ফরাসি উপকূল থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য। দুই দেশের মধ্যে চলতি বছরের জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত ‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ চুক্তির আওতায় আগামী সপ্তাহ থেকে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, প্রথম দফায় মাত্র কয়েকজন অনিয়মিত অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে। প্রক্রিয়াটি আপাতত পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। প্রয়োজনে এটি স্থগিতও হতে পারে। ফরাসি কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে এই ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা খুব শিগগির অভিবাসীদের প্রথম দলটিকে ফেরত পাঠানোর আশায় রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের সীমান্ত সুরক্ষা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
চুক্তির অধীনে গত মাসে যুক্তরাজ্যের ডোভার থেকে কয়েক ডজন অভিবাসীকে আটক করা হয়েছিল। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শাবানা মাহমুদ জানিয়েছেন, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ফ্রান্সে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে আটক হওয়া অভিবাসীদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে। এরপর ফরাসি অভিবাসন ও ইন্টিগেশন দপ্তর তাদের নিজ দেশে স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেবে। যারা এই সুযোগ গ্রহণ করবেন না ও আশ্রয়ের যোগ্যতা অর্জন করবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ‘অব্লিগেশন দ্য কুইটার লে টেরিতোয়ার’ (ওকিউটিএফ) বা ফ্রান্স ছাড়ার বাধ্যতামূলক নির্দেশ জারি হতে পারে।
ফরাসি অভিবাসন দপ্তরের মহাপরিচালক দিদিয়ে লেসচি বলেছেন, আমরা চাই তারা সহায়তা নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাক। তবে যারা অস্বীকৃতি জানাবে, তাদের ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো প্রতি অভিবাসীর বিপরীতে ফ্রান্স থেকে নিয়মিত পথে সমানসংখ্যক মানুষকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। দুই দেশই একে অভিবাসন ব্যবস্থায় ভারসাম্য রক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো শুরু থেকেই এই চুক্তির সমালোচনা করছে। তাদের দাবি, এ ব্যবস্থার ফলে নিরাপদ অভিবাসন পথ আরও সঙ্কুচিত হবে এবং শরণার্থীদের জন্য ঝুঁকি বাড়বে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ হাজার মানুষ ছোট নৌকায় চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দেশটিতে পৌঁছেছেন, যা বছরের এই সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যা। শুধু গত সপ্তাহেই দুই দফায় চ্যানেল পার হওয়ার সময় তিন জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও তিন জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে ফরাসি কর্তৃপক্ষ।
ফরাসি ও ব্রিটিশ সরকার বলছে, এই পাইলট প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো অনিয়মিতভাবে চ্যানেল পাড়ি ঠেকানো এবং একই সঙ্গে বৈধ অভিবাসনের পথ খোলা। তবে অভিবাসনবিষয়ক সংগঠনগুলোর মতে, সীমান্ত কঠোর করার পরিবর্তে নিরাপদ পথ বাড়ানোই হবে টেকসই সমাধান।
সূত্র: বিবিসি, ইনফোমাইগ্রেন্ট
এসএএইচ