আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানে বন্যায় বিপর্যস্ত ১৫ লাখেরও মানুষ, আরও বৃষ্টির শঙ্কা

ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পাকিস্তানের কয়েকটি প্রদেশ। টানা ভারী বর্ষণের পর চেনাব, রবি ও শতদ্রু নদীর পানি একসঙ্গে উপচে পড়ায় তৈরি হয়েছে নজিরবিহীন পরিস্থিতি। এই তিনটি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি একই সময়ে ফুলে ওঠা পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম। এতে পাঞ্জাব প্রদেশে ২ হাজার ৩০০টিরও গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তর নতুন করে আরও বৃষ্টি, ঝড় ও বজ্রঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে। এতে বন্যার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পাঞ্জাব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জুনের শেষ দিক থেকে শুরু হওয়া মৌসুমি বন্যায় এখন পর্যন্ত ৮৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু পাঞ্জাব প্রদেশেই মারা গেছেন ১৯৫ জন। প্রাণহানির পাশাপাশি ফসল, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও বিপুল সংখ্যক গবাদিপশু বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৮১ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রাণ বাঁচাতে ৪ লাখেরও বেশি গবাদিপশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখেরও বেশি। পাঞ্জাব সরকারের ত্রাণ কার্যক্রমের প্রধান নাবিল জাভেদ বলেছেন, এটাই পাঞ্জাবের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উদ্ধার অভিযান।

প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার প্রধান ইরফান আলী খান সংবাদ সম্মেলনে জানান, একটি জীবনও অবহেলায় ফেলে রাখা হচ্ছে না। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত আছে ৮০০টিরও বেশি নৌকা ও ১ হাজার ৩০০ জন কর্মী। বন্যাকবলিত মানুষ ও তাদের গবাদিপশুর জন্য ৫০০টির বেশি ত্রাণকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, বন্যায় তাদের ফসল ও ঘরবাড়ি সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। পাঞ্জাবের কাসুর জেলার কৃষক সাফদার মুনির বলেন, পানি সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। গবাদিপশুগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাইনি।

আরেক কৃষক আবিদ বলেন, প্রাণপণ চেষ্টা করে তিনি পশুগুলোকে রক্ষা করতে পেরেছেন। কিন্তু ফসল ও জমি সবই পানির নিচে।

পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। শহরের উপকণ্ঠ শাহদারায় বহু পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন আবাসিক এলাকার অনেকটাই পানিতে ডুবে আছে। শনিবারও (৩০ আগস্ট) লাহোরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে।

এর আগেও পাকিস্তান ভয়াবহ বন্যার শিকার হয়েছে। ২০২২ সালে নজিরবিহীন বন্যায় দেশটির এক-তৃতীয়াংশ ডুবে গিয়েছিল, যেখানে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সিন্ধ প্রদেশ। এবারের পরিস্থিতি সেই ভয়াবহতার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

সূত্র: আল জাজিরা

এসএএইচ