দূষণ ও দখল থেকে ধলেশ্বরী নদী রক্ষায় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সিএস জরিপ ও মূল প্রবাহ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণপূর্বক তা রক্ষায় নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়ের করা জনস্বার্থে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রোববার (৩১ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন এবং বিচারপতি ফয়েজ আহমেদ এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বেলার পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার মিনহাজুল হক চৌধুরী এবং তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট তৌহিদুল আলম। আর রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান।
ঢাকা জেলার সাভার উপজেলাধীন দক্ষিণ দরিয়াপুর মৌজায় ধলেশ্বরী নদীর অংশবিশেষে বিদ্যমান সব স্থাপনা অপসারণ করে নদী পুনরুদ্ধারের এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী ধলেশ্বরী নদীকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা ও সেই মোতাবেক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যথাযথ সংরক্ষণের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
রুল জারির পাশাপাশি আদালত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও ঢাকার জেলা প্রশাসককে আইন অনুযায়ী তদন্ত করে নদী দখল ও দূষণকারীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছেন।
পাশাপাশি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলাধীন দক্ষিণ দরিয়াপুর মৌজার ধলেশ্বরী নদীর অংশে অবস্থিত সব স্থাপনা অপসারণপূর্বক নদীটিকে পুনরুদ্ধারের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত ও তা আদালতে দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
সেই সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা জেলার কার্যালয়ের উপপরিচালককে ধলেশ্বরী নদী সংলগ্ন শিল্প-কারখানাগুলো বর্জ্য পরিশোধনাগারসহ (ইটিপি) অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাদি প্রতিস্থাপিত হয়েছে কিনা ও সচল আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ সব আদেশ প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ৪ মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ধলেশ্বরী নদী ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা নদী। দুইটি শাখা নদীতে বিভক্ত এ নদীর একটি শাখা টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার হুসেইনদি ইউনিয়নে এসে মেঘনা (আপার) নদীতে মিলেছে। নদীটির গতিপথে বংশী, কালিগঙ্গা (মানিকগঞ্জ), গাজীখালী, ইছামতি (মানিকগঞ্জ), ইছামতি (সিরাজদিখান), বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা নদীগুলো মিলিত হয়েছে। ২৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীতে বছরব্যাপী পানির প্রবাহ থাকে, যা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত একটি নৌ-পথ।
দেশের অন্যান্য নদীর মতো দখল ও দূষণে জর্জরিত প্রাচীন এই নদী। সাভার উপজেলার দক্ষিণ দরিয়াপুর মৌজার ভাগলপুর এলাকার মনুমিয়ার ঘাটে সিএস জরিপে নদীর জমি থাকা সত্ত্বেও সেখানে এসএ দাগ সৃজন করা হয়েছে। সেই দাগে ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’সহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, যা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে।
এ ছাড়াও নদীর তীরে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানাসমূহে ইটিপিসহ দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাদি কার্যকরভাবে চালু না থাকায় ধলেশ্বরী নদী তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সম্পদ হারাচ্ছে। এ মতাবস্থায়, নির্ধারিত নৌ পথ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে দখল ও দূষণ থেকে ধলেশ্বরী নদী রক্ষায় বেলা উল্লেখিত জনস্বার্থমূলক মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীরা হলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব; ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়য়ের সচিব; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক; ঢাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
এফএইচ/এনএইচআর/এমএস