একুশে বইমেলা

বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কি কমে যাচ্ছে?

একসময় অবসর মানেই ছিল বই হাতে নিয়ে বসা। দুপুরের রোদেলা বারান্দা, গ্রামের স্কুলের লাইব্রেরি কিংবা শহরের পাঠাগারের শান্ত কোণে মানুষের প্রিয় সঙ্গী ছিল বই। গল্প, উপন্যাস, জীবনী, প্রবন্ধ যেন নতুন জগতের দরজা খুলে দিতো। তবে বর্তমানের দৃশ্য যেন একেবারেই ভিন্ন। এখন হাতে হাতে স্মার্ট ফোন। আঙুলের স্পর্শে ভেসে আসে অসংখ্য ভিডিও। চলছে গেমস আর ভাইরাল ঝড়। ফলে বইয়ের প্রতি মানুষের সেই আগ্রহ অনেকটাই যেন কমে যাচ্ছে।

স্মার্ট ফোন আসার পর মানুষ বেশি সময় কাটাচ্ছে স্ক্রলিং আর স্ক্রিনে চোখ আটকে রেখে। শিশু থেকে তরুণ, তরুণ থেকে প্রবীণ সবাই প্রযুক্তির এই ঘূর্ণিপাকে জড়িয়ে পড়েছেন। অথচ কয়েক দশক আগেও বই ছিল বিনোদনের অন্যতম সেরা মাধ্যম। সন্ধ্যার পর টেলিভিশনের সীমিত কয়েকটি অনুষ্ঠান বাদ দিলে একমাত্র আশ্রয় ছিল বই। আজ সেই আসক্তি কেড়ে নিয়েছে ফেসবুক, ইউটিউব আর নানা রকম মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন।

তবে এ-ও সত্য, বই কেবল বিনোদনের উৎস নয়; জ্ঞানের ভান্ডারও বটে। গবেষণা বলছে, নিয়মিত বইপড়া মানুষের মনোযোগ বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ করে এবং মানসিক চাপ কমায়। বিশেষ করে প্রবীণদের ক্ষেত্রে বইপড়ার অভ্যাস জ্ঞানীয় অবক্ষয় ধীর করে এবং তাদের সামাজিক ও মানসিকভাবে আরও সক্রিয় রাখে। এই সহজ, সস্তা অথচ মূল্যবান বিনোদন ও শিক্ষার উৎস থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত দূরে সরে যাচ্ছে।

তবে এমন প্রেক্ষাপটেও প্রতি বছর ৬ সেপ্টেম্বর পালিত হয় ‘জাতীয় বই পাঠ দিবস’ বা ‘ন্যাশনাল রিড আ বুক ডে’। দিনটিতে অন্তত অনেকেই একটি বই হাতে নিয়েছেন! একটু সময় বের করেছেন। পড়েছেন গল্প, কবিতা কিংবা উপন্যাস। শুধু নিজের জন্য নয়, পাশের মানুষকেও অনুপ্রাণিত করেছেন।

অতীতের মতো বই আমাদের নতুন করে পথ দেখাতে পারে। প্রিয় কোনো পুরোনো বই আবার হাতে নিন কিংবা জনপ্রিয় কোনো বই কিনে পড়তে শুরু করুন। চাইলে স্থানীয় লাইব্রেরি বা বইয়ের দোকানে ঘুরে আসতে পারেন। ইতিহাস, স্মৃতিচারণ, উপন্যাস বা কবিতায় ডুব দিতে পারেন। যদি শিশুদের সঙ্গে নিয়ে পড়েন, সেটি হবে দ্বিগুণ আনন্দের।

আরও পড়ুন

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘শ্যামল ছায়া’ আলোচিত বাংলা উপন্যাসে বৃষ্টির ধারা

তাই এখনই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গোরা’ ও ‘গীতাঞ্জলি’, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’, জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন’, বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’ রাখতে পারেন প্রথম পছন্দে। রাখতে পারেন সেলিনা হোসেনের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’।

পাশাপাশি মোটিভেশনাল বই ‘অ্যাটমিক হ্যাবিটস’, ‘থিঙ্ক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ বা ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সোলিটিউড’ও পড়া শুরু করতে পারেন। এ ধরনের বই পাঠকের হাতে থাকলে শুধু সাহিত্যচর্চাই নয়; সমাজ, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কেও নতুনভাবে জানার সুযোগ তৈরি হবে।

তবে আমরা যা পড়ি; তা নিজের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখি। অথচ বিনিময় করলে আনন্দ বাড়ে। শিশুদের গল্প পড়ে শোনানো, দাদা-দাদির সঙ্গে কোনো উপন্যাসের কাহিনি ভাগ করা কিংবা বন্ধুদের মধ্যে বই বিনিময় করা হতে পারে নিত্যদিনের অংশ। উদ্দেশ্য একটাই, বইয়ের জগতকে জীবনের অংশ হিসেবে গড়ে তোলা।

প্রযুক্তি আমাদের জন্য অবশ্যই কল্যাণকর। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। আবার বইয়ের বিকল্পও কিছু নেই। স্মার্ট ফোনের আলোয় চোখে আসে ক্লান্তি। বইয়ের পাতায় চোখ রাখলে মন হয় প্রশান্ত। তাই আমদের প্রতিজ্ঞা হোক, ব্যস্ততার মাঝেও প্রতিদিন কিছুটা সময় বের করবো বইপড়ার জন্য।

এসইউ/এমএস