দেখতে দেখতে আটটি বছর পার হয়ে গেলো। ঠিক আট বছর আগে ঢাকার বুকে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল আজকের এই দিনে। টেস্টের সবচেয়ে শক্তিশালী দল ভাবা হয় যাদেরকে, সেই অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম হারিয়েছিল টাইগাররা।
আজ ৩০ আগস্ট। সময়ের পরিক্রমায় এই দিনে কতশত ঘটনা পেছনের পাতায় পড়ে রয়েছে। সেখান থেকে ক্রিকেট ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো আজকের আয়োজনে।
২০১৭: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়২০১৫ বিশ্বকাপের পর বেশ কয়েকটি বছর দাপটের সঙ্গেই ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের উপস্থিতির জানান দিয়েছিল বাংলাদেশ। এর ধারাবাহিকতায় ঘরের মাঠে পরাশক্তিগুলোকে একের পর এক পরাজিত করতে শুরু করে টাইগাররা। ২০১৭ সালে এসে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার মত দলের বিপক্ষে টেস্টে ঐতিহাসিক এক জয় অর্জন করে বাংলাদেশ।
লো স্কোরিং ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাত্র ২০ রানে জয়লাভ করে বাংলাদেশ দল। টেস্ট ক্রিকেটে ওই একবারই অস্ট্রেলিয়ানদের হারাতে পেরেছে টাইগাররা। এই টেস্ট জয়ে অবশ্য সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল তখনকার সময়ে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৮৪ রান করেন এবং দুই ইনিংস মিলে (৫+৫) ১০ উইকেট নেন।
স্যার রিচার্ড হ্যাডলির পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসে এই কীর্তি একাধিকবার অর্জন করেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ করে ২৬০ রান। জবাবে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানে অলআউট হয়ে যায়।
এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২২১ রান। জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়া সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬৫ রান। ডেভিড ওয়ার্নার ১১২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলার পরও সাকিব আল হাসানের বোলিংয়ে ধস নামে অসি ইনিংসে। ফলে ২৪৪ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। ২০ রানে জয় পায় বাংলাদেশ দল।
২০১৬: ইংল্যান্ডের ট্রিপল ফোরওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে তখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের স্কোর ছিল শ্রীলঙ্কার। ২০০৬ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪৪৩ রান করেছিল তারা। ২০১৬ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে এই রেকর্ড ভেঙে দেয় ইংল্যান্ড। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ইংলিশরা ওয়ানডে ক্রিকেটে ইতিহাস গড়ে স্কোরবোর্ডে জমা করে তিনটি চার (ট্রিপল ফোর), ৪৪৪ রান।
ইংলিশ ওপেনার অ্যালেক্স হেলসের ওই ম্যাচে তখনও পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন। তার ১২২ বলে ১৭১ রানের বিস্ফোরক ইনিংসের সৌজন্যে ইংল্যান্ড ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৪৪ রানের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। হেলসের আগে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল রবিন স্মিথের ১৬৭ রান।
ওই ম্যাচে জো রুট করেন ৮৫, জস বাটলার করেন ৫১ বলে ৯০ এবং ইয়ন মরগ্যান ২৭ বলে ৫৭ করে দলের এই বিশাল স্কোরে অবদান রাখেন। পাকিস্তানের বোলার ওয়াহাব রিয়াজ ১০ ওভারে ১১০ রান দিয়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বোলিংয়ের প্রায় রেকর্ড গড়েন।
