রাজনীতি

আমরা যারা রাজনীতি করছি তারা বদরুদ্দীন উমরের কাছে খুবই ছোট

আজ আমরা যারা রাজনীতি করছি তারা কমরেড বদরুদ্দীন উমর সাহেবের কাছে খুবই ছোট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, কারণ তিনি কখনো কম্প্রোমাইজ করেননি। আজকে যারা নতুন প্রজন্মের তারা বদরুদ্দীন উমর সাহেবের কাছ থেকে কতটুকু নিতে পেরেছেন তা আমার জানা নেই।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বদরুদ্দীন উমরের স্মরণসভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, বদরুদ্দীন সাহেব একটা কথা বলতেন – সংগঠন, সংগঠন, সংগঠন। বিপ্লব তখনই সফল হয় যখন সংগঠন থাকে। আজ যে হতাশা এসেছে তার মূল কারণ সংগঠনের অভাব। বিপ্লবী সংগঠন না থাকলে বিপ্লব হয় বলে আমার মনে হয় না। আজকে যারা সমাজ বদলাতে চান, সাধারণ মানুষের অবস্থা পরিবর্তন করতে চান, তাদের অবশ্যই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। এবং বদরুদ্দীন উমরের ভাষায় একেবারেই মানুষের কাছে চলে যেতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রে তিনি অদ্বিতীয় ছিলেন। আমরা জানি ভীতি ও মোহ কীভাবে মানুষকে গ্রাস করে। বদরুদ্দীন উমরের ক্ষেত্রে এসবের কিছুই তাকে গ্রাস করেনি। তিনি সারাজীবন কাজের মধ্যে ছিলেন, ক্লান্তি কাকে বলে তা তিনি জানতেন না। সংগ্রামের জীবন থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি। এসব দিক থেকে তিনি অসাধারণ ছিলেন। তাকে কোনো অসাধারণ মানুষ হিসেবে নয়, আমাদের আপনজন হিসেবে ধারণ করি। বিপ্লবের জন্য যে সংস্কৃতির দরকার হয় তা উমর যেভাবে বুঝতেন খুব কম বামপন্থি রাজনৈতিকই বুঝতেন।

জাতীয় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বদরুদ্দীন উমর যে ঘরোনায় বেড়ে উঠেছেন আমি সেই ঘরোনার নই। আমরা কিছুটা বিপ্লব বিরোধী ছিলাম। আমি ছাত্রলীগ করতাম। আমরা স্লোগান দিতাম ‘হো হো মাও মাও, চীনকে যাও, ব্যাঙ খাও’। সে সময় ভালো ছেলে রাজনীতি করবে এটা একদমই প্রচলিত ছিল না। আমাদের সে সময়ের রাজনীতি ছিল জ্ঞানবিবর্জিত। রাজনীতিতে জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা তিনি নিয়ে আসেন। আমার যে বড় হওয়া সেটাতে তার ভূমিকা আছে বলে আজ মনে হচ্ছে। তার প্রয়াণের পর আজ এটা বুঝতে পারছি। আমি তার রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে একমত নই, কিন্তু বিরোধও নেই। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে যদি পড়তে হয় তাহলে বদরুদ্দীন উমরের কাছে যেতে হবে। বিপ্লবী তত্ত্ব নির্মাণ কীভাবে হলো তা বুঝতে হলে বদরুদ্দীন উমরের কাছে যেতে হবে। ১৯৫২ থেকে ৭৪ সাল অবধি পড়তে হলে জানতে হলে উমর একজন অনিবার্য সঙ্গী। বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের মাধ্যমে তার রাজনীতিতে আসা, ভীষণ শক্ত এক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা তার রাজনীতি। ফলে মৃত্যুর শেষদিন অবধি তিনি সত্যের পথে অবিচল ছিলেন। আজকে তরুণদের কথার মাঝে একটা সুর পাওয়া যায়, আগে কিছুই হয়নি, আমরাই সব শুরু করবো। এটা ঠিক না।

স্মরণসভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচএ/এমএএইচ/এমএস