আন্তর্জাতিক

রাশিয়া নয়, ভারতকে সাজা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে বেশ খারাপ সম্পর্ক বিরাজ করছে। গত পাঁচ মাসে দুদেশের মধ্যকার পরিস্থিতি বদলেছে এবং সেটা বেশ দ্রুতই হয়েছে। মূলত রাশিয়া থেকে তেল আমদানিকে কেন্দ্র করে ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপকে কেন্দ্র করেই দুদেশের সম্পর্কে অবনতি শুরু হয়েছে।

২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইউক্রেনে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন লেই টার্নার। মস্কো টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে আসন্ন শীর্ষ বৈঠকের বিষয়কে বিশ্লেষণ করেছেন তিনি।

লেই টার্নার লিখেছেন, আগে বলা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে, কিন্তু এখন ৫০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করা হয়েছে। ২৭ আগস্টের আগে এই ট্যারিফও প্রযোজ্য হবে না।

তার আগে ১৫ আগস্ট প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশকে রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্য নিশানা করা হয়নি।

টার্নার মনে করেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের জন্য ভারতকে শাস্তি দেওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে অনেকটা ‘ইউ-টার্ন’-এর মতো। কারণ এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে স্বৈরশাসক বলে অভিহিত করেছিলেন।

দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর রাশিয়ার পক্ষ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছিলেন, ২০১৪ সালের আগে ইউক্রেনের সীমানা যেমন ছিল, তা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয় এবং তারা ন্যাটোতেও যোগ দিতে পারবে না।

টার্নার লিখেছেন, ইউক্রেনের স্বার্থ উপেক্ষা করে পুতিন ও ট্রাম্পের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতা করতে পারে। রাশিয়ার ওপর নতুনভাবে শুল্ক আরোপের জন্য ট্রাম্প কিছুই করেননি। অথচ যুক্তরাষ্ট্র চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতো। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল ট্যাংকারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, রাশিয়ার তেল বাণিজ্যে সহায়তাকারী ব্যাংক ও শোধনাগারগুলোর ওপরেও আদালাভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি।

এখন আশঙ্কা জন্মাচ্ছে যে ট্রাম্প এমন এক চুক্তিতে রাজি হতে পারেন যার ফলে ইউক্রেন তাদের জমি হারাবে এবং যদি ইউক্রেন তা অস্বীকার করে, তাহলে রাজি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিতে থাকবে।

দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এই একই পদ্ধতিতে কাজ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। টার্নার লিখেছেন, জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে বেশ কয়েকবারই এমনটাই করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, তারা ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানও ব্যাহত করেছে। কিন্তু রাশিয়ার ওপর কোনো চাপ দেয়নি।

মার্কিন চাপের মাঝেই অজিত দোভালের রাশিয়া সফর মার্কিন চাপের মুখে পড়েও এখনো রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে দেখা যায়নি ভারতকে। গত ৬ আগস্ট ভারতের ওপর আরো ২৫ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৭ আগস্ট ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল রাশিয়া পৌঁছান। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।

সে সময় অজিত দোভাল বলেছিলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট পুতিন ভারতে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিনের কথা হয় ৮ আগস্ট। তিনিও জানান, প্রেসিডেন্ট পুতিন চলতি বছর ভারত সফরে আসতে চলেছেন। একই তথ্য প্রকাশিত হয় রাশিয়ার গণ্যমাধ্যমেও।

রাশিয়া টুডেতে গত ৭ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শেষের দিকে নয়াদিল্লি সফরে যাবেন ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর চলতি মাসের শেষের দিকে রাশিয়া সফর করবেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করার জন্য ভারতের ওপর চাপ ছিল সেই সময় রাশিয়া সফরে এসেছিলেন অজিত দোভাল।

ভারতীয় গণমাধ্যমে একই কথা বলা হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বিরল মৃত্তিকা, বিমানের যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং রেলপথে সহযোগিতা বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে।

আরও এস-৪০০ সিস্টেম কেনার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন অজিত দোভাল। বর্তমানে ভারতের কাছে তিনটি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারত সেগুলো ব্যবহার করেছে।

রুশ মিডিয়া গ্রুপ রসিয়া সেগোদনায়ার মহাপরিচালক দিমিত্রি কিসেলেভ গত সপ্তাহে ‘স্পুটনিক নিউজ’কে বলেন, ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব দুই দেশের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন আল্টিমেটামের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ছিল যৌক্তিক ও ভারসাম্যপূর্ণ। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ভারতের ওপর কোনো চাপ তৈরি করা যাবে না। ভারত ও রাশিয়ার সাধারণ মানুষও পরস্পরকে বিশ্বাস করেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

টিটিএন