জবাব দিতে নেমে ২৭৫ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান ম্যাচ হারে ১৬৯ রানের বিশাল ব্যবধানে এবং সিরিজও হারে তারা।
১৯৭৯: বোথামের অবিস্মরণীয় মাইলফলক১৯৭৯ সালে দ্য ওভালে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে এই দিনে ইয়ান বোথাম অসাধারণ একটি মাইফলকে পৌঁছান। ক্যারিয়ারে ২১তম টেস্টে এসে এক হাজার রান এবং একশ উইকেটের ডাবল কীর্তি গড়েন। যা ভিনু মাঁকড়ের রেকর্ড (২৩ টেস্ট) ভেঙে দ্রুততম সময়ে এ কৃতিত্ব অর্জনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়।
শুধু তাই নয়, ইয়ান বোথাম পরে এমন একটি কীর্তি গড়েন, যা তিনি ছাড়া শুধুমাত্র স্যার গ্যারফিল্ড (গ্যারি) সোবার্স অর্জন করেন। সোবার্সের পর পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ১০০০ রান, ১০০ উইকেট এবং ১০০ ক্যাচের ট্রিপল অর্জন করেন বোথাম।
১৯২৬: হবসের রেকর্ড ইনিংসএক আশ্চর্যজনক ব্যাটার ছিলেন জ্যাক হবস। ব্যাট করতে নামার পর যখনই তিনি ১০০ রানে পৌঁছে যেতেন, তখনই অনুভব করতেন ওপেনার হিসেবে তার কাজ শেষ। সত্যিই বড় বড় শতরান তাকে কখনোই আকর্ষণ করত না। শুধু ১৯২৬ সালে (৯৯ বছর আগে) আজকের এই দিনটি ছাড়া।
মিডলসেক্সের বিপক্ষে সারের হয়ে ব্যাট করার সময় জ্যাক হবস অপরাজিত থাকেন ৩১৬ রান করেছিলেন, যা তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ স্কোর এবং লর্ডসে প্রথম-শ্রেণির ম্যাচে সর্বোচ্চ। ১৯৯০ সালে গ্রাহাম গুচ ভারতের বিপক্ষে ৩৩৩ রান করার আগ পর্যন্ত এটাই ছিল লর্ডসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
সারে ৫ উইকেটে ৫৭৯ রানে ইনিংস ঘোষণা করে এবং ইনিংস ব্যবধানে জয়লাভ করে। হবসই একমাত্র ব্যাটার যিনি প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে ৬০ হাজারের বেশি (৬১ হাজার ৭৬০) রান করেছেন। আপনি শুধু কল্পনা করে দেখুন যে, তার রানের সংখ্যাটা আরও কত হতে পারতো যে, তিনি যদি ডন ব্র্যাডম্যানের মতো বিড় স্কোরের প্রতি আগ্রহ থাকতো!
২০০১: পাকিস্তানের পাঁচ সেঞ্চুরির এক রেকর্ড২০০১ সালে মুলতানে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের বিপক্ষে এক ইনিংসেই পাকিস্তানী ব্যাটাররা পাঁচটি শতকের বিশ্ব রেকর্ড স্পর্শ করেন। সাঈদ আনোয়ার (১০১), তৌফিক উমর (অভিষেকে ১০৪), ইনজামাম-উল-হক (১০৫), মোহাম্মদ ইউসুফ (১০২) এবং আবদুল রাজ্জাক (১১০) সেঞ্চুরি হাঁকান। শুধু ফয়সাল ইকবাল আউট হন ৯ রানে। বাকিদের সবাই সেঞ্চুরি করেন।
১৯৫৫ সালে কিংসটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ৫ জন ব্যাটার সেঞ্চুরি করেছিলেন। সেবারের পর ২০০১ সালে ৫ মুলতানে বাংলাদেশের বিপক্ষে এক ইনিংসে ৫ ব্যাটারের সেঞ্চুরির দ্বিতীয় ঘটনা ঘটলো।
বাংলাদেশ ১৩৪ রানে অলআউট হয়। দানিশ কানেরিয়া নেন ৬ উইকেট। ৫ সেঞ্চুরিতে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৩ উইকেটে ৫৪৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয় ১৪৮ রানে। কানেরিয়া ৬টি এবং ওয়াকার ইউনুস নেন ৪ উইকেট। পাকিস্তান ইনিংস ও ২৬৪ রানে জয় পায়।
১৯৪৯: রোলি জেনকিন্সের ডাবল হ্যাটট্রিকএকই ম্যাচে দুটি হ্যাটট্রিকের ঘটনা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রয়েছে ৭টি। অর্থ্যাৎ, ৭ জন বোলার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একই ম্যাচে দু’বার হ্যাটট্রিক করেন। যার একজন ইংলিশ লেগস্পিনার রোলি জেনকিন্স।
১৯৪৯ সালে ওরচেস্টারশায়ারের হয়ে সারের বিপক্ষে ম্যাচের শেষ তথা আজকের এই দিনে রোলি জেনকিন্স এক ম্যাচে দুটি হ্যাটট্রিক করেন। ক্যারিয়ারে মোট তিনটি হ্যাটট্রিক করেছিলেন রোলি। যার দুটি এই একই ম্যাচে।
আইএইচএস/