আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের খেলনা রপ্তানি আট গুণের বেশি বাড়তে পারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্বের ৮৮টি দেশে সাড়ে সাত কোটি ডলারের খেলনা রপ্তানি হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৩০ সালে রপ্তানির আকার প্রায় ৪৭ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে ‘খেলনা উৎপাদন শিল্পে উদ্ভাবন ও রপ্তানির সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় এসব তথ্য উঠে আসে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ।
শামীম আহমেদ জানান, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে প্লাস্টিক খাত থেকে ২৭ কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে। একই সময়ে প্রচ্ছন্ন রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি ডলার। বর্তমানে প্লাস্টিক শিল্পের দেশীয় বাজারের আকার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং এ খাত থেকে সরকার বছরে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় পাঁচ হাজার প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার বেশিরভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। এর মধ্যে প্রায় ২৫০ প্রতিষ্ঠান খেলনা উৎপাদনে নিয়োজিত।
তিনি আরও বলেন, খেলনা রপ্তানির সম্ভাবনা ব্যাপক হলেও মান নিয়ন্ত্রণের অভাব, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, গবেষণা ও উদ্ভাবনে কম বিনিয়োগ এবং ছাঁচ ও নকশা উন্নয়নের ঘাটতি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা কঠিন করছে।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ২০৩২ সালের মধ্যে বৈশ্বিক খেলনা বাজারের আকার দাঁড়াবে ১৫০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এ বাজারের ৮০ শতাংশ দখলে রেখেছে চীন। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা ধীরে ধীরে নিম্নমানের খেলনা উৎপাদন থেকে সরে আসছে, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে। বর্তমানে দেশে খেলনা খাতে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক খেলনা বাজার বর্তমানে ১০২.৮ বিলিয়ন ডলারের এবং ২০৩০ সালে তা ১৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। অথচ বাংলাদেশ এ বাজারে মাত্র ৭৭ মিলিয়ন ডলারের খেলনা রপ্তানি করছে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের অভাব, টেস্টিং সুবিধার ঘাটতি, কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্ক, অবকাঠামো সংকট এবং নীতি সহায়তার অভাবে শিল্পটি এগোতে পারছে না।
উদ্যোক্তাদের অভিমতআলোচনায় খেলনা শিল্পের উদ্যোক্তারা নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। রেডমিন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে হবে।
গোল্ডেন সন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদ জানান, ২০০৫ সালে বন্ড লাইসেন্স চাইলেও খেলনা খাতের আলাদা নীতিমালা না থাকায় তিনি তা পাননি। এখনও তাকে প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে।
প্রিমিয়াফ্লেক্স প্লাস্টিক লিমিটেডের উপনির্বাহী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক মানের খেলনা রপ্তানির জন্য ছাঁচ ও নকশায় আরও বেশি বিনিয়োগ জরুরি।
বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকদের মতামতপেটেন্ট, শিল্প–নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের পরিচালক অশোক কুমার রায় বলেন, মেধাস্বত্ব ও ট্রেডমার্ক ব্যবস্থা স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য সুরক্ষা বলয় তৈরি করবে এবং নতুন বাজারে প্রবেশ সহজ করবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর বলেন, সরকার নীতি সহায়তা দেবে, তবে মান, প্রযুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন উদ্যোক্তাদের নিজেরাই করতে হবে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মামুন–উর–রশীদ আসকারী জানান, সরকার জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা করছে। রপ্তানিমুখী খেলনা শিল্পকে এসব বাজারে প্রবেশাধিকার তৈরি করতে হবে। এজন্য রপ্তানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক কমানো জরুরি।
ইএআর/এসএনআর/এমএস