দেশজুড়ে

জমি লিখে না দেওয়ায় নির্মম প্রহার, দেড় বছর বাড়িছাড়া বাবা-মা

পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের নলদহ নতুনপাড়া গ্রামের কৃষক নাছির শেখ। স্ত্রী রবিজা খাতুনকে নিয়ে দেড় বছর ধরে বাড়িছাড়া। কখনো মেয়ের বাড়ি আবার কখনো অন্যের বাড়িতে আশ্রয় থাকতে হয়েছে এ বৃদ্ধা দম্পতির। বড় ছেলে শিমুল শেখকে জমি লিখে না দেওয়ায় নির্মম মারধরের শিকার হন। পরে প্রাণভয়ে প্রবাসী ছোট ছেলে রিপনের শ্বশুরবাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

জমিজমা-ঘরবাড়ি সব থাকলেও এখন যেন কিছুই নেই। বাবা-মায়ের পক্ষে প্রতিবাদ করায় ছোট ভাই রিপনকেও বেধড়ক মারধরে গুরুতর আহত করেন শিমুল। শেষমেশ ছেলের বিচার চেয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এই বৃদ্ধ দম্পতি। তবে তাতেও প্রতিকার মিলছে না বলে দাবি তাদের।

লিখিত অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় কয়েক বছর আগে তিন বিঘা জমি বিক্রি করে শিমুলকে বিদেশ পাঠান বাবা নাছির। কিন্তু বাবার আশার গুড়ে বালু ঢেলে টাকা নষ্ট করে দেশে ফিরে মাদক ও জুয়ার অন্ধকার জগতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপর প্রতিনিয়ত বাবা-ভাইবোনের কাছে টাকা দাবি করতে থাকেন। না দিলেই বাবা-মাকে মারধর করতেন শিমুল।

সম্প্রতি টাকা ও জমিজমা তার নামে লিখে দিতে বলেন শিমুল। নাছির শেখ তা না করায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর রড, হাতুড়ি ও চাপাতি দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে বাবা-মাকে নির্মম নির্যাতন করেন। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে বের করে ফেলে দেন রাস্তায়। হত্যার হুমকি দেওয়ায় এখন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে এই বৃদ্ধ দম্পতিকে।

প্রবাসী ছোট ছেলে রিপন এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানালে পরদিন বিকেলে সহযোগী জামাল শেখ, আরিফ শেখ, শিউলি বেগম ও আজিম শেখকে সঙ্গে নিয়ে তাকেও পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন শিমুল। এরপর থেকে মৃত্যুশয্যায় রিপন।

চোখে ছলছল পানি নিয়ে ভুক্তভোগী বাবা নাছির শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘টাকা ও জমি লিখে না দেওয়ায় আমাকে এবং ওর মাকে মাঝে মাঝেই মারধর করে। এ নিয়ে গ্রামের মাতুব্বররা সালিশ করতে করতে হয়রান। সেদিন আমাকে গলা চেপে ধরে আছড়ে আছড়ে যেভাবে মেরেছে তা বর্ণনা করা যায় না। ভেবেছিলাম মরেই গেলাম। নিজ হাতে মানুষ করলেও আজ মনে হচ্ছে এমন ছেলের আমার দরকার নাই। আমি ওর বিচার চাই।’

হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মা রবিজা খাতুন বলেন, ‘ওই ছেলে আমাকে যে ভাষায় গালাগাল করে, তা প্রকাশ করা যায় না ব্যাটা। ওই ছেলে ও ছেলের বউয়ের নির্যাতনে দেড় বছর ধরে আমরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আশপাশের লোকজন আমাদের ঘরে নিয়ে না লুকালে সেদিন আমাদের মেরেই ফেলতো। আমার ছোট ছেলেটাকে অমানুষের মতো মেরেছে। মাথার খুলি ভেতরে ঢুকে গেছে। এই ছেলে বাঁচবে কি-না জানি না ব্যাটা।’

কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘ওইরকম ছাওয়াল আমি কেমনে পেটে ধরছিলাম? আমি ওর বিচার চাই।’

এ ঘটনার পর পলাতক শিমুল। ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে আরিফ নামের এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিমুলসহ অন্যরা পলাতক থাকায় এখনো তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এসআর/জেআইএম