় ও বেশি চিত্রসহ গণিত উপস্থাপন করতে হবে। পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে ইন্টারেক্টিভ ভিডিও, অনলাইন অনুশীলন ও কুইজ সংযুক্ত করতে হবে। “শেখার জন্য শেখা নয়”, “বোঝার জন্য শেখা”—এই ধারণা বাস্তবায়ন করতে হবে।অতিরিক্ত সহায়তা ও রেমেডিয়াল ক্লাসে যারা পিছে আছে, তাদের জন্য স্কুলে বিনামূল্যে ইমেডিয়াল বা সহায়ক গণিত ক্লাস চালু করতে হবে। স্কুলের বাইরে কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার বা লাইব্রেরিতে গণিত সহায়তা চালু করা জরুরি। একটু ভালো শিক্ষার্থীদের দিয়ে পিয়ার টিচিং (সহপাঠী সাহায্য) ব্যবস্থা চালু করতে হবে। মূল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কার কেবল সংখ্যা কষা নয়, বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধান ভিত্তিক প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বোর্ড পরীক্ষায় ধাপে ধাপে মার্কিং এবং ব্যাখ্যা ভিত্তিক প্রশ্ন রাখতে হবে। ফিডব্যাক-নির্ভর মূল্যায়ন চালু করা, যাতে ছাত্র বুঝতে পারে সে কোথায় ভুল করছে। গণিত ভীতি দূর করতে সচেতনতা জরুরি। মিডিয়ায়, স্কুলে, ওয়ার্কশপে গণিতভীতি দূর করার জন্য অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সচেতনতা মূলক কর্মসূচি চালু করতে হবে। গণিতকে আনন্দদায়ক করে তোলার জন্য গণিত অলিম্পিয়াড, গণিত উৎসব, ম্যাথ গেমস ডে ( Math Games Day) আয়োজন করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ডিজিটাল কনটেন্ট (ভিডিও টিউটোরিয়াল, মোবাইল অ্যাপস, গেম) ব্যবহার করে গণিত শেখানো হলে তা খুবই ফলপ্রসূ হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোতে ট্যাব, প্রজেক্টর, ইন্টারনেট সংযুক্ত ক্লাস চালু করা। অনলাইন গণিত সহায়ক প্ল্যাটফর্ম যেমনঃ "কিশোর বাতায়ন", "শিখন", "ক্লাসটিউন" ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ানো।

শুধু শিক্ষক নয়, অভিভাবকদের গণিত শেখার গুরুত্ব বোঝানো এবং ঘরে সহায়তা করার উপায় শেখাতে হবে। অর্থাৎ অভিভাবক ও শিক্ষকের সমন্বয় করতে হবে। মাসিকভাবে শিক্ষক-অভিভাবক সভায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। শিক্ষানীতিতে গুরুত্ব আরোপ, প্রতিটি বিদ্যালয়ে একাধিক পূর্ণকালীন গণিত শিক্ষক নিশ্চিত করতে হবে।

গ্রামীণ এলাকায় গণিত শিক্ষার বিশেষ বরাদ্দ ও মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে। গণিত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন ও গণিতভীতি কাটাতে কাউন্সেলিং সেবা চালু করতে হবে। ব্যর্থতার ভয় দূর করে “আমি পারি” মনোভাব তৈরিতে উৎসাহিত করতে হবে। "গণিত শুধু পরীক্ষার জন্য না, জীবনের জন্য" – এই উপলব্ধি তৈরি করতে হবে। গণিতভীতি এক দিনে দূর হয় না। কিন্তু সঠিক পদ্ধতি, ধৈর্য এবং আনন্দময় শেখানোর কৌশল গ্রহণ করলে—গণিত যে ভয়ের নয়, বরং মজার বিষয়—তা শিক্ষার্থীর মনে গেঁথে যাবে।

শুধু ছাত্র নয়, শিক্ষক, অভিভাবক, নীতিনির্ধারক ও সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া গণিতে ফেল রোধ সম্ভব নয়। গণিতকে ভয় নয়, ভালোবাসার মাধ্যমে শেখাতে পারলেই শিক্ষার্থীরা গণিতকে ভালোবেসে গ্রহণ করবে, আর তখনই ফলাফল পাল্টে যাবে—দেশও এগিয়ে যাবে।

লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক।

এইচআর/এমএস