আইন-আদালত

জীবনরক্ষাকারী ৭৩৯ ওষুধের দাম ঠিক করবে সরকার: হাইকোর্ট

জীবনরক্ষাকারী ৭৩৯টি ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করবে। এছাড়া ১৯৯৪ সালে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ওষুধের দাম নির্ধারণের আংশিক ক্ষমতা দিয়ে জারি করা সার্কুলারকে অবৈধ ঘোষণা করে ১৯৯৩ সালের সরকারি গেজেট পুনর্বহাল করেছেন আদালত।

সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সোমবার (২৫ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল।

ওষুধ মালিক সমিতির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এস. কে. মোরশেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) সৈয়দ এজাজ করিব।

এ রায়ের ফলে দেশের বেশিরভাগ ওষুধের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার উৎপাদনকারীদের পরিবর্তে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে থাকবে।

রায়ে স্বাস্থ্য সচিব, ডিজি হেলথ, ডিজি ড্রাগ, ওষুধ মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ এর ১১ ধারায় সরকারকে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এর ভিত্তিতে ১৯৯৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৭৩৯টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু ১৯৯৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি সার্কুলারের মাধ্যমে সেই ক্ষমতা সীমিত করে মাত্র ১৭৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে রাখা হয়। বাকি সব ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে।

এই সার্কুলারকে চ্যালেঞ্জ করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) ২০১৮ সালে জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করে। হাইকোর্ট তখন রুল জারি করে জানতে চান, কেন ওই সার্কুলারকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না।

২০১৮ সালের ৩১ জুলাই শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন এবং বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের আদালত রুল জারি করে সার্কুলারকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না সে মর্মে জানতে চান।

এরপর আজ চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করেন আদালত।

আরও পড়ুন: আমি এসব বলেছি প্রমাণ করতে পারলে ক্ষমা চাইবো: ফজলুর রহমান৫ দিনের রিমান্ডে তৌহিদ আফ্রিদি

আইনজীবী মোরসেদ আদালতে যুক্তি দেন, জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সরাসরি মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের হাতে সীমিত করে দেওয়া নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করে।

রায়ে আদালত সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদের আলোকে নির্দেশ দেন যে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম সরকারকেই নির্ধারণ করতে হবে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করারও নির্দেশ দিয়েছেন।

রিটকারীর আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির হাতে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা থাকার ফলে সাধারণ মানুষকে বেশি দামে কিনতে হয়। গত ১৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে জীবনরক্ষকারী ওষুধের তালিকা করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। ওই তালিকায় যেসব ওষুধের নাম থাকবে সবগুলোর দাম সরকারকেই নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এফএইচ/এনএইচআর/জেআইএম