অর্থনীতি

৩০ বছরে বিনিয়োগ ৬৫ বিলিয়ন ডলার, কাজের সুযোগ হবে ২৫ লাখ মানুষের

মহেশখালী ও মাতারবাড়ী ঘিরে দেশের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে চায় সরকার। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) এক সমীক্ষা বলছে, আগামী ২০-৩০ বছরে এ অঞ্চলে ৬০ থেকে ৬৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে। কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে ২৫ লাখ মানুষের।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে মহেশখালী-মাতারবাড়ী ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (মিডা) প্রকল্প। সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়নভিত্তিক এ প্রকল্পের লক্ষ্য আগামী ৩০ বছরের মধ্যে মহেশখালীকে সাংহাই ও সিঙ্গাপুরের মতো আধুনিক বন্দরে রূপান্তর করা।

বন্দর ও লজিস্টিকস, উৎপাদনশিল্প, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং মাছ ধরা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ—এ চারটি মূল খাতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে এ হাব।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এসব বিষয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মন্ডল।

তিনি বলেন, সমুদ্রবন্দর, জ্বালানি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অর্থনৈতিক অঞ্চলকে একসঙ্গে গড়ে তুলে মহেশখালীতে তৈরি করা হচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক হাব।

আরও পড়ুন মহেশখালী-মাতারবাড়ীতে নতুন শহরের জন্ম হবে: প্রধান উপদেষ্টা মাতারবাড়ী-মহেশখালীকে সাংহাই-সিঙ্গাপুরের মতো দেখতে চাই

জাইকার সমীক্ষা বলছে, আগামী ২০-৩০ বছরে এ অঞ্চলে ৬০-৬৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে। এরমধ্যে প্রায় ৪৭-৪৮ বিলিয়ন ডলার আসবে বেসরকারি খাত থেকে; যার ১০ শতাংশ হবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)। এতে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার সংযোজন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে তৈরি হবে প্রায় দেড় লাখ প্রত্যক্ষ ও ২৫ লাখ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান।

বন্দর ও লজিস্টিকসমাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দর প্রাকৃতিকভাবে ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীর হওয়ায় বড় জাহাজ সরাসরি ভিড়তে পারবে। এটি চালু হলে দেশের পোর্ট ক্যাপাসিটি আগামী ৩০ বছরে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়বে।

ধারণা করা হচ্ছে, দেশের মোট বাল্ক কার্গোর ২৫ শতাংশ ও কনটেইনার কার্গোর ৪৫ শতাংশ এ বন্দর দিয়ে পরিচালিত হবে। এতে আমদানি খরচ কমে ১২ কেজির একটি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম প্রায় ৫০ টাকা কমতে পারে।

উৎপাদনশিল্পবন্দরকেন্দ্রিক এ অঞ্চলে ইস্পাত, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিকসসহ ৯টি শিল্প খাত গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে। দীর্ঘমেয়াদে শুধু উৎপাদন খাতেই বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। এ হাব বাংলাদেশের মোট উৎপাদন খাতের প্রায় ১০ শতাংশ অবদান রাখবে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎবিদ্যুতের চাহিদা বছরে গড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হারে বাড়ছে। মাতারবাড়ী-মহেশখালী এলাকা হয়ে উঠতে পারে দেশের জ্বালানি আমদানির প্রধান কেন্দ্র। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৮-১০ এমটিপিএ ক্ষমতাসম্পন্ন তেল পরিশোধনাগার গড়ে তোলা হলে ৩০ বছরে মোট চাহিদার ৩৫ শতাংশ পূরণ সম্ভব হবে। এতে বছরে প্রায় ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

মৎস্য খাতবঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্র মৎস্যসম্পদ এখনো পুরোপুরি ব্যবহার হয়নি। বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান ওশান টুনা কমিশনের সদস্য হওয়ায় টুনা মাছ ধরায় বড় সুযোগ রয়েছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২৮টি লংলাইনার ফিশিং ভেসেল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মাতারবাড়ী বন্দর দিয়ে চট্টগ্রিয়ার চকরিয়ার চিংড়ি শিল্পসহ অন্যান্য মাছ দ্রুত ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে রপ্তানি করা যাবে। শুধু স্ক্যালপ প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানিতেই সম্ভাবনা রয়েছে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজার তৈরির।

আরও পড়ুন মহেশখালী-মাতারবাড়ি হবে ‘নিউ সিঙ্গাপুর’

বিডা জানায়, মহেশখালী–মাতারবাড়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে—ইনকিউবেশন, এক্সপ্যানশন ও ডাইভারসিফিকেশন। আগামী ২০২৫ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে ১২০ দিনের কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে এই প্রকল্প শুধু কক্সবাজার অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনীতি টিকিয়ে রাখবে না, বরং জাতীয় প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে।

এসএম/এমকেআর/এএসএম