পটুয়াখালী সদরে সরকারি আবাসনের একটি জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছেন মো. গনী জমাদ্দার (৭০) ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম (৫০)। ভরণপোষণে কেউ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মহীন ও অসুস্থ এই বয়োবৃদ্ধ দম্পতি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
উপজেলার ছোট বিঘাই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই আবাসন প্রকল্পে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খাবারহীন খালি পাতিল নিয়ে অন্ধকার ভাঙাচোরা ঘরে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় বসে আছেন গনী জমাদ্দার ও তার স্ত্রী। প্রতিবেশীরা মাঝে মাঝে রান্না করা খাবার দিলে তবেই তাদের মুখে আহার জোটে, না হলে ক্ষুধা নিয়েই দিন কাটে। ঘরে নেই কোনো মালামাল, অল্পকিছু জিনিসপত্র রয়েছে ঘরের মেঝেতে।
গনী জমাদ্দার বলেন, ‘আমি আগে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতাম। কিন্তু নদীভাঙনে সবকিছু হারিয়ে সরকারি আবাসনে আশ্রয় নিতে হয়। এরপর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছি, আর কাজে যেতে পারি না। এখন প্রতিবেশীর দেওয়া খাবারেই কোনোভাবে বেঁচে আছি। আমার মতো এমন অসহায় যেন আল্লাহ আর কাউকে না করে।’
তার স্ত্রী মমতাজ বেগম করুণ কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী অসুস্থ, আমিও অসুস্থ। রান্নাবান্না করা সম্ভব হয় না। এত কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে যে আল্লাহর কাছে শুধু বলি আমাদের কষ্ট শেষ করে নেন।’
আরও পড়ুন:
পর্যটনে অপার সম্ভাবনায়ও উপেক্ষিত সাতক্ষীরাযাতায়াত দুর্ভোগে ৪০ শতাংশ পর্যটক কমেছে সিলেটে
জানা যায়, পরিবারটির একমাত্র মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে থাকেন। আর্থিক অনটনের কারণে তিনি মা-বাবাকে সহযোগিতা করতে পারেন না। যদিও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বয়স্ক ভাতা ও ভিজিএফ কার্ড দেওয়া হয়েছে, তবে টাকার অভাবে ভিজিএফ চাল নিতে পারেন না তারা। অন্যদিকে তিন মাস অন্তর পাওয়া বয়স্ক ভাতার সামান্য অর্থ দিয়ে জীবনধারণ সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিবেশী সালমা বেগম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় অনেক গরীব পরিবার আছে, তবে এর মধ্যে সবচেয়ে অসহায় এই পরিবার। সরকারি আবাসনের একটি পরিত্যক্ত ঘরে বিদ্যুৎ ছাড়া জীবন কাটাচ্ছেন তারা। আগে বিদ্যুৎ ছিল, কিন্তু বিল পরিশোধ না করতে পারায় সংযোগ কেটে দিয়েছে বিদ্যুৎ অফিস।’
ইউপি সদস্য কাওছার আহমেদ জাগো নিউজ বলেন, ‘সরকারি সহযোগিতা যতটুকু করা সম্ভব হয়েছে, তা দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে এই পরিবারকে সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। তবে তারা এতটাই অসহায় যে বিত্তবানদের এগিয়ে আসা জরুরি।’
মাহমুদ হাসান রায়হান/এমএন/এমএস