আন্তর্জাতিক

মালয়েশিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসার সুবিধা কী, কীভাবে যাবেন?

মালয়েশিয়ায় যেকোনো স্তরে (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ভাষা শিক্ষা, বা দক্ষতা প্রশিক্ষণ) পড়াশোনার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট পাস বা শিক্ষার্থী ভিসা প্রয়োজন। এই ভিসা মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে ইস্যু করা হয়। এটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেশটিতে বৈধভাবে অবস্থান ও পড়াশোনার অনুমতি দেয়।

নিচে মালয়েশিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ফি, শর্তাবলি এবং অন্যান্য বিষয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো-

>> আবেদন প্রক্রিয়া

* ধাপ ১: অফার লেটার সংগ্রহ

- প্রথমে মালয়েশিয়ার স্বীকৃত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (পাবলিক/প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, বা ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার) ভর্তির জন্য আবেদন করতে হবে।- ভর্তি নিশ্চিত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একটি অফার লেটার দেওয়া হবে।

* ধাপ ২: ভিসা অ্যাপ্রুভাল লেটার (ভিএএল)

- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিসেস (ইএমজিএস)-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জন্য ভিসা অ্যাপ্রুভাল লেটার (ভিএএল)-এর জন্য আবেদন করে।- ইএমজিএস শিক্ষার্থীর কাগজপত্র যাচাই করে এবং ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের অনুমোদনের পর ভিএএল ইস্যু করে।- এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত ১৪ থেকে ৩০ দিন সময় লাগতে পারে।

* ধাপ ৩: ভিসা উইথ রেফারেন্স (ভিডিআর) বা প্রবেশের অনুমতি

- যেসব দেশের নাগরিকদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশে ভিসা প্রয়োজন (যেমন- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ইত্যাদি): - তাদের নিজ দেশে অবস্থিত মালয়েশীয় দূতাবাস/হাইকমিশনে ভিএএল দেখিয়ে ভিসা উইথ রেফারেন্স (ভিডিআর)-এর জন্য আবেদন করতে হবে। - ভিডিআরের জন্য অতিরিক্ত কাগজপত্র (যেমন- রিটার্ন টিকেট, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ) চাওয়া হতে পারে।

- যেসব দেশের নাগরিকদের ভিসা ছাড়া প্রবেশের অনুমতি রয়েছে (যেমন- ইইউ দেশ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ইত্যাদি): - তারা শুধু ভিএএল নিয়েই মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন। তবে, ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্টে রিটার্ন টিকেট বা আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দেখাতে হতে পারে।

আরও পড়ুন>>

মালয়েশিয়ায় ভিসার জন্য কীভাবে আবেদন করবেন? কলিং ভিসায় কর্মী নিচ্ছে মালয়েশিয়া, আবেদন করবেন যেসব খাতে মালয়েশিয়ার ওয়ার্ক ভিসা কী, কীভাবে আবেদন করবেন?

- ভিসা অন অ্যারাইভাল ফর স্টুডেন্টস (ভিওএএস): - যেসব দেশে মালয়েশীয় দূতাবাস নেই, সেসব দেশের শিক্ষার্থীরা ভিএএল নিয়ে সরাসরি মালয়েশিয়ার এয়ারপোর্টে পৌঁছে ভিসা পেতে পারেন। তবে, এটি একেবারেই সীমিত কয়েকটি দেশের জন্য প্রযোজ্য (যেমন- কিছু আফ্রিকান বা দ্বীপরাষ্ট্র) এবং ইমিগ্রেশনের আগাম অনুমোদন প্রয়োজন।

* ধাপ ৪: মালয়েশিয়ায় প্রবেশ ও স্টুডেন্ট পাস ইস্যু

-মালয়েশিয়ায় প্রবেশের পর বাধ্যতামূলক পোস্ট-অ্যারাইভাল মেডিকেল স্ক্রিনিং-এর প্রয়োজন হয়।- এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর মূল পাসপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট রাজ্য ইমিগ্রেশন অফিসে জমা দেয়। তবে এই প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ কাগজপত্র শিক্ষার্থীকেই অনলাইনে ইএমজিএস পোর্টালে আপলোড করতে হয়। অর্থাৎ, শিক্ষার্থী নিজে সক্রিয়ভাবে এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। - ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে স্টুডেন্ট পাস ইস্যু করা হয়, যার মেয়াদ সাধারণত এক বছর থাকে এবং এটি প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়।

