এখন সময়টা জ্বরের। বেশ কিছুদিন ধরে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এডিস মশাবাহিত এই দুই রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ প্রায় একই রকম। এছাড়া এই দুই ধরনের ভাইরাস প্রায় একই সময়ে দেখা দেয় বলে বোঝা যায় না যে, ডেঙ্গু হয়েছে নাকি চিকুনগুনিয়া।
বুঝে উঠতে না পেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অনেকেই। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এই দুই রোগের উপসর্গ কাছাকাছি হলেও বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্যগুলো জানা থাকলে চিকিৎসা দ্রুত করা যাবে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু নাকি চিকুনগুনিয়া হয়েছে-
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মধ্যে পার্থক্য
১. ডেঙ্গু সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সেরে যায়। চিকুনগুনিয়ার রোগী ৭ থেকে ১০ দিনে সেরে উঠলেও ব্যথা কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এমনকি জ্বর সেরে গিয়ে আবারও হতে পারে।
২. ডেঙ্গু হলে জ্বরের সঙ্গে মাথা ও পেশিতে ব্যথা হয়ে থাকে। চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কখনো জয়েন্ট ফুলেও যায়।
৩. ডেঙ্গু জ্বরে শরীরের র্যাশ দেখা দেয়। জটিলতা হিসেবে নাক বা চোখের কনজাংটিভায় (চোখের একটি পাতলা ও স্বচ্ছ আবরণ) রক্তক্ষরণ হতে পারে। তবে চিকুনগুনিয়া জ্বরে র্যাশ তেমন একটা দেখা যায় না।
৪. গত কয়েক বছরে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গের ধরন বেশ কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে।
ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ
১. ডেঙ্গু জ্বরে তীব্র তাপমাত্রা থাকে। তবে সর্দিকাশি থাকে না।
২. চার-পাঁচদিন পরে শরীরে লাল লাল র্যাশ হয়।
৩. ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা অনেক সময় শক সিনড্রোমে চলে যান।
৪. ডেঙ্গু জ্বরে রক্তের প্লাটিলেট (অণুচক্রিকা) কমতে যায়। ফলে রক্তক্ষরণ হয়।
৫. ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। তিন-চার দিন পর জ্বরের প্রকোপ কমে গেলেও জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৬. ডেঙ্গু জ্বরে চোখের পেছনে, পিঠ-কোমর ও মাংসপেশিতে ব্যথা থাকে। তবে ততটা তীব্র নয়।
৭. ডেঙ্গু জ্বরে হিমোডাইনামিক জটিলতা, যেমন প্লাজমা লিকেজের লক্ষণ, হিমাটোক্রিটের পরিবর্তন, রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
৮. ডেঙ্গু জ্বরে ফুসফুসে পানি জমে যেতে পারে। রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
৯. অনেক সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার, হার্ট, কিডনিসহ শরীরের নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
১০. ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের বমিভাব বেশি থাকে।
চিকুনগুনিয়া জ্বরের উপসর্গ
১. চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত রোগীদের জ্বরের তীব্রতা দুই – তিন দিন পরে খুব একটা বেশি থাকে না। তবে আবার জ্বরে আক্রান্ত হন। সেই জ্বর ১০২ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রিও হয়ে থাকে।
২. চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের দেহের গিঁটে গিঁটে ব্যথা থাকে। পা ফুলে যায়। ব্যথার মাত্রা এত বেশি থাকে যে রোগী হাঁটতে পারেন না। রোগীদের অন্যের কাঁধে ভর করে হাঁটতে হয় বা হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে হয়। তাই এই জ্বরকে 'ল্যাংড়া জ্বর'ও বলা হয়।
৩. এই রোগে রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়া বা রক্তক্ষরণ হয় না। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান।
৪. চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি কম, তবে কষ্ট বেশি।
৫.অনেক সময় চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর স্কিন বা চামড়ায়ও প্রভাব পড়ে।
৬. চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার, হার্ট বা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও দীর্ঘমেয়াদে ভুগতে হয় ।
দুই জ্বরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণ বিবেচনা করে ও শারীরিক পরীক্ষা করেই চিকিৎসকেরা জ্বর শনাক্ত করতে পারেন।
জ্বর হলে যা করবেন
১. দুই রোগের রোগীদেরই প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার যেমন পানি, ডাবের পানি, শরবত, জুস, গ্লুকোজ, স্যুপ, খেতে হবে। অনেক সময় বমির কারণে খাবার খেতে না পারলে তখন স্যালাইন দিতে হবে। এছাড়া তরল খাবারের পাশাপাশি বিশেষ করে ফল বেশি খেতে হবে।
২. জ্বর কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
৪. ডেঙ্গু রোগীর রক্তে প্লাটিলেট ও হিমোগ্লোবিন বেশি কমে গেলে অনেক সময় রক্ত দিতে হয়। চিকুনগুনিয়াতে এই সমস্যা হয় না।
৫. চিকুনগুনিয়াতে ব্যথা কমাতে ঠান্ডা ছ্যাঁক নিতে পারেন, হালকা ব্যায়াম করা যায়।
৬. চিকুনগুনিয়াতে রোগ নির্ণয়ের আগেই ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যাবে না।
সূত্র: বিবিসি বাংলা, হেলথলাইন
আরও পড়ুন মাইক্রোবায়োম বা পেটের স্বাস্থ্য ঠিক রাখবেন যেভাবে জানুন, আপনিও পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগছেন কি নাএসএকেওয়াই/এএমপি