বাংলাদেশ থেকে ফিনল্যান্ডের ভিসা কীভাবে পাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে। উত্তর ইউরোপের সুন্দর সাজানো-গোছানো দেশটির কোনো দূতাবাস নেই বাংলাদেশে। ফলে আবেদন প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল। তবে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ঠিকঠাক থাকলে ভিসা অনুমোদনের হার যথেষ্ট ভালো। তাই উচ্চশিক্ষা, ভ্রমণ কিংবা উন্নত জীবনের আশায় ফিনল্যান্ড হতে পারে আপনার জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য।
ফিনল্যান্ড একটি শেনজেন দেশ, তাই সাধারণত শর্ট-টার্ম ভিসা (৯০ দিনের কম) হিসেবে শেনজেন ভিসা (টাইপ সি) আবেদন করতে হয়। এই ভিসার আবেদন বাংলাদেশে সুইডেনের দূতাবাসের মাধ্যমে প্রক্রিয়া করা হয়। তবে সুইডেনের দূতাবাস সরাসরি আবেদন গ্রহণ করে না; ভিএফএস গ্লোবালের (ঢাকা) মাধ্যমে আবেদন জমা দেওয়া হয়।
আর লং-টার্ম ভিসার (যেমন- স্টুডেন্ট বা ওয়ার্ক) জন্য ফিনল্যান্ডের ইমিগ্রেশন সার্ভিসের মাধ্যমে আবেদন করতে হয় এবং পরিচয় যাচাই ও বায়োমেট্রিক্সের জন্য ভারতের নয়াদিল্লি যেতে পারে।
নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াগুলো উল্লেখ করা হলো:
আপনার উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে সঠিক পারমিট নির্বাচন করুন। বিস্তারিত জানতে [migri.fi](https://migri.fi) দেখুন।
>> আবেদন প্রক্রিয়ার ধাপ১. অনলাইন আবেদন পূরণ
ফিনল্যান্ডের অফিসিয়াল পোর্টাল [enterfinland.fi](https://enterfinland.fi) এ অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। আপনার পারমিটের ধরন অনুযায়ী ফর্ম পূরণ করুন (যেমন স্টুডেন্ট পারমিটের জন্য RP-1 ফর্ম)। সব তথ্য ইংরেজি বা ফিনিশ/সুইডিশ ভাষায় দিন।২. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ
পাসপোর্ট: কমপক্ষে ১২ মাস বৈধ, পুরোনো পাসপোর্টের কপি (যদি থাকে)। ছবি: সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ (৩.৫x৪.৫ সেমি, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড, মাথা ৩৪-৩৬ মিমি)। আর্থিক প্রমাণ: - স্টুডেন্ট: ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা স্কলারশিপ লেটার, কমপক্ষে ৫৬০ ইউরো/মাস (৬৭২০ ইউরো/বছর)। - ওয়ার্ক: জব কন্ট্রাক্ট, স্যালারি বিবরণ। - ফ্যামিলি: স্পনসরের আর্থনৈতিক প্রমাণ। উদ্দেশ্য প্রমাণ: - স্টুডেন্ট: বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডমিশন লেটার, টিউশন ফি পেমেন্ট প্রুফ। - ওয়ার্ক: নিয়োগকর্তার চিঠি, ওয়ার্ক পারমিট অ্যাপ্লিকেশন। - ফ্যামিলি: ফিনল্যান্ডে বসবাসরত সদস্যের রেসিডেন্স প্রুফ, সম্পর্কের প্রমাণ (বিয়ে/জন্ম সার্টিফিকেট)। ইনস্যুরেন্স: মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স (কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক, যেমন স্টুডেন্ট)। অন্যান্য: পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, স্বাস্থ্য সার্টিফিকেট (যদি প্রযোজ্য হয়)।** নোট: সব বাংলা ডকুমেন্ট ইংরেজিতে অনুবাদ করে নোটারাইজ করতে হবে।
৩. আবেদন ফি পরিশোধ:
স্টুডেন্ট পারমিট: ৩৫০ ইউরো (অনলাইন), ৪৫০ ইউরো (পেপার অ্যাপ্লিকেশন)। ওয়ার্ক পারমিট: ৪৯০-৬৯০ ইউরো (ধরনের ওপর নির্ভর করে)। ফ্যামিলি পারমিট: ৪৫০-৫৫০ ইউরো। অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক ট্রান্সফারে ফি দিতে হবে।৪. পরিচয় যাচাই ও বায়োমেট্রিক্স
অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার পর, Migri আপনাকে নির্দেশ দেবে কোথায় পরিচয় যাচাই করতে হবে। নয়াদিল্লি যাওয়ার প্রয়োজন: বাংলাদেশে ফিনল্যান্ডের দূতাবাস না থাকায় নয়াদিল্লির ফিনল্যান্ড দূতাবাস বা ভিএফএস গ্লোবাল সেন্টারে যেতে হতে পারে। প্রক্রিয়া: পাসপোর্ট, আবেদনের প্রিন্টআউট, এবং ডকুমেন্টস নিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্টে যান। বায়োমেট্রিক্স (ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ছবি) দিতে হবে।৫. প্রসেসিং:
প্রসেসিং সময়: স্টুডেন্ট পারমিটে ১-৩ মাস, ওয়ার্ক বা ফ্যামিলি পারমিটে ৩-৬ মাস। Enter Finland পোর্টালে আবেদনের স্ট্যাটাস ট্র্যাক করুন।৬. পারমিট সংগ্রহ:
পারমিট অ্যাপ্রুভ হলে, ফিনল্যান্ডে প্রবেশের পর রেসিডেন্স পারমিট কার্ড ইস্যু করা হবে। কিছু ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি বা ঢাকার ভিএফএস থেকে প্রাথমিক এন্ট্রি ভিসা ইস্যু হতে পারে। >> অতিরিক্ত তথ্য স্টুডেন্ট: অ্যাডমিশন লেটার, টিউশন ফি পেমেন্ট, এবং আর্থনৈতিক প্রমাণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিনল্যান্ডে পার্ট-টাইম কাজের অনুমতি (৩০ ঘণ্টা/সপ্তাহ) পাওয়া যায়। ওয়ার্ক: নিয়োগকর্তার ডকুমেন্টস এবং আপনার যোগ্যতার প্রমাণ (ডিগ্রি, অভিজ্ঞতা) জরুরি। ফ্যামিলি: ফিনল্যান্ডে বসবাসকারী ব্যক্তির আয়ের প্রমাণ এবং সম্পর্কের ডকুমেন্ট সঠিক হতে হবে। >> গুরুত্বপূর্ণ টিপস আগাম প্রস্তুতি: ভ্রমণের ৬-৯ মাস আগে আবেদন শুরু করুন, কারণ প্রসেসিং সময় লাগে। ডকুমেন্টস চেকলিস্ট: Migri ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট পারমিটের চেকলিস্ট দেখুন। অসম্পূর্ণ ডকুমেন্টস রিজেকশনের কারণ হতে পারে। নয়াদিল্লি ভ্রমণ: যদি নয়াদিল্লি যেতে হয়, ভারতের ভিসা ও ভ্রমণ খরচের জন্য প্রস্তুত থাকুন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট আগে বুক করুন। এজেন্সি: কিছু এজেন্সি সাহায্য করতে পারে, তবে অফিসিয়াল চ্যানেল ব্যবহার করাই নিরাপদ।আরও বিস্তারিত জানতে [visa.vfsglobal.com/bgd/en/swe](https://visa.vfsglobal.com/bgd/en/swe) বা [finlandabroad.fi/web/bgd](https://finlandabroad.fi/web/bgd) ভিজিট করুন।
নোটশর্ট-টার্ম শেনজেন ভিসার জন্য সশরীরে দিল্লিতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না, আবেদন ঢাকাতেই জমা দেওয়া যায়। তবে লং-টার্ম রেসিডেন্স পারমিটের ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করার পর পরিচয় যাচাইয়ের জন্য নয়াদিল্লি যেতে হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ভিএফএস গ্লোবাল বাংলাদেশে এই সার্ভিস দিতে পারে, এটি নিশ্চিত করতে finlandabroad.fi বা ভিএফএস হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন।
** সতর্কতা: তথ্যগুলো সাম্প্রতিক সোর্স থেকে নেওয়া। কিন্তু ভিসা নিয়ম পরিবর্তন হতে পারে। সর্বদা অফিসিয়াল ওয়েবসাইট চেক করুন।
সূত্র: ফিনল্যান্ড ভিসা, ফিনল্যান্ড অ্যাবরোড, ভিএফএস গ্লোবালকেএএ/