জাতীয়

অর্থপাচার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে

প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও জনগণের কল্যাণকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এমন মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টরন্যাশনাল বাংলোদশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বোর্ড সদস্য ড. সুমাইয়া খায়ের ও আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

ফ্রাঁসোয়া বলেন, প্রতিবছর যে ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়, সেটি কেবল একটি অংক নয়। ওই অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার হলে বাংলাদেশের জিডিপি আরও বড় হতো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়তো এবং জনগণের জীবনমান উন্নত হতো।

বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচারের কথা শোনা গেলেও, পাচারের পরিমান আরও বেশি বলেও জানান তিনি।

টিআই এর চেয়ারপারসন আরও বলেন, দুর্নীতি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতিই করে না, বরং গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের ওপর হামলা, হুমকি ও হয়রানি বাড়লে রাষ্ট্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।

সহিংসতা ও ভয়ের পরিবেশে কখনোই গণতন্ত্রের পুনর্গঠন সম্ভব নয় জানিয়ে ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, গোপনীয়তাই দুর্নীতির প্রধান চালিকাশক্তি। তিনি বেনিফিশিয়াল ওনারশিপ ট্রান্সপারেন্সি নিশ্চিত করতে খসড়া আইন দ্রুত পাস করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সম্প্রতি সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হয়রানি ও হত্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা তথ্য গোপনের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়ছেন। অথচ বাংলাদেশে সাংবাদিকদের হয়রানি, হত্যার ঘটনা বেড়ে চলেছে। ভয় ও সহিংসতার পরিবেশে কখনোই গণতন্ত্র পুনর্গঠন সম্ভব নয়।

এ সময় ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়, তা কেবল অংকের হিসাব দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। এই অর্থ দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারকে কেড়ে নিচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বর্তমানে দুর্নীতি দমনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত হয়নি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা। এর ব্যত্যয় ঘটলে যে কোনো সংস্কার উদ্যোগই টেকসই হবে না।

টিআইবির পদ এবং একইসঙ্গে অন্তবর্তী সরকারে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধানের পদে থাকা স্বার্থের দ্বন্দ্ব কি না- সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের কাছ থেকে ইফতেখারুজ্জামান এই কাজে কোনো সম্মানি নেননি। এমন কী অফিসসহ কোনো সুযোগ-সুবিধাও নেননি।

তিনি আরও বলেন, দুদকের জন্মলগ্ন থেকে জড়িত টিআইবি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা দুদকের সঙ্গে আছি । কারণ দুদকে আমাদের একটা স্টেইক আছে। সহায়তার জন্য দুদক আমাদর সাধুবাদ দিয়েছে, সমালোচনার জন্য তিরস্কার করেছে।

দুদকের সঙ্গে টিআবির এর সম্পর্কটা ‘লাভ-হেইট’ রিলেশনশিপ। আমরা সবসময় দুদকের সহযোগীতা যেমন করেছি, তাদের কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচকও আমরা। এই পদটা নেওয়ার সময় আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করেই তা নিয়েছি।

এসএম/এএমএ/এমএস