বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার পর এবার সার ও বীজের কৃত্রিম সংকটে পড়েছে কুড়িগ্রামের আগাম সবজি চাষিরা। তাদের অভিযোগ, খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে, আর এতে করে লাভের বদলে লোকসানের আশঙ্কায় দিন গুনছেন তারা। তবে প্রশাসন বলছে, বাজারে কোনো সংকট নেই এবং অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষকরা বলছেন, জমির চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সার পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও অধিক মূল্য চাওয়া হচ্ছে। ফলে আগাম ফুলকপি চাষ করে ভালো লাভের আশা করলেও, সার ও বীজের লাগামহীন দাম তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র বলছে, এবার এই উপজেলায় ২৯ হেক্টর জমিতে আগাম সবজি চাষ করা হচ্ছে।
চাষি মকবুল হোসেন জানান, গত বছর ৭০০-৭৫০ টাকার ফুলকপির বীজ এবার ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গত বছর ১৩০০ টাকার সার এবার ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে সার, বীজ ও কীটনাশকের দামের দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।
একই গ্রামের আকতার হোসেন বলেন, আমাদের এখানকার অনেক চাষি এনজিও থেকে ঋণ করে অথবা গরু-ছাগল বিক্রি করে অনেক আশা নিয়ে আগাম সবজি চাষ করেন। কিন্তু সঠিক সময়ে সার না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় তাদের। সেই সঙ্গে দ্বিগুণ মূল্যে বীজ ও সার কিনে খরচ ওঠাতে পারবেন কি না সেই আশঙ্কায় দিন কাটে।
কৃষক আবদার হোসেন জানান, শুধু বীজ ও সার নয়, বিরূপ প্রকৃতির সাথেও লড়াই করে আগাম সবজি চাষ করতে হয় আমাদের। বৃষ্টি বা কড়া রোদ হলে বীজের ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি কাটাতে আবার অধিক মূল্যে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। চাষবাস করতে এখন কৃষকদের পদে পদে হয়রানি ও অধিক অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে হিমশিম অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুন নাহার সাথী জানান, মৌসুমের শুরুতে বাজারে আগাম ফুলকপি সরবরাহ করে অধিক লাভের আশায় ফুলকপি চাষ করছেন কৃষকরা। উপজেলায় এবার ২৯ হেক্টর আগাম সবজি চাষ করা হচ্ছে। বাজারে প্রচুর সারের সরবরাহ আছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করছি। বেশি মূল্য নেওয়ার অভিযোগ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এ বছর বন্যা ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে চরাঞ্চলে রোপা আমনের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সারের কিছুটা চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের টিম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
রোকনুজ্জামান মানু/কেএইচকে/এএসএম