এক বছর ২৩ দিনের মধ্যে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। একই সঙ্গে চলতি বছরে প্রথমবারের মতো এক হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। এমন ইতিবাচক বাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দাপট দেখিয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠান।
এই সাত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এরমধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দিনের সর্বোচ্চ দামের সীমা স্পর্শ করেছে। দিনের সর্বোচ্চ দামে প্রতিষ্ঠান তিনটির শেয়ারের বিক্রয় আদেশের ঘর একপর্যায়ে শূন্য হয়ে পড়ে। দিনের সর্বোচ্চ দামেই প্রতিষ্ঠান তিনটির শেয়ার বিক্রি হয়েছে।
এ তিন প্রতিষ্ঠান হলো- ইনটেক লিমিটেড, জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও নূরানী ডাইং। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখানো বাকি চার প্রতিষ্ঠান হলো- নূরানী ডাইং, বিডিকম অনলাইন, গোল্ডন সন, ফু-ওয়াং সিরামিক এবং শ্যামপুর সুগার মিল।
ইনটেক লিমিটেডডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে ইনটেক লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ৪১ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩ টাকা ৭০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি লোকসানের মধ্যে রয়েছে।
সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি ২৯ পয়সা লোকসান হয়েছে। এদিকে, ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের দশমিক ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগে ২০২০ সালে ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তবে ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।
২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ১৩ লাখ ২১ হাজার ২২৬টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে আছে ৩০ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে দশমিক ২২ শতাংশ শেয়ার আছে।
জাহিনটেক্সসর্বোচ্চ দাম বাড়ার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম ৫০ পয়সা বা ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০১৮ সালের পর বিনিয়োগ কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। ফলে কোম্পানিটি বর্তমানে পচা ‘জেড’ গ্রুপে রয়েছে।
২০১১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৮ কোটি ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৯টি। এরমধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে আছে ৩৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪১ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ শেয়ার আছে।
নূরানী ডাইংনূরানী ডাইংয়ের শেয়ার দাম ২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ২ টাকা ৭০ পয়সা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম ২০ পয়সা বা ৮ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০১৮ সালের পর বিনিয়োগ কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। ফলে কোম্পানিটি বর্তমানে পচা ‘জেড’ গ্রুপে রয়েছে।
২০১৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার ৩০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে আছে ৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫১ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৭ দশমিক ২৮ শতাংশ শেয়ার আছে।
বিডিকম অনলাইনবিডিকম অনলাইনের শেয়ার দাম ৩০ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩২ টাকা ৮০ পয়সা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম ২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে ১০ শতাংশ নগদ, ২০২২ সালে ১০ শতাংশ নগদ এবং ২০২১ সালে ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছেন।
২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫ কোটি ৯৯ লাখ ৪০ হাজার ৮২৩টি। এরমধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে আছে ৩০ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬১ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ শেয়ার আছে।
গোল্ডেন সনগোল্ডেন সনের শেয়ার দাম ১২ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম ৯০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০২৪ সালের ৩০ জুন বিনিয়োগকারীদের ১ দশমিক ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে ১ শতাংশ নগদ, ২০২১ সালে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ নগদ এবং ২০২০ সালে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।
২০০৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৭ কোটি ১৭ লাখ ২৯ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে আছে ৩৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার আছে।
ফু-ওয়াং সিরামিকফু-ওয়াং সিরামিকের শেয়ার দাম ১৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৪ টাকা ৭০ পয়সা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম ১ টাকা বা ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে ২ শতাংশ নগদ, ২০২২ সালে ২ শতাংশ নগদ, ২০২১ সালে ২ শতাংশ নগদ এবং ২০২০ সালে ১ দশমিক ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।
১৯৯৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩টি। এরমধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে আছে ৩০ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার আছে।
শ্যামপুর সুগার মিলশ্যামপুর সুগার মিরের শেয়ার দাম ১৭২ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৮৫ টাকা ১০ হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম ১২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি বছরের পর বছর ধরে লোকসানে নিমজ্জিত। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না।
১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওযা কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫০ লাখ। এর মধ্যে সরকারের কাছে আছে ৫১ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ শেয়ার আছে।
এমএএস/এমকেআর/এমএস