>> প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

নিচের কাগজপত্রগুলো সাধারণত ইএমজিএস এবং ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে জমা দিতে হয়:

১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফার লেটার২. ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম (ইএমজিএস পোর্টালে অনলাইনে পূরণ করতে হয়)৩. বৈধ পাসপোর্ট (মেয়াদ কমপক্ষে ১২ মাস, তবে ১৮ মাস থাকলে ভালো)৪. পাসপোর্টের ফটোকপি (ফাঁকাসহ সব পৃষ্ঠা)৫. পাসপোর্ট সাইজ ছবি (৩.৫ × ৪.৫ সেমি, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড, ২-৪ কপি)৬. অ্যাকাডেমিক সনদপত্র ও ট্রান্সক্রিপ্ট (ইংরেজিতে অনূদিত ও নোটারিকৃত)৭. কিছু ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ (যেমন- আইইএলটিএস/টোফেল)৮. আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা স্পনসরশিপ লেটার, সাধারণত ৩-৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট)৯. প্রি-মেডিকেল রিপোর্ট (মালয়েশিয়ায় প্রবেশের পর পোস্ট-মেডিকেল স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক)১০. মেডিকেল ইনস্যুরেন্স (ইএমজিএস অনুমোদিত ইন্সুরেন্স প্রয়োজন)১১. পার্সোনাল বন্ড ফর্ম (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্ট্যাম্পকৃত)১২. বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে: - আগের প্রতিষ্ঠানের রিলিজ লেটার - অ্যাটেনডেন্স রিপোর্ট - অ্যাকাডেমিক পারফরম্যান্স রিপোর্ট

>> ফি

স্টুডেন্ট পাস এবং সম্পর্কিত ফি নিম্নরূপ:

১. স্টুডেন্ট পাস ফি: বার্ষিক ৬০ রিঙ্গিত২. ইএমজিএস প্রসেসিং ফি: ১০৫০-২০০০ রিঙ্গিত (প্রতিষ্ঠান ও কোর্সের ধরনের ওপর নির্ভর করে)৩. মেডিকেল ইনস্যুরেন্স ফি: বার্ষিক ৫০০-৮০০ রিঙ্গিত (ইএমজিএস অনুমোদিত ইনস্যুরেন্স প্রোভাইডারের ওপর নির্ভর করে)৪. ভিসা ফি (ভিডিআর): দেশভেদে ভিন্ন, সাধারণত ২০-৫০ রিঙ্গিত৫. মেডিকেল স্ক্রিনিং ফি: মালয়েশিয়ায় প্রবেশের পর ২৫০-৫০০ রিঙ্গিত (ইএমজিএস অনুমোদিত ক্লিনিকে)৬. পার্সোনাল বন্ড: ফেরতযোগ্য, দেশভেদে পরিমাণ ২০০-২০০০ রিঙ্গিত (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দায়বদ্ধ)

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ফি পরিবর্তন হতে পারে। সর্বশেষ ফি-স্ট্রাকচারের জন্য ইএমজিএস বা ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট দেখুন।

>> বিশেষ শর্তাবলী

১. স্কুল ও কলেজ:- কিছু ক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি স্কুল/কলেজের শিক্ষার্থীদের আবেদন সংশ্লিষ্ট রাজ্য ইমিগ্রেশন অফিসে করতে হয়। তবে বেশিরভাগ ইএমজিএস অনলাইন সিস্টেমেই শুরু হয়।

২. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: - বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি দেশের শিক্ষার্থীদের আবেদন পুত্রজায়ার ইমিগ্রেশন হেডকোয়ার্টারে করতে হয়।

