ভ্রমণ

মাউন্ট মানাসলু অভিযানে যাচ্ছেন বাবর আলী ও তানভীর

পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’র আয়োজনে বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ পর্বত মানাসলু (২৬,৭৮১ ফুট) অভিযানে যাচ্ছেন দুই পর্বতারোহী ডা. বাবর আলী ও তানভীর আহমেদ। ‘মানাসলু অ্যাসেন্ট: ভার্টিক্যাল ডুয়ো’ শীর্ষক এ অভিযানে দুই পর্বতারোহী চেষ্টা করবেন ‘মাউন্টেন অব দ্য স্পিরিট’ খ্যাত এই চূড়া আরোহণের। মানাসলু পর্বতের অবস্থান নেপালের মানসিরি হিমাল রেঞ্জে।

৩০ আগস্ট সকালে ঢাকার হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির অডিটোরিয়ামে ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বিস্তারিত জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্লাবের সভাপতি এবং অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান। বক্তব্য রাখেন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান সামুদার চিফ বিজনেস অফিসার বিকাশ কান্তি দাস। উপস্থিত ছিলেন মুশফিকুল আজম এবং এ কে এম মাহমুদুল হাসান।

অভিযানে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দুই পর্বতারোহীর পাশে আরও দাঁড়িয়েছেন গিগাবাইট বাংলাদেশ, সিনো ভেস্ট, ভিজুয়াল নিটওয়ারস লিমিটেড, সিয়েরা রোমিও ইন্টারন্যাশনাল এবং চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন। এ ছাড়া দেশের পর্বতারোহণ মহলের পরিচিত মুখ ও পর্বত অনুরাগীরাও উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে বাবর এবং তানভীরের হাতে তুলে দেওয়া হয় জাতীয় পতাকা।

২০২৪ সালে একই অভিযানে বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট ও চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসে আরোহণের পর এ বছরের এপ্রিল মাসে পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বত অন্নপূর্ণা-১ আরোহণ করেন পর্বতারোহী এবং ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. বাবর আলী। মানাসলু পর্বত বাবরের চতুর্থ আট হাজার মিটারি পর্বত অভিযান।

অন্যদিকে, ক্লাবের মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী তানভীর ২০২৪ সালের নভেম্বরে আরোহণ করেন হিমালয়ের ম্যাটারহর্ন খ্যাত আমা দাবলাম শিখর। মানাসলু তানভীরের প্রথম আট হাজার মিটারি পর্বত অভিযান। পৃথিবীতে সর্বমোট ১৪টি আট হাজার মিটার (২৬,২৪৬ ফুট) কিংবা তার অধিক উচ্চতার পর্বত আছে।

আরও পড়ুনআস্থার সংকটে প্লেনের টিকিট ব্যবসাশাকিলের এভারেস্ট জয়ের গল্প ও পতাকা প্রত্যর্পণ

সংবাদ সম্মলনে তানভীর বলেন, ‘গত বছর ৬,৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম অভিযানের পর থেকে আমি একটা আট হাজার মিটার পর্বতে যাওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করছিলাম। আরোহণের মৌসুম এবং নিজের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় এই মুহূর্তে মানাসলুকেই আমার কাছে সবচেয়ে উপযোগী মনে হয়েছে। বেশিরভাগ পর্বতারোহী বিশ্বের উঁচু সব পর্বতে দেশের পতাকা হাতে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। আমিও ব্যতিক্রম নই। আমি মুখিয়ে আছি মানাসলুর শৃঙ্গে লাল-সবুজ পতাকা হাতে দাঁড়ানোর জন্য। উঁচু পর্বতের চ্যালেঞ্জ নিতে আমি শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত।’

তানভীরের সহ-অভিযাত্রী বাবর বলেন, ‘এভারেস্ট-লোৎসে আরোহণের পর থেকে বিশ্বের ১৪টি আট হাজার মিটার পর্বত আরোহণের ইচ্ছা পোষণ করছি আমি। এ বছরের শুরুতে অন্নপূর্ণা-১ আরোহণের পর মানাসলু অভিযান সে লক্ষ্যের দিকে আরও একটি দৃঢ় পদক্ষেপ। ধীরে ধীরে বাকি পর্বতগুলোর চূড়াও ছুঁতে চেষ্টা করবো। মানাসলু অভিযানে তানভীর ভাইকে সহ-অভিযাত্রী হিসেবে পাওয়াটা নিঃসন্দেহে দারুণ ব্যাপার। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া দারুণ। আশা করি চমৎকার ব্যাপারটাই আমাদের চূড়ার দিকে এগিয়ে দেবে। এতদিন একা আট হাজার মিটার পর্বত অভিযানে যেতাম। এবার আমি আর একা নই, আমরা।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৫ সেপ্টেম্বর মানাসলু অভিযানের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন এই দুই পর্বতারোহী। পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নানান সরঞ্জাম কেনার কাজ শেষ করে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে বেসি শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন তারা। দিন কয়েকের ট্রেক শেষে দুই পর্বতারোহী পৌঁছাবেন মানাসলু বেজ ক্যাম্পে। মূল অভিযান শুরু হবে এখান থেকেই।

বেজ ক্যাম্প থেকে ওপরের ক্যাম্পগুলোতে ওঠানামা করে শরীরকে অতি উচ্চতা ও নিম্ন তাপমাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নেবেন দুই অভিযাত্রী। মানাসলু অভিযানে সময় লাগবে প্রায় এক মাস। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সেপ্টেম্বর মাসের ৩য় কিংবা শেষ সপ্তাহে চূড়ায় আরোহণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান। অভিযান অপারেটর হিসেবে থাকছে নেপালের স্নোয়ি হরাইজন ট্রেক্স অ্যান্ড এক্সপিডিশন।

এসইউ/জেআইএম