চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, চমেকে আহতদের মধ্যে ৭৭ জন, পার্কভিউ হাসপাতালে ২৪ জন, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ১২ জন, হাটহাজারী হাসপাতালে ১০ জন এবং ন্যাশনাল হাসপাতালে ৭ জন ভর্তি আছেন।গুরুতর আহত ৩ জন ভর্তি আছেন পার্কভিউ হাসপাতালে।
তিনি জানান, সমন্বিতভাবে আমরা আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করবো। চিকিৎসায় কোনো ধরনের ঘাটতি হবে না বলেও জানান তিনি।
চমেকের ডিউটি ডাক্তার বুশরা জানান, প্রায় ১০০ জনের কাছাকাছি হাসপাতালে এসেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। তবে বেশিরভাগই ভর্তি রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম জানান, ছোট একটা ঘটনাকে পরিকল্পিতভাবে বড় করে স্থানীয়রা আমাদের ছেলেদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের ২ শতাধিক শিক্ষার্থীকে তারা মেরে, কুপিয়ে আহত করেছে।
তিনি প্রশাসনের কাছে এই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রদল নেতা জানান, ফ্যাসিবাদী শক্তিরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতারা জোবরা এলাকায় থাকে। তারা পরিকল্পিতভাবে আমাদের আক্রমণ করেছে। আমরা এটার দ্রুত বিচার চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের বাইতুল মালের সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের এক শিক্ষার্থীর মারধরের ছোট বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা করেছে। এ পর্যন্ত ২ শতাধিক আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ৪।শিবিরের পক্ষ থেকে আহত শিক্ষার্থীদের জন্য চট্টগ্রামের প্রাইভেট হাসপাতাল পার্কভিউ, মেট্রোপলিটন ও ন্যাশনালকে ওপেন করে দিয়েছে। আমরা সবসময়ই শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতে আমরা পাশে থাকবো।
এর আগে, সংঘর্ষের ঘটনায় ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুরে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেহেতু অদ্য ৩১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে সকাল আনুমানিক সাড়ে ১১টায় স্থানীয় জনসাধারণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরস্পর মুখোমুখি ও আক্রমণাত্মক হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং বর্তমানে পক্ষসমূহ আক্রমণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।
সেহেতু, আমি মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আমার ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা এবং শান্তিশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্বসীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে রোববার দুপুর ২টা থেকে আগামীকাল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করলাম।
ওই সময়ে উল্লিখিত এলাকায় সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সব প্রকার দেশি অস্ত্র ইত্যাদি বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচ বা ততধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলাম।
এএমএ/জেআইএম