৩. প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ: - আবেদন ইএমজিএস সিস্টেমের মাধ্যমে করতে হয়।

৪. ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার: - আবেদন পুত্রজায়ার ইমিগ্রেশন হেডকোয়ার্টারে জমা দিতে হয়।

৫. ডিপেনডেন্ট পাসধারী শিক্ষার্থী: - ১৮ বছরের নিচে শিক্ষার্থীদের সাধারণত আলাদা স্টুডেন্ট পাসের প্রয়োজন হয় না; তাদের পাসপোর্টে সরাসরি শিক্ষার অনুমোদন দেওয়া হয়। - ১৮ বছরের বেশি হলে ডিপেনডেন্ট পাস থেকে স্টুডেন্ট পাসে পরিবর্তন করতে হবে, যার জন্য নতুন করে ইএমজিএসের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।

>> বিশ্ববিদ্যালয়/কোর্স পরিবর্তন

- শর্তাবলী

- নতুন প্রতিষ্ঠানের অফার লেটার এবং পুরোনো প্রতিষ্ঠানের রিলিজ লেটার প্রয়োজন। - ট্রান্সফার প্রক্রিয়া ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীকে স্পেশাল পাস নিতে হতে পারে, যা ইমিগ্রেশন অফিস থেকে ইস্যু করা হয়। - একই শিক্ষাস্তরে সর্বোচ্চ দুইবার বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করা যায়। - একই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স পরিবর্তনের জন্য নতুন আবেদন এবং স্পেশাল পাস প্রয়োজন হতে পারে। - ৯০ দিনের মধ্যে ট্রান্সফার সম্পন্ন না হলে শিক্ষার্থীকে মালয়েশিয়া ছাড়তে হতে পারে।

>> স্টুডেন্ট পাসধারীর সুবিধা

১. ডিপেনডেন্ট পাস- মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীরা তাদের স্ত্রী/স্বামী এবং সন্তানদের জন্য ডিপেনডেন্ট পাসের আবেদন করতে পারেন। - বাবা-মায়ের জন্য ডিপেনডেন্ট পাস সাধারণত বিশেষ ক্ষেত্রে (যেমন- স্বাস্থ্যগত কারণে) অনুমোদিত হয় এবং এর জন্য অতিরিক্ত নথি প্রয়োজন।

২. মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা (এমইভি) - শিক্ষার্থী ও তাদের নির্ভরশীলরা পড়াশোনার মেয়াদে একাধিকবার মালয়েশিয়ায় প্রবেশ ও বের হতে পারেন।

৩. কাজের অনুমতি - স্টুডেন্ট পাসধারীরা সীমিত সময়ের জন্য (সাধারণত সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা) পার্ট-টাইম কাজ করতে পারেন, তবে এর জন্য ইমিগ্রেশনের অনুমোদন প্রয়োজন।

>> গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

১. মেডিকেল স্ক্রিনিং: মালয়েশিয়ায় প্রবেশের পর সাতদিনের মধ্যে ইএমজিএস অনুমোদিত ক্লিনিকে মেডিকেল স্ক্রিনিং করতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক।

২. ইংরেজি ভাষার দক্ষতা: বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএস (ন্যূনতম ৫.৫-৬.০) বা টোফেল স্কোর প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষ করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য। তবে সব প্রতিষ্ঠানে এটি বাধ্যতামূলক নয়। কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব ‘ইংলিশ প্লেসমেন্ট টেস্ট’ নেয়।

৩. ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্ট: প্রবেশের সময় রিটার্ন টিকেট, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ, এবং ভিএএল-এর মূল কপি সঙ্গে রাখতে হবে।

৪. নিয়মিত আপডেট: ইমিগ্রেশন নীতিমালা পরিবর্তন হতে পারে। তাই, সর্বশেষ তথ্যের জন্য নিম্নলিখিত ওয়েবসাইট চেক করুন: - EMGS: www.educationmalaysia.gov.my - ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট: www.imi.gov.my

তথ্যসূত্র: ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট অব মালয়েশিয়া, এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিসেসকেএএ/