আইন-আদালত

আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ‘নগদে’ পরামর্শক নিয়োগ নয়

মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেওয়া আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরামর্শক নিয়োগ বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না না বলে জানিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার জজ আদালত এই আদেশ দেন। আদেশর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির।

আদালতে এদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। অন্যদিকে নগদের স্বতন্ত্র পরিচালক শাফায়েত আলমের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির জানান, গত ৩১ আগস্ট জাতীয় দৈনিকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে রিটকারী চেম্বার জজ আদালতে পরামর্শক নিয়োগ স্থগিতাদেশ চেয়ে দরখাস্ত করেন।

আদালতের আবেদনের তথ্য তুলে ধরে নওশাদ জানান, রিটকারী তার দরখাস্তে উল্লেখ করেন যে, নগদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে ২০১৭ সালে একটি ক্রয়াদেশ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘নগদ লিমিটেড’ নগদ পরিচালনার জন্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পরবর্তীতে প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে পোস্ট অফিসের সঙ্গে চুক্তি স্বক্ষরিত হয়। চুক্তির ভিত্তিতে (এমএফএস) সব রকমরে বিনিয়োগ ও বাজাজাত করার দায়িত্ব গ্রহণ করে নগদ লিমিটেড। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, শেয়াল গোল্ডাররা প্রায় ১৬ শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। নগদে প্রশাসক নিয়োগের আগ পর্যন্ত নগদের প্রতিদিনের লেনদেন ৫ শ থেকে ২২ শ কোটি টাকা পর্যন্ত হয়েছিল।

ব্যারিস্টার নওশাদ জমির জানান, নগদ লিমিটেডে প্রশাসক নিয়োগের আইন কার্যকর ছিল না। পরবর্তীতে ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর করা হয় বলে শুনানিতে তুলে ধরেন আইনজীবী।

এর আগে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেওয়া আদেশ স্থগিত করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ২ জুন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ গত সোমবার এ আদেশ দেন। নগদ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের দেওয়া আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেওয়া হয়।

আদেশের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী বি এম ইলিয়াস কচি ওইদিন বলেন, প্রশাসক নিয়োগ স্থগিত করে চেম্বার জজ আদালত আদেশ দিয়েছিলেন। এই আদেশ স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তিনি আছেন। আপিল বিভাগের আদেশের ফলে প্রশাসকের কার্যক্রম পরিচালনায় আইনগত কোনো বাধা নেই।

২০২৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক নগদে প্রশাসক নিয়োগ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ আদেশ জারি করে। প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নগদের স্বতন্ত্র পরিচালক মো. শাফায়েত আলম একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর রিট করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে তা খারিজ করে রায় (রুল ডিসচার্জ) দেন।

নগদে প্রশাসক নিয়োগসংক্রান্ত গত বছরের ২১ আগস্টের আদেশ এবং এ নিয়ে হাইকোর্টের ১৬ ফেব্রুয়ারি দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে মো. শাফায়েত আলম আপিল বিভাগে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে গত ৭ মে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত প্রশাসক নিয়োগসংক্রান্ত আদেশ এবং এ নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। এ সময়ের মধ্যে আবেদনকারীকে (নগদের স্বতন্ত্র পরিচালক মো. শাফায়েত আলম) নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ অবস্থায় শুধু প্রশাসক নিয়োগসংক্রান্ত গত বছরের ২১ আগস্টের আদেশ স্থগিতের অংশটুকু প্রত্যাহার চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ মে আবেদন করে, যা পরদিন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে ওঠে। গত ১৪ মে চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আবেদনটি আপিল বিভাগের ২ জুনের কার্যতালিকায় শুনানির জন্যে ওঠে।

আদালতে ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বি এম ইলিয়াস কচি শুনানিতে ছিলেন। অন্যদিকে শাফায়েত আলমের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নওশাদ জমির। এফএইচ/এমএমকে/জেআইএম